দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চিকিৎসাবিজ্ঞানে অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কার যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছিল। এর ফলে জীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত করে রোগ নিরাময় সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টিবায়োটিক আর আগের মত কাজ করছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বের ১১৪টি দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে গবেষণা করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদনে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও রক্তের সংক্রমণের জন্য দায়ী সাতটি আলাদা ধরনের ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া বিশ্বের অনেকগুলো দেশের রোগীদের ওপর দুটি প্রধান অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে দেখা গেছে, এগুলো আর কাজ করছে না। একটি প্রধান অ্যান্টিবায়োটিক কার্বাপেনেম। নিউমোনিয়া, রক্তে প্রদাহ ও নবজাতকদের দেহে প্রদাহের মতো রোগ নিরাময়ে এটি অনেক দিন যাবত ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এছাড়া প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মূত্রতন্ত্রের প্রদাহের জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক একেবারে অকার্যকর হয়ে গেছে। অবশ্য গত শতকের আশির দশক থেকে এটি কম কাজ করছিল। যৌনরোগ গনোরিয়ার ক্ষেত্রেও একই পরিণতি ঘটেছে। কাজ করছে না এর অ্যান্টিবায়োটিক। ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্বে প্রতিদিন এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দশ লক্ষ।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন এভাবে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। গবেষণা প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। চিকিত্সকেরা এ ধরনের ওষুধ বেশি ব্যবহার করায় এবং রোগীরা ওষুধ ঠিকমতো না খাওয়ায় এটি ঘটেছে। এছাড়া নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির কোন উদ্যোগ নেই।
অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করলে বিশ্বে এক করুন অবস্থার সৃষ্টি হবে। সাধারণ কাটাছেড়া বা ছোট খাট ইনফেকশনে মারা যাবে মানুষ। আমাদের দেশের অবস্থা আরো খারাপ হবে। কেননা উন্নয়নশীল দেশগুলোয় সংক্রামক রোগ বেশি, তাই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনও বেশি। তাই সামনে বড় এক সমস্যার মুখোমুখি হতে যাচ্ছি আমরা।
এর জন্য করণীয় কি? খুব দ্রুত নতুন অ্যান্টিবায়োটিক উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, হাসপাতালে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ এবং রোগ প্রতিরোধে টিকা ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
মেডিসিন স্যানস ফ্রন্টিয়ার্সের চিকিত্সা পরিচালক জেনিফারের মতে, সবখানেই অ্যান্টিবায়োটিকের জীবাণু প্রতিরোধী হয়ে ওঠা দেখা যাচ্ছে। নাইজারের পুষ্টিকেন্দ্র থেকে শুরু করে সিরিয়ায় অস্ত্রোপচার ইউনটি সবখানেই একই দশা। তিনি বলেন, মূলত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রতিবেদনটি একটি সতর্কবার্তা। তাই এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক উত্পাদন ও বাজারজাতকরণে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে। পেটেন্টের কথা চিন্তা করলে হবে না। অবশ্যই উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদার কথা মাথায় রাখতে হবে। এ মুহূর্তে প্রয়োজন অ্যান্টিবায়োটিকের বিবেচনাপ্রসূত ব্যবহার নিশ্চিত করা। উন্নতমানের অ্যান্টিবায়োটিক যেন তাদের কাছেই পৌঁছায়, যাদের এটা প্রয়োজন। আবার খেয়াল রাখতে হবে, এগুলো যাতে বেশি ব্যবহার না হয় এবং দামও খুব বেশি না হয়।
আমাদের দেশে এমনিতেই চিকিৎসার অবস্থা খুব খারাপ। তার উপর এই তথ্য আমাদের জন্য মড়ার উপর খাড়ার ঘা। আমাদের দেশের গবেষকেরা পৃথিবীতে যথেষ্ট অবদান রাখছে। তাই বাইরের দেশের দিকে তাকিয়ে না থেকে আমাদের উচিত অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির চেষ্টা নিজেরাই করা।