দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নতুন এক গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে, মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে বেশি সময় ধরে টেক্সট মেসেজ প্রেরণের ফলে ব্যবহারকারীর আয়ু হ্রাস পেতে পারে। অস্থিসন্ধির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন টেক্সট মেসেজ প্রেরণের সময় ব্যক্তির নিশ্চলতা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দলা বা কুজের সৃষ্টি করে। যার ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হতে পারে নিঃশ্বাসের সমস্যা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সে হৃদপিণ্ডের কার্ডিওভাস্কুলারের ঝুঁকিপূর্ণ সমস্যা।
যুক্তরাজ্যের অস্থিসন্ধি এসোসিয়েশনের বিশেষজ্ঞরা বলেন, “ছোট আকারের হাড়ের কুজ পরবর্তীতে বড় আকারের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বৃদ্ধ বয়সে এটি হাইপারকাইপোসিস রোগ সৃষ্টি করতে পারে।”
হাইপারকাইপোসিস হলো স্পাইনাল কর্ডের একটি রোগ। এই রোগে স্পাইনাল কর্ড অস্বাভাবিকভাবে বেঁকে যায়। ফলে পিঠে কুজের মতো দেখতে সৃষ্টি হয়। এর ফলে ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। কখনো কখনো তা হার্টের পেশী ধমনী বন্ধ করে দিয়ে মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
গবেষকরা বলেন, “যখন কেও টেক্সট মেসেজ করার জন্য কিংবা পড়ার জন্য স্পাইনাল কর্ড বাকিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে, তখন সেই ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাসে কিছুটা সমস্যা হয়। কেননা তার মাংসপেশি কিছুটা দলা-পাকিয়ে হৃদপিণ্ডে চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়াও, এই সময় মাংস ও মাংসপেশীতে রক্তপ্রবাহে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। শরীরের পাঁজর ভালোভাবে নড়াচড়া না করতে পারার কারণে হৃদপিণ্ড এবং যকৃত পুরোপুরি কার্যকরভাবে ক্রিয়াশীল থাকে না।
মানুষ জানেই না দীর্ঘকালীন সময়ে এই কাজটি করার ফলে শরীরের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে কিন্তু তারা স্বল্পকালীন সময়ে প্রভাবকে নগণ্য মনে করে। এটি ভয়ানক হারে বাড়ছে তরুণদের মধ্যে, কেননা তাদের একটা বৃহৎ অংশই স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট ব্যবহারকারী এবং তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সময় বেশি ব্যয় করে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অনেকেই মৃত্যু ঝুকি নিয়ে হাইপারকোসিসে ভুগছেন। এই ধরনের রোগের ঝুকি আরো বাড়ছে যাদের শরীরের বিএমআই ৩০ এর বেশি। ইউসিএ বিশেষজ্ঞ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন এভাবে, বিএমআই ৩০ এর বেশি হওয়াটাই একজন প্রাপ্ত বয়সের তরুণের জন্য অস্বাভাবিক এবং তার পাশাপাশি এই বিএমআইতে শরীরের অস্বাভাবিক ঝুঁকে পড়াটাও ক্ষতিকর। কারণ এতে করে কার্ডিওভাস্কুলার চাপ বেড়ে যায়।
টেক্সট মেসেজ লেখার সময় তরুণদের মধ্যে সামনে ঝুঁকে থাকার একটি প্রবণতা রয়েছে। এই ঝুঁকে পড়াটা তাদের ঘাড় এবং পিঠের মেরুদণ্ডে একটা চাপ সৃষ্টি করে যার ফলে রক্তপ্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হয় এবং একটি নির্দিষ্ট স্থানে তা জমাট বেঁধে যায়। কিছুদিন পর তা কুজের আকার ধারণ করে এবং পরবর্তীতে এটি হাইপারকোসিসে পরিণত হয়। ইউসিএ বলেন, তরুণ কিংবা যাদের পিঠে ইদানিংকালে সমস্যা মনে হচ্ছে তারা অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন তা হাইপারকোসিসে রুপ নিচ্ছে কিনা? ইউসিএ এর চিকিৎসকরা আরো জানান, ইদানিংকালে এই ধরণের সমস্যা নিয়ে অনেক তরুণ রোগী আসছে এবং তারা বুঝতেই পারছে না কেন তারা এটিতে আক্রান্ত হচ্ছে। নানাভাবেই তরুণরা বা যারা বেশি সময় ধরে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ট্যাবলেট এবং স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন তারা এই ধরণের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে তাদের মৃত্যুঝুকিও বাড়ছে।
ইউসিএ এর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ তরুণদের এবং যাদের বেশি সময় ধরে টেক্সট মেসেজিং এর প্রবণতা রয়েছে তারা তাদের অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে। টেক্সট মেসেজিং করার সময় বসার ভঙ্গিটি বারবার পরিবর্তন করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ ডেইলিমেইল