ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ নন্দিত কথাসাহিত্যিক হূমায়ুন আহমদের চল্লিশা উপলক্ষে চেহলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে কোরআন খানি ও এতিমদের খাওয়ানো এবং বনানীতে নাগরিক শোকসভার আয়োজন করা হয়।
বানানী ডিওএইচএস কমিউনিটি সেন্টারে দিনভর কোরআন খতম ও সন্ধ্যায় মিলাদ মাহফিলে রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয় এবং পরে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্মরণে এক নাগরিক শোকসভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় বিশিষ্ট্য নাগরিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুুহিত, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী ও গীতিয়ারা সাফিয়া চৌধুরীসহ দেশের বিশিষ্ট্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা অনুষ্ঠানে হুমায়ূন আহমেদের জননন্দিত লেখা ও তাঁর জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। হুমায়ূন আহমেদ এ জাতির জন্য যা রেখে গেছেন তা জাতি শ্রদ্ধাভরে চিরদিন স্মরণ রাখবে বলে বক্তারা মন্তব্য করেন। এ সময় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, সাবেক স্ত্রী গুলতেকিন, হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমীন হক, ছোট ভাই আহসান হাবীব, বোন সুফিয়া হায়দার ছেলে নুহাশসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
নুহাশ পল্লীতে এতিম শিশুদের খাওয়ালেন শাওন
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের চেহলাম উপলক্ষে ২৮ আগস্ট নুহাশ পল্লীতে নিজ হাতে বেড়ে এতিম শিশুদের খাওয়ালেন তাঁর স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত, বাবা মোহাম্মদ আলী, মা তহুরা আলীসহ পরিবারের সদস্যরা।
প্রয়াত লেখকের চেহলাম উপলক্ষে আশপাশের এতিমখানার প্রায় ২শ’ এতিম শিশু সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পবিত্র কোরআন শরিফ তেলাওয়াত শুরু করে। দুপুরের দিকে কোরআন খতম দেয় তারা। লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নুহাশ পল্লীতে জড়ো হয়েছেন অনেক ভক্ত।
দুপুরের দিকে নুহাশ পল্লীর বৃষ্টিবিলাস ভবনের সামনে এতিম শিশুদের পাতে খাবার তুলে দেন শাওন। তিনি বলেন, ‘নুহাশ পল্লীর আশপাশের ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার এলাকায় যে কয়টি এতিমখানা আছে, সেখানকার সব শিশুকে আজ এখানে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে বেড়ে খাওয়াচ্ছি। হুমায়ূন আহমেদ নিজে বেড়ে খাওয়াতে পছন্দ করতেন।’
শাওন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ হুমায়ূন আহমেদ চলে যাওয়ার ৪০ দিন। অনেকের কাছে হুমায়ূন আহমেদ নেই। আমার ও আমার দুই সন্তানদের কাছে তিনি আছেন। তাঁর দেহটা নেই, কিন্তু তিনি সব সময় আছেন।’ শাওন প্রয়াত লেখকের আত্মার শান্তির জন্য সবার দোয়া চান। দোয়া চান তাঁর দুই সন্তানের জন্যও। তিনি বলেন, ‘দোয়া করবেন ওরা যেন বাবার মতো হতে পারে।’
দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত সম্পর্কে তাদের মা শাওন বলেন, ওরা চেহলাম কী বোঝে না। বুঝতে পারছে না বাবা নেই। নিষাদের ধারণা, ওর বাবা মাঝেমধ্যে আসবে। জন্মদিনে কেক কাটার সময় বাবা এসে উপহার দিয়ে চলে যাবে। শাওন বলেন, ‘নুহাশ পল্লীতে গিয়ে নিষাদ-নিনিত বাবার কবরে হাত বুলায়। আর বলে, ‘আমরা বাবাকে আদর করছি।’ বাবাকে হারানোর ৪০ দিনে সাড়ে পাঁচ বছরের ছেলে নিষাদের অনেক পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সে হঠাৎ করেই বড় হয়ে গেছে। আমাকে জিজ্ঞেস করে, “মা, তুমি কি বাবাকে মিস করছ? বাবাকে যখন মিস করবে, তখন আমাদের আদর করবে”।’
শাওনের বাবা মোহাম্মদ আলী জানান, ভাত, গরুর মাংস ও মাষকলাইয়ের ডাল দিয়ে চেহলামে আসা এতিম শিশুদের খাওয়ানো হচ্ছে। এই খাবার হুমায়ূন আহমেদের খুব প্রিয় ছিল।
উল্লেখ্য, বাংলা সাহিত্যের নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক গত ১৯ জুলাই নিউইয়র্কে ইন্তেকাল করেন। ২৪ জুলাই তাঁর মরদেহ গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে নুহাশ পল্লীর লিচুবাগানে দাফন করা হয়।
সন্তানদের নিয়ে স্বামীর কবর জিয়ারত করলেন শাওন
নূহাশ পল্লীর মৌলভী মুজিবুর রহমান মুন্সির তত্ত্বাবধানে বেলা ১১টা থেকে কোরআন খতম শুরু হয়। যোহরের নামাজের পর মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন তার দুই পুত্র নিষাদ ও নিনিত এবং মাদ্রাসার এতিম শিশুদের নিয়ে কবরের পাশে আসেন। তারা কবর জিয়ারত করে হুমায়ূন আহমেদের জন্য দোয়া করেন। শাওনের বাবা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী, মা তহুরা আলী এমপিসহ অন্যান্য আত্মীয় এবং অন্যান্য লোকজন দোয়ায় শামিল হন। পিরুজালী মাহ্মুদিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা আরিফুর রহমান দোয়া পরিচালনা করেন।