দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বকাপের শুরু থেকে এ যাবত কাল অনেক অঘটন ঘটেছে। এবারও হয়তো আমাদের এমন কিছু অঘটনের মুখোমুখি হতে হবে।
বিশ্বকাপে যে প্রত্যেক দল প্রতিবারই আশানুরূপ ভাল করবে তা কিন্তু নয়। অনেক প্রতিষ্ঠিত ভালো দলকেও অপ্রত্যাশিত পারফরম্যান্স নিয়েও বিদায় নিতে হয় অনেক সময়। এবারও ঘটেছে এমন ঘটনা শনিবার রাতে উরুগুয়ে-কোস্টারিকার ম্যাচটিতে যা কেও ভাবেনি তাই ঘটেছে। কোস্টারিকার কাছে ৩-১ গোলে দু্’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে হারটাও ছিল তেমনই একটি অঘটনের খবর।
বিশ্বকাপ ফুটবলে হতাশাজনক পারফরম্যান্স নিয়েই দি ঢাকা টাইমস্-এর আজকের এই আয়োজন:
কোস্টারিকা ৩-১ উরুগুয়ে (২০১৪*)
এবারের বিশ্বকাপে উরুগুয়েকে হয়তো অনেকেই ফেভারিট ভেবেছেন। কিন্তু শনিবার রাতে প্রথম ম্যাচেই এই ধারণা পাল্টে দিলো কোস্টারিকা। দু্’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দিয়ে এবারের বিশ্বকাপের শুরুতেই বড় ধরনের অঘটনের জন্ম সৃষ্টি করলো মধ্য আমেরিকার এই দেশটি। কোস্টারিকার ৩টি গোলের বিপরীতে ভাগ্যক্রমে পাওয়া পেনাল্টি থেকে একটি গোল দিয়েছেন উরুগুয়ের ফরোয়ার্ড এডিনসন কাভানি। শনিবারের এই হারের কারণে ‘ডি’ গ্রুপের দল উরুগুয়ের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেননা এই গ্রুপটিতে ইতালি ও ইংল্যান্ডের মতো বাঘা বাঘা আরও দল রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া ২-১ ইতালি (২০০২)
দক্ষিণ কোরিয়া এর আগে কোনো বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব উতরাতে না পারলেও ২০০২ সালে ঘটে আরেক অঘটন। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নক আউট পর্ব খেলেছে ওই বিশ্বকাপের সহ-স্বাগতিকরা। নক আউট পর্বে ৩ বারের চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ২-১ গোলে হারিয়ে আরেক অঘটনের জন্ম সেদিন দিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া।
দক্ষিণ কোরিয়া ৫-৩ স্পেন (২০০২)
২০০২ সালেই আরেক অঘটন। এক আসরেই রীতিমত দু্’টি চমক দেখায় দক্ষিণ কোরিয়া। শেষ ১৬’র রাউন্ডে ইতালিকে বিদায় করে কোয়ার্টার ফাইনালেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখে দক্ষিণ কোরিয়া। নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশূন্য ড্র হলেও পেনাল্টিতে স্পেনকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে ১ম বারের মতো সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে এশিয়ান ফুটবলের প্রতিনিধিরা। অপ্রত্যাশিত এই হারের ফলে বিদায় নিতে হয় ওই আসর থেকে স্পেনকে।
সেনেগাল ১-০ ফ্রান্স (২০০২)
২০০২ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসেই পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটি দারুণ এক চমক দেখায় দক্ষিণ কোরিয়া। জাপান বিশ্বকাপে উদ্বোধনী ম্যাচেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে দেয় তারা! ওই খেলার ৩০ মিনিটে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন সেন্টারব্যাক পাপা বুবা দিয়োপ। প্রথম ম্যাচেই হেরে মনোবল হারিয়ে ফেলে ফ্রান্স। গ্রুপ পর্বের তলানি থেকেই সেবার বিদায় নিতে ফ্রান্সকে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো বিশ্বকাপের ওই আসরে কোনো গোলও করতে পারেনি তারা।
বুলগেরিয়া ২-১ জার্মানি (১৯৯৪)
১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে এই অঘটনের শিকার হয় জার্মানি। আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে বুলগেরিয়ার মতো একটি দলের কাছে ২-১ গোলে হেরে মারাত্মক হতাশার মধ্যে পড়ে জার্মানি। প্রথমবারের মতো সেমিফাইনাল খেলে বুলগেরিয়া। আর হেরে কোয়ার্টার ফাইনালেই থেমে যায় জার্মানি।
ক্যামেরুন ১-০ আর্জেন্টিনা (১৯৯০)
১৯৯০ সালের আরেক অঘটন। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা মুখোমুখি মধ্য আফ্রিকান দেশ ক্যামেরুনের সঙ্গে। মিলানের সানসিরোর ওই ম্যাচে ১-০ গোলে চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দারুণ এক চমক উপহার দিয়েছিল ক্যামেরুন! তাও আবার সেই ম্যাচটিতে ছিলেন ফুটবলের যাদুকর ম্যারাডোনা। সে কারণে লজ্জার মাত্রাটা একটু বেশিই ছিল আর্জেন্টিনা ভক্তদের। ইতালিতে আয়োজিত ওই বিশ্বকাপ আসরে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নক আউট পর্ব খেলে ক্যামেরুন। অবশ্য কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ৩-২ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয় ক্যামেরুনকে। ওই বিশ্বকাপে রানার্স আপ হয় আর্জেন্টিনা।
আলজেরিয়া ২-১ পশ্চিম জার্মানি (১৯৮২)
১৯৮২ বিশ্বকাপে রানার্স-আপ হয়েছিল পশ্চিম জার্মানি। তারা ফাইনালে ৩-১ গোলে হেরেছিল। অথচ গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচেই আলজেরিয়ার মতো একটি দলের কাছে ২-১ গোলে হেরে মারাত্মক এক হতাশার জন্ম দিয়েছিল পশ্চিম জার্মানি। অথচ এর আগের কোনো বিশ্বকাপে আফ্রিকান দেশ ইউরোপীয়ান কোনো দেশকে হারাতেই পারেনি। গ্রুপের ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের খেতাব নিয়েই সেবার নক-আউট পর্ব খেলে পশ্চিম জার্মানি।
উত্তর কোরিয়া ১-০ ইতালি (১৯৬৬)
১৯৬৬ সালের ইংল্যান্ডে আয়োজিত আসরে গ্রুপ পর্বে নিজেদের তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচে উত্তর কোরিয়ার কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় ইতালি। ওই হারে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় তাদের। ওই ম্যাচে উত্তর কোরিয়ার একমাত্র জয়সূচক গোল করেন পাক ডু ইক।
উরুগুয়ে ২-১ ব্রাজিল (১৯৫০)
১৯৫০ সালের কথা। রেকর্ড দুই লাখ সমর্থক উপস্থিত ছিল মারাকানা স্টেডিয়ামে। সেবার ফাইনালে স্বাগতিক ব্রাজিলের মুখোমুখি উরুগুয়ে। ব্রাজিল শিরোপা জিতবে- সেটি প্রায় চোখবুজে ধরে নিয়েছিল সবাই। খেলার প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ব্রাজিল। কিন্তু ‘কপালে আছে হাড় কি করবে চাচা খাজেনদার’ খেলার দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ায় উরুগুয়ে। ওই খেলার ৬৬ মিনিটে শিয়াফিনোর গোলে সমতা ফেরায় উরুগুয়ে। আর অঘটনটি ঘটলো ম্যাচ শেষ হওয়ার ১১ মিনিট আগে উরুগুয়ের অ্যালচিদেস ঘিগিয়া গোল করে বসলো। স্বাগতিক দেশে এমন অঘটন! পিন পতন নীরবতা নেমে আসে মারাকানায়। বলতে গেলে ব্রাজিলকে হতবাক করে দিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় উরুগুয়ে!
যুক্তরাষ্ট্র ১-০ ইংল্যান্ড (১৯৫০)
১৯৫০ সালের কাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই বিশ্বকাপটি ছিল প্রথম। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ওই আসরেই প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ইংল্যান্ড। প্রথম আসরে অবশ্য বেশ ভাল খেলেছিল তারা। প্রথম ম্যাচে চিলিকে হারিয়ে টুর্নামেন্টে শুভ সূচনা করে ইংল্যান্ড। জয়ের প্রত্যাশা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেও। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ওই ম্যাচে ১-০ গোলে হেরে হতাশার জন্ম দিয়েছিল ইংলিশরা।