দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ আধুনিক যুগেই যে অহরহ শোনা যাচ্ছে তা কিন্তু নয়। বরং এর প্রাদুর্ভাব সুদীর্ঘ কালের। সম্প্রতি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন মানবদেহের সন্ধান পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল নিশ্চিত করেছেন যে তারা একের অধিক অঙ্গপ্রতঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সারের সবচেয়ে প্রাচীন মানবদেহের সন্ধান পেয়েছেন। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মরণ ব্যাধি ক্যান্সার বিষয়ক গবেষণায় তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দারহাম বিশ্ববিদ্যালয় (Durham University) গবেষণায় এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামের প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় যে ২০১৩ সালে সুদানে একটি কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়েছে যা তিন হাজার (৩,০০০) বছর আগের এবং সে মানবদেহে একটি টিউমারের অস্তিত্বও ছিলো যা প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় যে টিউমারটি মূলত ছিলো প্রাণঘাতি ক্যান্সার।
কঙ্কালটি ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে রেডিওগ্রাফিতে বিশ্লেষণ করে এর হাড় , কাঁধ, বাহু, কলার বোন ( Collar bone), কশেরুকাতে বিজ্ঞানীরা কিছু ক্ষত দেখতে পান এবং টিউমারের নমুনা পান। সে থেকেই তারা ধারণা করেন মৃত ব্যাক্তিটি ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন। কেননা রেডিওগ্রাফি ও ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে হাড়ের ক্ষতিগ্রস্থ অংশের বর্ধিত ছবি পর্যবেক্ষণ করে তারা দেখেছেন যে ক্যান্সার কাঁধ ও বক্ষের হাড়, বাহু, মেরুদন্ড, পাঁজর, পা ও উরুর হাড়ে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিলো।
‘প্রাগ-ঐতিহাসিক যুগের মানবদেহের এই সকল অবশিষ্টাংশ গুলোকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে আমরা রোগের ইতিহাস ও বিবর্তন সম্বন্ধে ধারণা পেতে পারি’, বলেছেন দারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পি.এইচ.ডির ছাত্র মাইকেল বিনডার, তার নেতৃত্বেই বর্তমানে এই খননকার্য ও কঙ্কালের উপর গবেষণা কার্যক্রম চলছে। তিনি আরো বলেন, ‘পর্যবেক্ষণে হাড়ের উপর যে ক্ষতচিহৃ আমরা খুঁজে পেয়েছি তা শুধু মাত্র ক্যান্সারের কারনেই হওয়া সম্ভব, যদিও শুধুমাত্র প্রাপ্ত হাড়ের উপর ভিত্তি করে প্রকৃত কারণ বের করা একেবারেই অসম্ভব। তবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং কাছাকাছি কারণ এটাই হতে পারে।’
যদিও প্রাণঘাতী ব্যাধিগুলোর মধ্যে ক্যান্সার প্রথম সারিতে অবস্থান করছে তথাপি প্রাগঐতিহাসিক যুগে এ ব্যাধির অস্তিত্ব ছিলো তার কোনো প্রমাণ এর আগে পাওয়া যায় নি যেমনটা অন্যান্য ব্যাধির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
ডাব্লিউ.এইচ.ও (WHO) এর ক্যান্সার বিষয়ক গবেষণার সংস্থার হিসাব মতে ২০১২ সালে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা আনুমানিক ১৪ মিলিয়নে উত্তীর্ণ হয়েছে; আগামী ২০ বছরে যা ২২ মিলিয়নে গিয়ে ঠেকবে বলে তারা আশংকা করছেন। নতুন এই আবিষ্কার পাবলিক লাইব্রেরি অফ সাইন্সের জার্নাল প্লোস ওয়ানের সোমবারের সংখ্যায় প্রকাশিত করে এটাই প্রমাণ করতে পেরেছেন যে ক্যান্সার শুধু মাত্র আধুনিক ব্যাধি নয়, এটা নীলনদের অববাহিকায় প্রাগৈতিহাসিক যুগেও বিদ্যমান ছিলো। বাইন্ডার (Binder) বলেন ঠিক কী কারণে হাজার বছর আগের জনপদের এই ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিলো এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের সে বিষয়ে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করবে।
প্রাচীন কঙ্কাল ও মমির মধ্যে খুঁজে পাওয়া ক্যান্সারের অস্থিত্ব নিয়ে ডিএনএ (DNA) বিশ্লেষণ করলে স্বতন্ত্র ক্যান্সারের জন্য দায়ী জিনের পরিবর্তন সম্বন্ধে ভাল ধারণা পাওয়া যাবে বলে গবেষকরা মনে করছেন। ২৫ থেকে ৩৫ বছরের প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষ কংকালটি রাজধানী থেকে ৭৫০কিমি দূরে নীলনদের অববাহিকায় অবস্থিত পশ্চিম সুদানের ‘আমারা’ খনন সাইটে পাওয়া যায়।
গবেষকরা বলছেন যে তারা শুধুমাত্র ধারণা করতে পারেন কী কারণে এই মৃত যুবকটি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলো একেবারে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না; হতে পারে ক্যান্সার সহায়ক পরিবেশগত উপাদান যেমন কাঠ পোড়া ধোঁয়ার কারণে অথবা বংশগত কারণে হতে পারে; আবার সংক্রামক ব্যাধি ক্রিসটোসোমায়েসিস এর কারণেও হতে পারে যা পরজীবীর আক্রমনে হয়ে থাকে। এ বিষয়ে ধারণা করা হচ্ছে যে ক্রিসটোসোমায়েসিস হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি কারণ ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে মিশর ও নুবিরায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিলো যা বর্তমানে পুরুষদের মূত্রাশয় ও স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
তথ্যসূত্র : FOX NEWS.COM