দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষের মন দুর্বোধ্য। সচরাচর এমন অনেক বিভ্রম হয় যেগুলো বাস্তবিক মনে হয়। আসলে এর অনেক কিছুই ভুল। আপনার মন আপনাকে মিথ্যা বলছে। নিজের সম্পর্কে এই মিথ্যা গুলো বিশ্বাস করার কারণে আপনি আপনার ক্ষমতাকে ছোট করছেন।
অনেক দুর্বলতা, অনেক খারাপ লাগা নিয়ে আপনি প্রাত্যাহিক জীবন যাপন করছেন। একবার থামুন। নিজেকে পর্যবেক্ষন করুন। আপনার নিজের ব্যাপারে নিজের ধারণা কি আসলেই ঠিক? আপনাকে সহায়তা করার জন্য মনের ১০টি মিথ্যা ধারণা সম্পর্কে জানাচ্ছি। জানুন আর ভাবুন। এগুলোর কোনটি আপনাকে পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
“আমিই অনুভূতি, আমিই আমার চিন্তা”
আপনি একটি শক্তিশালী আবেগ দ্বারা বেষ্টিত হয়ে গেলে এটা আপনার নিজ সত্তা মনে হতে পারে। ভাববেন, আমি এমনি। কিন্তু আদতে এটা ঠিক নয়। যদি অনুভূতি, চিন্তা গুলো আপনার সত্ত্বা হয় তবে এগুলো চলে যাওয়ার সাথে সাথে আপনার আস্তিত্ত্ব বিলীন হওয়ার কথা। নিশ্চয়ই তা হয় না?
অনুভূতি আর চিন্তা হল অনেকটা আবহাওয়ার মত। কখনো ভাল, কখনো খারাপ। এগুলো আপনার সত্ত্বা নয়।
“ঝুঁকি নেওয়া যাবে না”
স্বাভাবিক ভাবে মানুষ নিরাপত্তা চায়। আপনি নিরাপদ থাকতে গিয়ে অনেক কিছুই হারাবেন। কোন কিছুতে ঝুঁকি থাকলে তা করা উচিত নয়, এটা ঠিক না। আমরা পরিবর্তনশীল দুনিয়ায় বাস করি। আপনি যতই ঝুঁকি এড়াতে চান না কেন, এর নিশ্চয়তা নেই। আপনাকে নিরাপত্তা অর্জন করে নিতে হবে। অথবা ঝুঁকি নিতে হবে। এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন যা আপনাকে সবার উপরে রাখবে।
“বস্তুগত পাওয়াই প্রকৃত সুখ”
আপনি হয়তো ভাববেন আপনার কিছুই নেই। তাই সুখি হতে পারছেন না। কিন্তু জেনে রাখুন এভাবে চিন্তা করার কারণেই আপনি সুখি হতে পারছেন না। সুখ কী কিনে নেওয়া যায়। যদি যায় তবে তার দাম কত?
সুখের উপাদান গুলো সবসময় বিনামূল্য। ভালোবাসা, হাসি, উদারতা, কৃতজ্ঞতা, সমবেদনা এই সবই সুখের উপাদান। এগুলোর জন্য বস্তুগত সম্পদ নয়, শুধু মন লাগবে।
“সবার চেয়ে আমি ছোট”
আপনি হয়তো নিজেকে মোটা, অগোছালো, বেটে বা নির্বোধ ভাবেন। সবসময় অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করেন। ভাবেন, ওরা আপনার চাইতে কতটাই না এগিয়ে।
একটা কথা ভাবুন, এই জগতে আপনি একমাত্র। আপনার মত আরেক জন নেই। ভাল খারাপ মিলিয়ে মানুষ। আপনার হয়তো এমন কিছু আছে যা জগতের আর কারো মাঝে নেই। তাই অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করতে যাবেন না। এটি আপনাকে অনেক বেশি পিছিয়ে দিবে। মনে রাখবে, আপনি আপনার রাজ্যের রাজা।
“আমার দোষ নেই, আমি দুর্ভাগ্যের শিকার”
নিজেকে সবসময় দুর্ভাগ্যের শিকার ভাবা বন্ধ করুন। বাস্তবিক ভাবে অন্য কেউ কি আপনার ভিতরের অনুভূতির জন্য দায়ী? নিজের দোষ বুঝতে শিখুন। দোষ স্বীকার করে নিলে নিজের কাছে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে। ভুল বুঝে সমাধান করতে প্রত্যয়ী হবেন। কখনই দুর্বলতা নয়, এটা আপনার মনোবল বাড়াবে।
“আমার কোন বন্ধুর প্রয়োজন নেই”
হয়তো আপনি বন্ধুর কৃতকাজে অখুশি। হয়তো ভাবছেন বন্ধু ছাড়াই চলা যায়, বন্ধু থাকা মানে সময় নষ্ট। আসলে এটা ঠিক নয়। যখন একাকীত্ব বোধ করবেন, খুব চাপ অনুভব করবেন, দুঃখ আর কষ্টে ডুবে যাবেন তখন একমাত্র ভাল বন্ধুই পারে আপনাকে সাহায্য করতে। এমনকি আনন্দ প্রকাশ করতেও বন্ধু লাগবে। আপনি একা একা আনন্দ প্রকাশ করতে গেলে লোকে পাগল ভাববে।
অনুভূতি প্রকাশ করতে হয়। হতে পারে বন্ধুর কাছে, হতে পারে প্রেমিকার কাছে। হতে পারে কেউ কোন সাহায্য করতে পারল না। কিন্তু মনে রাখবেন, কারো কাছে অনুভূতি প্রকাশ করে আপনি নিজেই নিজের বড় উপকার করলেন।
“আগে পারিনি, ভবিষ্যতে কিভাবে পারবো?”
আপনার অতীত হয়তো অনেক দুঃখ, কষ্ট আর ব্যর্থতার সাক্ষী। তাই বলে অতীত আগলে পড়ে থাকলে চলবে না। মানুষ মাত্রই ভুল করে। তারপর ভুল থেকে শিক্ষা নেয়। আপনার করা ভুল গুলো নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন? ওগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। আপনার ভুল হয়েছে, তার থেকে শিক্ষাও নিয়েছেন। কিন্তু আপনি তো ভুল নন। তাই না?
“আমি খুব একা”
আপনি যখন একাকীত্ব বোধ করেন, দুঃখ বা আঘাত প্রাপ্ত হন, তখন ভাবেন আপনি একা। এই দুনিয়ায় আপনার কেউ নেই। জেনে রাখুন, দুনিয়ার সবাই কোননা কোন সময় এই অনুভূতির মাঝ দিয়ে যায়। তাই বলে দুনিয়ার কারোরই কেউ নেই তা কি ঠিক? এটা সাধারণ একটা অনুভূতি, পাত্তা দেবেন না।
“আমাকে উৎকৃষ্ট হতে হবে”
এই ধরনের আকাঙ্ক্ষা আপনার মানসিক চাপ, হতাশা, শোষিত বোধ হওয়া, অপরাধবোধ সহ অনেক ধরনের অনুভূতির কারণ হবে। আপনি শুধু খারাপ ভালোর মাঝে একটি ভারসাম্য রাখুন। আপনার মন উৎকৃষ্ট মানেই আপনি উৎকৃষ্ট। এটা কেউ বুঝল কি বুঝল না তা ব্যাপার না।
“আমাকে সবকিছু নিয়ে চিন্তিত হতে হবে”
দুশ্চিন্তা সব সুখানুভূতির খাদক। যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনায় আপনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় সমধান তো করতে পারবেনই না বরঞ্চ আর অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে। তাই দুশ্চিন্তা না করে নিজেকে বলুন, “হলে কি হয়?”। দেখবেন, আপনার জন্য অন্য রকম এক জগত খুলে গেছে।
আপনার মনের এই সব প্রতারণা আপনাকে পিছিয়ে দিচ্ছে। নিজেকে অনুভব করুন। নিজের সাথে নিজের এই ছলনা বন্ধ করুন। তবেই এই জীবনটা উপভোগ করতে পারবেন।
ধন্যবাদান্তেঃ MindBodyGreen