দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ খাবার পানির সংকট আগে রাজধানীতে দেখা যেতো। কিন্তু ঢাকা ওয়াসার এলাকাভিত্তিক পানির পাম্প বসানোর পর সে সমস্যা অনেকটা লাঘব হয়েছে। কিন্তু দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাবার পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ফাইল ফটো
জানা গেছে, সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর পর্যন্ত অন্তত ১৬ উপজেলায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এই ১৬ উপজেলায় প্রায় ৫০ লাখ মানুষ বসবাস করে। জানা যায়, এক কলসি খাবার পানি সংগ্রহের জন্য এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে কখনও কখনও দুই মাইল দূরে ছুটছেন সেখানকার বাসিন্দারা। পাইকগাছা উপজেলার লতা ইউনিয়নের শামুকপোতা গ্রামের একেকটি পরিবারকে নাকি প্রতি মাসে ক্ষেত্র বিশেষে ৪শ’ থেকে ৬শ’ টাকা খরব করতে হয় খাবার পানির জন্য। তাছাড়া খাবার পানি না পেয়ে পুকুর বা ডোবার পানি খেয়ে আক্রান্ত হচ্ছে নানা ধরনের পেটের পীড়ায়।
ফাইল ফটো
সাতক্ষীরা ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী একটি সংগঠন ‘উত্তরণের এক গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্বৃতি দিয়ে এক খবরে বলা হয়েছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় মিঠা পানির উৎস কমে গেছে। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ওই গবেষণা প্রতিবেদনের পানির অভাবের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে- গঙ্গা নদীর গতিমুখ পরিবর্তন, অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে খাল ও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ হ্রাস পাওয়া, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়া, সার এবং কীটনাশকের অপব্যবহার, যেখানে সেখানে উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ, বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে কমে যাওয়া বা সময় মতো না হওয়া, লবণাক্ততার পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া, শুষ্ক মৌসুমে বোরো ক্ষেতে সেচ প্রদান, হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের বর্জ্য দ্বারা নদ-নদীর পানি দূষণ, ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে মিষ্টি পানি আসার পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া, ভূ-গর্ভস্থ জলাধারের অভাবসহ সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এর মূল কারণ বলে ওই গবেষণা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফাইল ফটো
তাছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৭৯ শতাংশ নলকূপে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক। ওই জরিপে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, খুলনার ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, অপর দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, তালা, আশাশুনি, কালিগঞ্জ, দেবহাটা, বাগেরহাটের সদর, মংলা, শরণখোলা, রামপাল, মোড়লগঞ্জ, ও চিতলমারীর বিভিন্ন গ্রামের অধিবাসীরা এখনও মিঠা পানির আওতার বাইরে রয়েছেন। যে কারণে ওইসব অঞ্চলের মানুষদের দূর-দূরান্ত থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। এমন অবস্থা চলছে মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর।
পাইকগাছা উপজেলার জনস্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, গভীর নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রে সফলতা না পাওয়ার কারণে অগভীর নলকূপ, বৃষ্টির পানি, পুকুরের পানি ব্যবহার করে খাবার পানির সংকট মোকাবেলা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এলাকায় গভীর পানির নলকূপ বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু পানির স্তর অতিমাত্রায় নীচে নেমে যাওয়ায় সে উদ্যোগও সফল হয়নি।
ফাইল ফটো
এমন এক পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনসাধারণ মনে করেন, এ বিষয়ে সরকারকে অগভীর নলকূপ বসানোসহ জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে।