দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ খেলাফত আন্দোলনসহ ১২টি সমমনা ইসলামী সংগঠনের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে। রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাত্রাবাড়ী ও কাজীপাড়ায় পিকেটিং হয়েছে। পুলিশ সেখান থেকে ৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে।
সকাল থেকে সারাদেশব্যাপী ডাকা হরতাল ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দূরপাল্লার বাস ছাড়া ট্রেন চলছে যথারিতি। রাজধানীর মার্কেটগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে বাস-টেম্পো-রিক্সা চলছে স্বাভাবিকভাবে। যাত্রাবাড়ী ও কাজিপাড়া ছাড়া আর কোথাও পিকেটিংএর খবর পাওয়া যায়নি। সকাল ১০ টায় রাজধানীর মহাখালী রেলক্রসিং এ গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বাস-মিনিবাস টেম্পো চলছে অন্যদিনের মতোই স্বাভাবিকভাবে। প্রায় সব দোকান-পাট খোলা থাকলেও মার্কেট গুলো ছিল বন্ধ। রাস্তায় কোন যানজট ছিল না।
সকালে মীর হাজারিবাগে পুলিশের ওপর পিকেটাররা ইট ছুঁড়লে পরিস্থিতি খারাপ হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পিকেটারদের ইটের আঘাতে আহত হন সংশ্লিষ্ট থানার এএসআই রুহুল আমিন। পুলিশ সেখান থেকে ৩৮ জনকে গ্রেফতার করে। অপরদিকে কাজীপাড়ায় মাদ্রাসার কাছে পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয় পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ সেখান থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করে।
৬টা থেকে হরতাল শুরু হলেও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, কমলাপুর, মগবাজার, মহাখালী, ফার্মগেট, মিরপুর রোডে মোড়ে মোড়ে পুলিশকে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা যায় ভোর ৫টা থেকেই। পল্টন, বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাব ও হাইকোর্ট মোড় এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে শনিবার থেকেই। রোববার সকাল থেকে রাজপথে বাস, অটোরিকশা ও রিকশা চলতে দেখা গেলেও তা সংখ্যায় কিছুটা কম। দিনের প্রথমভাগে স্বাভাবিক দিনের মতো অফিসগামী মানুষের ভিড়ও চোখে পড়েনি।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ‘ইসলামের জন্য অবমাননাকর’ চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ ও সমমনা ১২টি দল গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করে আসছিল। তারা কর্মসূচি দিলে পল্টন ও এর আশপাশ এলাকায় শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শনিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মুসলিম সংগঠনগুলো মিছিল করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে রোববার সারাদেশে হরতালের ডাক দেন খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ও ইসলামী ১২টি দলীয় জোটের সদস্য সচিব মাওলানা জাফর উল্লাহ। এ হরতালের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ইসলামী ঐক্যজোটও। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে না থাকার কথা জানিয়েছেন ঐক্য জোটের প্রচার সম্পাদক আহালুল্লাহ রাসেল।
শাহবাগ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন গভীর রাতে জানান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে খোঁজ খবর নিয়ে তাদের মধ্যে ৩২ জনকে আটক রেখে বাকিদের রাতেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মহানগর পুলিশের রমনা অঞ্চলের উপকমিশনার নূরুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, শনিবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরাও তৎপর ছিলেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত বিতর্কিত এই চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ সংঘাতে রূপ নিয়ে শুক্রবার পাকিস্তানে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়। ওই চলচ্চিত্রের নির্মাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ওই চলচ্চিত্রের ভিডিওক্লিপ প্রচার হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ইউটিউব বন্ধ করে দিয়েছে। এই চলচ্চিত্র ঘিরে লিবিয়ায় বিক্ষোভের মধ্যে হামলার শিকার হয় যুক্তরাষ্ট্রের মিশন। এতে রাষ্ট্রদূতসহ কয়েকজন নিহত হয়।
সারাদেশে হরতাল হলেও দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়া জেলা হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব জাফরউল্লাহ খান।
দিনাজপুরে রোববার ১১ দলীয় জোটের জনসভা রয়েছে, যাতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। জাফর উল্লাহ বলেন, “খালেদা জিয়ার প্রতি সম্মান জানিয়ে রংপুর এবং দিনাজপুর জেলা হরতালের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।”
এদিকে ইসলামী দলগুলোর কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে ঢাকার বারিধারায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্যকে পাহারায় দেখা গেছে।