দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘চিলড্রেন অব ওয়্যার’ বা ‘যুদ্ধশিশু’।
ছবিটি গত সপ্তাহে ঢাকায় মুক্তি পেয়েছে। ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ এর যৌথ আয়োজনে ২ জুন বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘চলচ্চিত্রের রাজনীতি, চলচ্চিত্রের অর্থনীতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়া ‘যুদ্ধশিশু’নিয়ে প্রবল সমালোচনা করা হয়। ছবিটির মুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়।
আলোচনার কেন্দ্রে ছিল চলচ্চিত্রের নান্দনিক গুরুত্ব এবং এর পাশাপাশি চলচ্চিত্রের রাজনীতি ও চলচ্চিত্রের অর্থনৈতিক রাজনীতি। এই আয়োজনের মূল বিষয় ছিল ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘যুদ্ধশিশু’। যেহেতু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭১ ভারতীয় নির্মাতা মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রত নির্মিত হয়েছে এই চলচ্চিত্র সেই প্রেক্ষাপটে আলোচনা করা হয়।
এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন লেখক এবং অধ্যাপক ড. সলিমুলস্নাহ খান, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি চলচ্চিত্রকার শহিদুল ইসলাম খোকন, চলচ্চিত্র সমালোচক এবং অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, চলচ্চিত্র সমালোচক জাঈদ আজিজ, কবি শোয়েব সর্বনাম, চলচ্চিত্র গবেষক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী প্রমুখ।
চলচ্চিত্র গবেষক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী বলেছেন, ‘চলচ্চিত্রটিতে যুদ্ধশিশু ও বীরাঙ্গনার যে চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে- তাতে বীরাঙ্গনা কিংবা যুদ্ধশিশুর প্রতিফলন মোটেও ঠিকভাবে করা হয়নি। এই ছবির বীরাঙ্গনারা আমাদের জানা ইতিহাসের পরিধির বাইরে বানিয়ে তোলা ঘটনাবলি দেখানো হয়েছে। যা এই ছবির নির্মাতার উর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত বলেই মনে হচ্ছে।
চলচ্চিত্রকর্মী কামরুল হাসান কাইউম বলেন, চলচ্চিত্রটির নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, পুরো ছবিতে আমি ‘যুদ্ধশিশু’ খুঁজে বেরিয়েছি কিন্তু পাইনি, শেষে আবিষ্কার করলাম বাংলাদেশই এই ছবিতে আসলে ‘যুদ্ধশিশু’! যা পাকিস্তানের সৈন্যদের ধর্ষণের ফলে জন্ম নিয়েছে বলে নির্মাতা বুঝাতে চেয়েছেন!
লেখক ও অধ্যাপক ড. সলিমুলস্নাহ খান মেহেরজান বলেন, ‘এই ছবি পোনে তিন ঘণ্টা ধরে দেখাও একটি পরীক্ষা বটে! ছবিটির আগাগোড়া গল্পের সঙ্গে আমি মুক্তিযুদ্ধের চিহ্ন খুঁজে পাইনি। এ যেন কল্পলোকের এক মুক্তিযুদ্ধ!’ তিনি এই ছবির রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে উল্লেখ করে বলেন, ‘তাতে দিল্লির খুশি হওয়ার কারণ থাকতে পারে কিন্তু ঢাকার এতে কোনো ফায়দা নাই!’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী নিয়ে ভারতের ওই চলচ্চিত্রকার নির্মাণ করেন “বাস্টার্ড অব চাইল্ড” নাম দিয়ে এই ছবিটি। পরবর্তীতে ভারতীয় সেন্সর বোর্ডের আপত্তির মুখে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “চাইল্ড অব ও্য়্যার” বা “যুদ্ধশিশু”। ছবিটি ভারত ও বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে।