দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যখন আপনি কারো জন্য অপেক্ষা করে থাকেন তখন মনে হয় সময় যেতেই চাচ্ছে না। কিন্তু সেই আপনিই যখন বার্ধক্যের দিকে ধাবিত হবেন তখন মনে হবে সময়টা দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। বস্তগত এই জগতে আজ চাহিদার অনেক কিছুই চাইলেই হাতের কাছে পাওয়া যায়। কিন্তু সত্যি কি এমনটা সম্ভব দেহঘড়ির সাথে সময়কে ধীরে চালানো কিংবা পরিবর্তন করা?
সময় উড়তে পারে না
যখন আপনি আনন্দকর অবস্থার মাঝে থাকেন তখন মনে হয় সময় উড়ছে। বাস্তবিকে আমরা জানি তা কখনোই সম্ভব নয়। সে যাই হোক, মনোবিজ্ঞানীরা পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করছেন এই ভাবগত কথাটির তাৎপর্য কি? মূলত আমরা যখন পছন্দের গান শুনি কিংবা নতুন প্রেমের অনুভূতি আমাদের মধ্যে সময় উড়ে যাওয়ার ভাব সৃষ্টি করে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন উপভোগ্য সময়গুলোতে মানুষ মন থাকে এককেন্দ্রিক যা অতিরিক্ত সময়ের উপলদ্ধি দিয়ে থাকে। ফলে আমরা এই সময় বলে থাকি গানের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছি কিংবা ভালবাসায় উড়ছি।
প্রযুক্তির মাধ্যমে সময়ের সাথে ছলনা
আমরা সময়কে আমাদের ইচ্ছেমতো বাঁকিয়ে দিতে পারি না। কিন্তু প্রযুক্তি আমাদেরকে সময়ের অন্যরকম একটি উপলদ্ধি দিতে পারে। আশ্চর্যজনকভাবে বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমগুলো আমাদের বস্তগত জগতের অন্যতম অর্থ বহন করে যেখানে সময় আসলে কোন চলক নয়। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমগুলোর প্রতি আবেশ আমাদের সময়কে নিয়ে অন্যভাবে চিন্তা করতে হচ্ছে।
সময়ের সিনেমাটিক স্বাদ
বিস্ফোরণের নাটকীয় পরিণতির মাঝখান থেকে যখন অভিনেতাকে স্লো মোশনে বেরিয়ে আসতে দেখি তখন আমরা শিহরিত হই। কিন্তু রুপালি পর্দার বাইরে এই ধীর গতির আবহ নিশ্চয়ই খুব একটা সুখকর হবে না। মানুষেরা প্রায় বলে থাকেন এই জীবননাশক এবং বিপদজনক ধীর গতির আবহটির যুক্তিগত কারণ কি?
২০০৭ সালে একদল মনোবিজ্ঞানী ৫০ মিটার উপর থেকে একটি নিরাপদ জালে লাফিয়ে পড়া কিছু মানুষকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তাদের অভিজ্ঞতা। গবেষকরা পরীক্ষাটির মাধ্যমে দেখেছিলেন আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে আমাদের শরীর অন্যরকম সাড়া দিয়ে থাকে। তখন মানুষের শরীর একধরনের অ্যাড্রেনালিন উৎপন্ন করে থাকে যা জীবননাশক পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার জন্য আরো মনোযোগী করে। ফলে সেই মুহূর্তে সবকিছু ধীরগতিতে চলছে বলে মনে হয়, কারণ ছোট সময়টুকুতে আমরা জীবনের প্রায় সবকিছু মনে করে থাকি।
বয়সের গতিময়তা
আমরা প্রায় সাধারণত বলে থাকি ‘বুড়ো হয়ে যাচ্ছি’ কিংবা ‘চোখের পলকে সময় চলে যাচ্ছে’। প্রযুক্তিগত দিক থেকে দ্রুততার সাথে প্রযুক্তি পরিবর্তিত হচ্ছে, সময়ের আগে আমাদের উপলদ্ধির উপর তার প্রভাব পড়ছে ফলে মনে হচ্ছে বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। আসলে সত্যিকারঅর্থে কোন কিছুই পাল্টাচ্ছেনা। তরুণকালে আমরা আগে দেখিনি এই ধরনের আবিষ্কার আমাদেরকে উত্তেজিত করে প্রাকৃতিকভাবেই আমরা তার প্রতি মনোনিবেশ করি। কিন্তু বার্ধক্যকালে এই নতুনত্ব আমাদের বিরক্তির কারণ হয়ে থাকে। বাহ্যিকভাবে মনে হয় সময়টা খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে।
বিকেলের ঘুম
খুব ছোট কিন্তু সবচেয়ে আনন্দময় হল বিনম্র বিকেলের ঘুম। ২০ মিনিটের এই তন্দ্রাভাবটি বাকি দিনের জন্য একটি প্রানশক্তি সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু এর চেয়ে দীর্ঘতর হলে তা শুধু সময়কেই নষ্ট করে। যখন আমরা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি তখন আমাদের চিন্তা চেতনায় বিশৃঙ্খলা চলে আসে। যখন আমরা ভালোভাবে ঘুমাতে পারি না, তখন আমাদের মস্তিস্ক সময়ের প্রসারনতা কিংবা সুক্ষতা নির্ণয় করতে পারে না। এই সময় একটু তন্দ্রা মন ও মেজাজকে সতেজ রাখে। ২০ মিনিটের ঘুমের পর আমাদের মধ্যে একটি ধীরগতির আবহ সৃষ্টি হয়।
সময় দাড়িয়ে আছে
মনে করে দেখুন তো স্কুলের সেই ঘণ্টাপড়ার দিনগুলোর কথা, যখন বারবার ঘড়ি দেখতেন কখন স্কুল ছুটি হবে। যদিও তখন মনে হত সময় দাড়িয়ে আছে আসলে আপনার মস্তিস্ক তখন সেভাবে চিন্তা করতো। দৃষ্টিবিভ্রম অনেকটা মস্তিস্কের ধীরময়তার সাথে দৃষ্টির গতিময়তা বিবেচনা করে তৈরি করা হয়। মনোবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন ঘড়ির গতি এবং সময়ের হিসাব মস্তিস্ক একসাথে উপলদ্ধি করতে পারে না। ফলে একটি আরেকটি থেকে কিছুটা ধীর গতিতে হয়ে থাকে।
আবেগপ্রবণ হয়ে পড়া
অনেকের মতো আমরাও জানি আবেগের উপর কোন শাসন-বারণ নেই, কিন্তু সত্যিকার অর্থে এটি আমাদের চিন্তা চেতনায় প্রভাব ফেলতে পারে। নেতিবাচক আবেগ সময় ধরে কাজ করার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যা জীবন চলার পথে বাধাগ্রস্ততার সৃষ্টি করে। বিরক্তিকর পরিস্থিতির ক্ষেত্রে সময় ধীরে চলছে বলে মনে হয়। কিন্তু যেকোনো ধরনের আবেগময়তার ক্ষেত্রে সময়কে দ্রুত বহমান বলে পরিগনিত হয়। কিছুদিন আগে মনোবিজ্ঞানীরা একটি পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারেন নেতিবাচক পরিস্থিতিতে থাকা ব্যক্তির সময় ইতিবাচক পরিস্থিতিতে থাকা ব্যক্তির চেয়ে ধীরগতিময়।
বহমান এই সময় থামানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। গল্পের মতো টাইম মেশিনে করে অতীত অথবা ভবিষ্যতে চলে যাওয়া অসম্ভব। আমরা যা করতে পারি তা হল সময়ের সাথে চলা।
তথ্যসূত্রঃ অল দ্যাট ইন্টারেস্টিং