দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পানি হলো জীবন ধারনের অন্যতম উপাদান। পৃথিবীর অনেক প্রান্তেই এটি দুর্লভ একটি বস্তু। ওয়াটারজেন নামক কোম্পানী বায়ু থেকে পানি তৈরি করার কৌশল উদ্ভাবন করেছে। যা মূলত যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সৈনিকদের জন্য অনেক উপকারী হবে।
ডব্লিউএইচও এর প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বের ৭৮০ মিলিয়ন মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভোগে। প্রতিবছর ৩.৪ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় পানিবাহিত রোগে। একটি ইসরাইলি কোম্পানী বায়ু থেকে পানি তৈরির এ কৌশল আবিস্কার করেছেন। ওয়াটারজেন নামক কোম্পানীটি বায়ুস্তরের এটমোস্ফিয়ারের মাধ্যমে বায়ু থেকে পানি বের করা নিয়ে কয়েক বছর যাবত গবেষণা করছে। তাদের ওয়াটার জেনেরেশন ইউনিট একটি বিশেষ তাপের প্রক্রিয়ায় হালকা বায়ুকে ঘনীভুত করে এবং সেই বায়ুকে বাষ্পে পরিণত করে এর পানির অংশটি আলাদা করা হয়। ওয়াটারজেন কোম্পানী এর নাম দিয়েছে জিনিয়াস।
তারা বলেন,’পরিস্কার বাতাস জিনিয়াস হিট এক্সচেঞ্জে প্রবেশ করে যেখানে বাস্পের মাধ্যমে এর আর্দ্রতাকে দুরীভুত করা হয়। বাতাস থেকে পানির অংশটি দূর করা হয় এবং নির্দিষ্ট ট্যাঙ্কে জমা করা হয়। তারপর এই পানিকে ফিল্টারেশন ইউনিটে প্রবেশ করানো হয় এবং যতটা সম্ভব এর রাসায়নিক এবং জীবাণুমুক্ত করা হয়। এরপর এর বিশুদ্ধ পানি অপর আরেকটি ট্যাঙ্কে জমা করা হয়।’
বায়ুস্তর থেকে পানি তৈরির এই প্রক্রিয়াটি নতুন কোন উদ্ভাবন নয়। ইতোমধ্যে অনেক কোম্পানী এই ধরনের বাণিজ্যিকভাবে এই ধরনের ওয়াটার জেনারেটর তৈরি করে বাজারজাত করছে। কিন্তু ওয়াটারজেন দাবি করছে তাদের তৈরি এই জেনারেটরটি অন্যান্য জেনারেটর থেকে আরো বেশি শক্তিপ্রদ। কেননা অন্যান্য কোম্পানী ঠাণ্ডা বায়ু থেকে এই ধরনের পানি তৈরি করে থাকে। ওয়াটারজেন আরো বলে কিছু কিছু কোম্পানী বায়ুকে বিস্তৃত করে এর থেকে পানি বের করে। এটি অনেক সহজ একটি প্রক্রিয়া। কেননা এই প্রক্রিয়াটি শীতাতপযন্ত্রেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ওয়াটারজেনের এই জিনিয়াস হিট এক্সচেঞ্জারের মাধ্যমে ২৫০ থেকে ৮০০ লিটার পানি পাওয়া সম্ভব। তবে এটি নির্ভর করে পরিবেশের তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার উপর। এই হিট এক্সচেঞ্জারটির জন্য খুব স্বল্প বিদ্যুৎ খরচ হয়।
প্রাথমিকভাবে এই যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে ইসরাইলী ডিফেন্স বাহিনীর জন্য, ওয়াটারজেন ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশের সেনাবাহিনীর কাছে তাদের এই যন্ত্রটি বিক্রয় করেছে। কিন্তু তাদের বর্তমান লক্ষ্য সাধারণ মানুষের জন্য এটি ব্যবহার উপযোগী করা। তারা ইতোমধ্যে ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে পানির অভাব রয়েছে সেখানে কাজ শুরু করেছে। তাদের হিসেব মতে প্রতিলিটার পানির জন্য ভারতের দরিদ্র অঞ্চলগুলোর খরচ হবে মাত্র ১.৫ রুপি।
ওয়াটারজেন বর্তমানে আরেকটি যন্ত্র তৈরির জন্য গবেষণা করছে এটি হলো পানি বিশুদ্ধকরন যন্ত্র। এটি চলবে ব্যাটারী দ্বারা আর এটি হবে পোর্টেবল। তারা এই যন্ত্রটির নাম দিয়েছে স্প্রিং। স্প্রিংকে ব্যাকপ্যাকের মতো কাঁধে বহন করা যাবে। একটি স্প্রিং যন্ত্র দ্বারা ১৮০ লিটার পানি পাওয়া সম্ভব। ইসরাইলি ডিফেন্স বাহিনীর প্রধান মনে করেন স্প্রিং একটি চমৎকার উদ্ভাবন। কেননা পানি আপনি যেকোনো জায়গায় পেতে পারেন কিন্তু বিশুদ্ধ পানি একটি দুরহ ব্যাপার। ২০১৩ সালে ফিলিপাইনের হাইয়ান টাইফুনের সময় আইডিএফ এই স্প্রিং যন্ত্রটি ব্যবহার করেন দুর্গত মানুষদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে। হয়তো ওয়াটারজেনের একক প্রচেষ্টায় সারাবিশ্বের পানির সমস্যা দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু তাদের এই উদ্ভাবনের কৌশলের মাধ্যমে পানির একটি উপযুক্ত সমাধানে আসা সম্ভব। ওয়াটারজেন হাইতি এবং ফিলিপাইনে বিশুদ্ধ পানির অভাব দূর করতে গত কয়েকবছর যাবত কাজ করছে। কিন্তু তারা আরো অনেক দেশে এই বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী।
তথ্যসূত্রঃ সিএনএন