দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এবার বাংলাদেশের ছাত্ররা তৈরি করলেন ‘ডিজিটাল কীটনাশক মেশিন’ যা ফসলের ক্ষেতে পোকা তাড়াবে বিভিন্ন শব্দ করে। এর ফলে বাংলাদেশে কীটনাশক মুক্ত ফসল উৎপাদনের নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে সম্প্রতি ফসলে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে সবজি উৎপাদন সহ কৃষি পণ্যে বিষের আধিক্য বেড়ে গেছে বলে বিজ্ঞানীরা জানান। এতে করে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের বিষয়ে নানান গবেষণা চললেও সফলতার মুখ দেখেনি কৃষি বিভাগ। এবার রংপুরের এক দল শিক্ষার্থী এমন একটি যন্ত্র আবিস্কার করেছেন যা কিনা কোনও রকম বিষ প্রয়োগ ছাড়াই ডিজিটাল প্রযুক্তিতে ফসলের মাঠ থেকে ক্ষতিকারক পোকা তাড়াবে।
যন্ত্রটি তৈরি করেছেন রংপুরের ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইটি) কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড মেকানিক্যাল বিভাগের বিভিন্ন সেমিস্টারের ২৬ জন শিক্ষার্থী। তাদের আবিষ্কৃত নতুন এই যন্ত্র কাজ করবে সৌর বিদ্যুতে ফলে এতে বার বার বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রয়োজন হবেনা। একবার কিনেই কৃষক একে বিনা খরচে জমিতে ব্যবহার করতে পারবেন বার বার।
মূলত এই যন্ত্র কাজ করবে বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ তরঙ্গ তৈরির মাধ্যমে। শব্দ তরঙ্গ বাড়িয়ে কমিয়ে বিভন্ন পোকা দূর করা সম্ভব এই যন্ত্র দিয়ে। মশা, মাছি সহ ফসলের ক্ষেতের সকল প্রকার পোকামাকড় এই যন্ত্রে সৃষ্ট শব্দে পালিয়ে যায় ঐ এলাকা থেকে।
যন্ত্রটি আবিস্কারের পেছনে কাজ করা শিক্ষার্থীদের মাঝে মূল উদ্যোগতা আইইটির ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র জিয়াউদ্দিন পাইলট বলেন, “আমাদের তৈরি এই যন্ত্র দিয়ে ধান ক্ষেতের যে অংশে এটি স্থাপন করা হবে সেই অংশে আশে পাশে থেকে সকল ধরণের পোকামাকড় দূরে পালিয়ে যাবে। তবে প্রয়োজন মত এতে ফ্রিকোয়েন্সি ঠিক করে নিতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “এটি চালু করার পর একধরনের অডিও সিগন্যাল ও আলট্রাসাউন্ডের ভয়ে পোকামাকড় পালিয়ে যায়। এটি দূষণমুক্ত শব্দ, যা শুধু পোকামাকড় বুঝতে পারে কিন্তু মানুষ শুনতে পায়না।”
তিন ফুট উচ্চতার যন্ত্রটির চার পাশে বিভিন্ন স্পিকার লাগানো আছে যা থেকে শব্দ তরঙ্গ নির্গত হয়। যন্ত্রটি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ডিজিটাল মেলায় প্রথম পুরস্কার জিতে নিয়েছে। জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে যন্ত্রটি চালানো হয় একটি ধান ক্ষেতে। যন্ত্রটি চালালে প্রথমে হালকা একটি শব্দ হয় এবং পরে আর কোন শব্দ শুনা যায়না। আসলে যন্ত্রটি তখন অডিও সিগন্যাল ও আলট্রাসাউন্ড করছিল যা মানুষ শুনতে না পেলেও পোকামাকড় শুনতে পাচ্ছিলো। যন্ত্রে সৃষ্ট এই আল্ট্রাসাউন্ড পোকামাকড়ের সহ্য সীমার বাইরে ফলে পোকারা দ্রুত যন্ত্রের শব্দ যত দূর যায় ততো দূর পর্যন্ত পালিয়ে যায়। এতে কৃষক লাভবান হবে এবং ক্ষেত এবং ফসল পোকার আক্রমণ থেকে রেহাই পাবে।
সম্পূর্ণ যন্ত্রটি তৈরি করতে খরচ পড়েছে মাত্র এক হাজার ৩৭৫ টাকা। যা এক কালীন খরচ, কারন যন্ত্রটি প্রাকৃতিক শক্তি সৌর বিদ্যুতের সাহায্যে চলবে এতে করে কৃষকদের বাড়তি কোন জ্বালানী প্রয়োজন হবেনা। এটি এক টানা বেশ কয়েক বছর ব্যবহার করা যাবে।
রংপুরের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরিকৃত এই ডিজিটাল কীটনাশক মেশিন নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের কৃষি ক্ষেত্রে কীটনাশক মুক্ত ফসল উৎপাদন এবং কৃষকের অর্থ সাশ্রয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। গ্রাহক পাবে বিষ মুক্ত কৃষি পণ্য।