দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইন্ডিয়ার একজন ব্যবসায়ীর পেটের ভেতর থেকে ১২টি স্বর্ণের বার বের করেছেন ডাক্তাররা। নিউ দিল্লীর একটি হাসপাতালে এই মাসের শুরুতে এই ঘটনাটি ঘটে। ওই ব্যবসায়ী কে বর্তমানে পুলিশের জিম্মায় রেখে কাস্টম বিভাগের কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
৬৩ বছর বয়স্ক এই ব্যবসায়ী হাসপাতালে ভর্তি হন এই বলে যে তিনি একটি পানির বোতলের ক্যাপ খেয়ে ফেলেছেন। তিনি বমির মাধ্যমে সেই পানির বোতলের ক্যাপটি ফেরত আনার চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারেননি বলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডাক্তাররা জরুরীভিত্তিতে তার অপারেশন করে দেখেন তার পেটের ভেতর ১২টি স্বর্ণের বার। কর্তব্যরত ডাক্তার জানান তিনি যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তখন প্রচণ্ড ব্যথা এবং বমির জন্য যন্ত্রণাভোগ করছিলেন। ফলে ডাক্তাররা তাকে খুব দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করান এবং অপারেশনের মাধ্যমে পেট কাটেন। ব্যবসায়ীটির পেট কাঁটার পর সেখানের ডাক্তাররা হতভম্ব হয়ে যান। কারণ তারা ব্যবসায়ীর পেট কেটে বের করে আনেন ১২টি মূল্যবান স্বর্ণের বার। এই ১২টি স্বর্ণের বারের বাজার মূল্য প্রায় ২৩৩০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী টাকায় তার অর্থমূল্য দাঁড়ায় ১৮০৬৪৪৯ টাকা। প্রতিটি স্বর্ণের বারের দাম প্রায় ১৯৪১ মার্কিন ডলার।
ডাক্তাররা তার পেটের ভেতর থেকে যে ১২টি স্বর্ণের বার বের করেছেন তার প্রতিটির ওজন প্রায় ৩৩ গ্রাম। ডাক্তারদের কাছে ওই ব্যবসায়ী যে অসুস্থতা অর্থাৎ পানির বোতলের ক্যাপ খেয়ে ফেলা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন সেটি তার পাকস্থলীতে খুজে পাওয়া যায়নি। ফলে ডাক্তাররা বুঝতে পারেন রোগী তাদের কাছে মিথ্যে কথা বলেছে। তাই তারা ইন্ডিয়ান কাস্টম বিভাগের কাছে রোগীর বিস্তারিতসহ স্বর্ণের বারের বিষয়টি তুলে ধরেন। বর্তমানে কাস্টম বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে তাদের জিম্মায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ব্যবসায়ীর পেটের ভেতর থাকা স্বর্ণের বারগুলো জব্দ করা হয়েছে।
নিউ দিল্লীর স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের সিনিয়র কনসাল্টিং সার্জন সিএস রামাচন্দ্র ইন্ডিয়ান একটি পত্রিকাকে বলেন, “ব্যবসায়ীটি তাদের নিকট এপ্রিলের ৭ তারিখ আসে এবং তিনি আমাদের তার পানির বোতলের ক্যাপ খেয়ে ফেলার ঘটনাটি বলেন যা তিনি দুর্ঘটনাবসত খেয়ে ফেলেছেন। তারপর আমরা তার এক্সরে করি কিন্তু এক্সরেতে যে চিত্রটি ফুটে উঠে তা পানির বোতলের ক্যাপ বলে মনে হয় না। আমরা বুঝতে পারি এটি কোন এক ধরনের ধাতু কিন্তু সেটি যে স্বর্ণের বার হবে তা আমাদের ধারনার মধ্যে ছিল না। রোগীর পাকস্থলীতে অ্যাবডুমেনের ভাঁজে ভাঁজে স্বর্ণের বারগুলো আটকে ছিল।”
সার্জন সিএস রামাচন্দ্র আরো জানান যদি এই স্বর্ণের বারগুলো আরো কিছুদিন তার পেটের ভেতর থাকতো তবে তা পাকস্থলীর ইন্টেস্টাইনকে বড় ধরনের ক্ষতি করতো যার ফলে পাকস্থলীর ভেতরে রক্তক্ষরণ হতো। ব্যবসায়ীটি নিউদিল্লীর হাসপাতালে বেশ পরিচিত নাম হয়ে গিয়েছেন। তাকে দেখতে হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটের রোগীরা ভিড় করছেন। পুলিশ সার্বক্ষণিক এই ব্যবসায়ী রোগীকে নজরে রাখছেন।
ভারতে গত কয়েকবছর যাবৎ স্বর্ণ চোরাচালানের ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ভারত হলো বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্বর্ণের ভোক্তা বাজার। ফলে এখানে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ চোরাচালানের মধ্য দিয়ে আসে। এটি বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্বর্ণ চোরাচালানের পথ। ভারত সরকার গত বছর থেকে স্বর্ণ আমদানির উপর পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় তিনগুন বেশি কর ধার্য করে দিয়েছে। এমতবস্থায় স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের একটা অংশ পেটের ভেতর করে স্বর্ণ আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীটির সাথে স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের হাত থাকতে পারে কিংবা চোরাচালানকারী হতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করছেন কাস্টম বিভাগের কর্মকর্তারা।
তথ্যসূত্রঃ ডেইলিমেইল