নওগাঁ থেকে এম. এইচ. জুয়েল ॥ জেলার সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবাই বিল হুমকির মুখে। পাঁচটি স্থান ভেঙে এই বাঁধটি মারাত্নক হুমকির সম্মুখীন হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, নওগাঁর সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবাই বিলের দক্ষিণ প্রান্তের ভাটিতে প্রবাহিত স্রোতের গতি পরিবর্তন করে কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি কর্তৃক অবৈধ পন্থায় মৎস্য আহরণ করায় বিল পাড়ের গোয়ালা ও পাতাড়ী ইউনিয়নের সংযোগস্থল মাসনাতলা ঘাটের রাস্তায় প্রায় ২ কিলোমিটার বাঁধের চার, পাঁচটি স্থান ভেঙে বর্তমানে বাঁধটি মারাত্নক হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে বিলটি তার নাব্যতা হারিয়েছে। বর্ষা মৌসুমেই পানির ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে।
জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে খরায় প্রতি বছর বিলটি শুকিয়ে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ বিলুপ্তিসহ সেচের অভাবে বোরো মৌসুমে হাজার হাজার বিঘা জমির চাষাবাদ ব্যাহত হয়ে আসছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক বছর আগে থেকে ওই এলাকার প্রায় কয়েক হাজার কৃষক জবাই বিলের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং সুষ্ঠুভাবে খরা মৌসুমে তাদের চাষাবাদ করার লক্ষ্যে বিলের ভাটিতে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে একটি বাঁধ নির্মাণ করে। যার ফলে প্রতি বছর খরা মৌসুমে বিলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ধরে রেখে মা মাছের অভয়াশ্রম তৈরি করে মা মাছের রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি গোয়ালা ইউনিয়ন ও পাতাড়ী ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও বাঁধটি রাস্তা হিসেবে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু চলতি বর্ষা মৌসুমে পাতাড়ী ইউনিয়নের কলমুডাঙ্গা-শাঁওতাল পাড়া গ্রামের প্রভাবশালীদের একটি বিশেষ মহলের মদদে ও স্থানীয় মৎস্য অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ক্ষমতাসীন দলের অসাধু নেতাকর্মীকে ম্যানেজ করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বিলের ভাটিতে বাঁশের তৈরি বিশেষ বানা (চাটাই) স্থাপনের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের সব পথে বাধার সৃষ্টি করে বিলের পানি একটি পয়েন্ট দিয়ে প্রবাহিত করে সেখানে সুতি জাল বসিয়ে মাছ ধরার ফলে বর্তমান বর্ষাকালের পানির চাপে বাঁধটির বিভিন্ন পয়েন্ট ভেঙ্গে গিয়ে বিল শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে ওই বাঁধ দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। রাস্তার ভাঙা স্থানগুলোতে এলাকার ভুক্তভোগীরা বাঁশের পুল তৈরি করে কোন মতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বর্তমানে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধটি পুনঃনির্মাণ করা না গেলে আগামী খরা মৌসুমে বিলটি শুকিয়ে গিয়ে মাঠের পর মাঠ জমি পতিত থাকবে।
অপরদিকে বিলের ঐতিহ্য নষ্টসহ এলাকার হাজার হাজার কৃষক সেচ সুবিধা হতে বঞ্চিত হবে। এ বিষয়ে সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই অবৈধ সুতি জাল দিয়ে মৎস্য আহরণকারীদের সঙ্গে কথা হলে তারা স্থানীয় নেতা এবং মৎস্য বিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করেই বিশাল বিলের পানিতে কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে এভাবে মাছ ধরার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্বীকার করে। এদিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার পদটি দীর্ঘ দিন ধরেই শূন্য রয়েছে। ফলে উপজেলার সব ধরনের মৎস্যসংক্রান্ত বিষয়ে তদারকি করছেন ক্ষেত্র সহকারী মোঃ নুরুননবী। এ বিষয়ে ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পানির গতি থামিয়ে অবৈধ পন্থায় মাছ না ধরার জন্য ইতিমধ্যে জড়িতদের নোটিশ করা হয়েছে। পর পর তিন বছর ধরে বিলের শেষ প্রান্তে প্রভাবশালীরা অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করে সুতি জালে মাছ শিকার করে আসছে কোন ক্ষমতা বলে এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রুহুল আমিন মিঞা এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। তবে ওই বিষয়ে একটি অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছেন সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান।
সবাই নিজের দোষ এড়িয়ে গেলেও প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।