দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নদীমাতৃক বাংলাদেশ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসংখ্য মানুষ এখনো নৌকা যোগে হাট-বাজারে যাতায়াত করে থাকেন। তাদের কথা মাথায় রেখেই ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (UIU) সেন্টার ফর অ্যানার্জি রিসার্চ বিভাগ তৈরি করেছেন সৌর বিদ্যুতে চলতে সক্ষম নৌকা এবং আধুনিক ডিজিটাল রিকশা।
বাংলাদেশে সৌর যানবাহন এর ধারণা নতুন নয়, এর আগে সৌর বিদ্যুতের অটোরিকশা, বাস, বাইক, পাম্প তৈরি হলেও নৌকা এবারই প্রথম। নদীর উপর দিয়ে চলার সময় বোটে সব চেয়ে বেশি সূর্যালোক পড়ে। এই সূর্যালোক কাজে লাগানোর বিষয়ে প্রথম পরিকল্পনা করেন; ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (UIU) গবেষকরা। তারা বাংলাদেশের নদী কেন্দ্রিক এলাকা সমূহ যেমন নাটোরের লালপুর জেলায় পদ্মা নদীর পাড়ে প্রায় এক সপ্তাহ মাঝিদের ওপর জরিপ চালিয়ে এ ধরনের নৌকা তৈরির চিন্তা করেন।
এদিকে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের মাথায় সৌর বিদ্যুতের বিষয় যেমন এসেছে একই সাথে দেশের নদী সমূহে ডিজেল চালিত নৌকা এবং স্টিমারের কারণে যে দূষণ হচ্ছে তাও এসেছে। ফলে তারা সৌর বিদ্যুতের সাহায্যে চলবে এমন নৌকা ‘সোলার ফেরি বোট’ তৈরির এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তাদের চিন্তায় এসেছে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি, বাদ যায়নি খরচের চিন্তাও। এতসব বিষয় মাথায় রেখে তারা তৈরি করেছেন।
সোলার নৌকা তৈরির সাথে জড়িত একজন প্রকৌশলী মাহমুদ ইব্রাহিম বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের নৌকায় চলাচল করতে হয়। এছাড়া শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা থেকে তেল নিঃসৃত হয়ে পরিবেশ দূষণ করছে।
খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বোট চলবে সম্পূর্ণ সৌর শক্তিতে তাই মাঝির বাড়তি কোনও ডিজেল খরচ লাগবেনা। একবার চার্জ করতে সময় লাগবে ৬ ঘন্টা, চলবে ১২ ঘন্টা, চলতে চলতেও এটি চার্জ হতে পারবে। মূলত বোটের যাত্রী ছাউনিকেই সোলার প্যানেল হিসেবে কাজে লাগানো হয়েছে।
সাধারণ নৌকার মত দেখতে এই আধুনিক প্রযুক্তির বোটে রয়েছে ১২ জন মানুষ পরিবহণের সুবিধা, মাঝি চাইলে মালামাল পরিবহণ করতে পারেন।
১২ ভোল্টের চারটি ব্যাটারি চার্জের জন্য ২৫০ ওয়াটের দু’টি সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে। যা যাত্রীদের ছাউনি হিসেবেও কাজ করবে। ব্রাশলেস ডিসি মোটরের এ বোট কোনোভাবেই শ্যালো ইঞ্জিনের চেয়ে কম গতিতে চলবে না বলেও দাবি করেন ইব্রাহিম। আর মোটরের সামনে লাগানো হাতল দিয়ে দিক নির্দেশনা করবেন মাঝি। এই বোট তৈরিতে উদ্ভাবকদের খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা, তবে বাণিজ্যিক উৎপাদনে খরচ আরও কমে আসবে বলেই উদ্ভাবকরা জানিয়েছেন।
এদিকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবকরা তৈরি করেছেন আধুনিক ডিজিটাল সৌর বিদ্যুতে চলে এমন রিকশা। বর্তমানে মোটর চালিত রিকশা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ এবং এতে বিদ্যুৎ ব্যয় বেশি হওয়াতে এসব বাহন থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তবে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ বিভাগের তৈরি ডিজিটালাইজড রিকশাটিতে সোলার প্যানেল এবং ব্যাটারিকে সংযুক্ত করায় এবং একটি মাইক্রো কন্ট্রোলার চালিত হয়ায় অনেক বেশি নিরাপদ।
এতে থাকা মাইক্রো কন্ট্রোলার ব্যাটারি কী পরিমাণ চার্জ হবে এবং কখন হবে তা নিয়ন্ত্রণ করবে। আবাসিক ব্যবহারের জন্য সোলার প্যানেল ২৩ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে দক্ষিণমুখী রাখা হয়। রিকশায় সোজা করে রাখায় ২০০ ওয়াটের সোলার প্যানেলটি যাত্রী এবং চালকের মাথায় ছাদ হিসেবেও কাজ করবে। ৪৮ ভোল্টের চারটি ব্যাটারি একবার পুরোপুরি চার্জ করলে টানা ছয় ঘণ্টা চলতে সক্ষম হবে এই ডিজিটাল রিকশা।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চার দিনব্যাপী শুরু হওয়া ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৪’ মেলায় এই নৌকা উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মেলার উদ্বোধন করেছিলেন ৪ জুন।