দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ব্রাজিলে ছাড়া হয়েছে এক ঝাঁক জেনেটিক্যালি মোডিফাইড মশা। যা অ্যাডিস মশাদের নিধন করে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ হ্রাসে সাহায্য করবে। কারণ এই জিএম মশাগুলো একধরণের লিথাল জিন বহন করে যার ফলে তারা অ্যাডিস মশাদের নিধন করে।
জ্যাকোবিনা হলো বাহিয়া শহরের একটি ছোট চাষাবাদের গ্রাম প্রতিবছর ডেঙ্গু জ্বরের মহামারী আকারে দেখা দেয়। মশাবাহিত এই রোগটি ব্রাজিলের ক্রান্তীয় অঞ্চলগুলোর সবচেয়ে মারাত্মক প্রাণনাশী হুমকি। নতুন প্রজাতির একপ্রকার অ্যাডিস অ্যাজিপ্টো জেনেটিক্যালি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন তা নিজেদের প্রজাতির বিনাশ ঘটায়। গত বছর ব্রাজিলে ১.৪ মিলিয়ন লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে যাদের অনেককেই ওষুধ সরবরাহ করা যায়নি। যার ফলশ্রুতিতে এটি অনেকের মধ্যে হেমোরেজিক পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। ফলে তাদের রক্তক্ষরণ হয়, কোমাতে চলে যায় এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
ফ্রাঙ্কেন-স্কেটার নামের জেনেটিক্যালি মোডিফাইড এই অ্যাডিস মশাগুলো পরীক্ষাগারে তৈরি করা হয়েছে। এদের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এক প্রকার লিথাল জিন বা মরণনাশক জিন যার ফলে জেনেটিক্যালি মোডিফাইড নয় এমন এমন মশা সনাক্ত করে তাদের মেরে ফেলবে। এভাবে সহজেই ডেঙ্গু বৃদ্ধি প্রতিরোধ করা যাবে। জিএম মশা তৈরির কোম্পানী মোশক্যামড এর প্রেসিডেন্ট মালাভাশি বলেন,”আমাদেরকে ব্রাজিলের ডেঙ্গু মশা নিধনে বিকল্প পথের কথা চিন্তা করতে হচ্ছিলো। কেননা এখানে অ্যাডিস মশার প্রভাব খুব বেশি, প্রতিবছর অনেক লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, অনেকে কাজ করতে পারছে না, এর চিকিৎসায় অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে।”
কিন্তু অপরদিকে জিএম পতঙ্গ তৈরির বিরোধীরা এর তীব্র সমালোচনা করছে। তাদের মতে এর ফলে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে নতুন ধরণের ক্ষতিকারক পতঙ্গ যারা জেনেটিক্যালি সাধারণ প্রাকৃতিক পতঙ্গের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। ফলে তারা ভবিষ্যতে পরিবেশের উপর কি ধরনের প্রভাব ফেলবে তা নিশ্চিতভাবে না বলে পরিবেশে অবমুক্ত করা ঠিক নয়। জনস্বাস্থ্য সচেতনতার অন্যতম অংশ হিসেবে ডেঙ্গু কিংবা অ্যাডিস মশার বংশবৃদ্ধি প্রতিরোধের জন্য বাসাবাড়িতে ফুলের টবে পানি জমতে না দেওয়া। কারণ অ্যাডিস মশা পরিস্কার পানিতে কিংবা ঘরের ভেতরের জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে এবং বংশবৃদ্ধি করে। ডব্লিউএইচও এর মতে গত ৫০ বছরে ডেঙ্গু রোগের বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
মালাভাসি এবং তার দল অ্যাডিস অ্যাজিপ্টির নতুন এই প্রজাতিটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছে ব্রিটিশ জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানী অক্সিটেক। তাদের তৈরি অক্সি ৫১৩এ হলো বিশ্বের প্রথম জিএম পতঙ্গ যা পরিবেশে অবমুক্ত করা হয়েছে। যার একটি ছোট অংশ ছাড়া হয়েছিল ক্যায়মান দ্বীপ এবং মালয়েশিয়াতে। অক্সিটেক বলে বৃহৎ পরিসরে ব্রাজিলেই প্রথম কোন জিএম পতঙ্গ ছাড়া হচ্ছে। জিএম মশাগুলো বহন করে এক প্রকার লিথাল জিন বা মরণনাশক জিন। যা তাদের শরীরে বাঁচিয়ে রাখা হয় টেট্রাসাইক্লিন নামক এক প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে। যখন মশাগুলো লার্ভা স্তরে পৌছায় তখন পুরুষ মশা আর স্ত্রী মশা আলাদা করা হয়। স্ত্রী মশাদের ধ্বংস করে ফেলা হয়। আর পুরুষ মশাদের ছেড়ে দেওয়া হয় পরিবেশে। পুরুষ জিএম মশারা বন্য স্ত্রী মশাদের সাথে মিলিত হয় যার ফলে তাদের শরীরে প্রবেশ করে লিথাল জিন এবং অবশেষে মৃত্যু হয়। এই জিএম মশাদের বলা যায় জীবন্ত কীটনাশক।
ব্রাজিলের সরকার মোস্ক্যামডকে জেকোবিনা শহরে পরীক্ষামূলক অবমুক্তকরণের অনুমতি দিয়েছে। মোস্ক্যামড আশা করছে এর ফলে প্রায় ৯০ শতাংশ বন্য অ্যাডিস মশা কমিয়ে ফেলা যাবে। ফলশ্রুতিতে ডেঙ্গু জ্বরের মহামারী আকার হ্রাস পাবে।
তথ্যসূত্রঃ ইন্ডিপেন্ডেন্ট