দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রাইমার্কের পোশাকের লেবেলে হাতে সেলাই করে হাতে লেখা শ্রমিকদের করুণ আঁকুতি সাড়া ফেলেছে বিশ্বমিডিয়ায়। বিশ্বের উল্লেখযোগ্য গণমাধ্যমে এই ঘটনাকে ফলাও করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গত বৃহস্পতিবারের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সর্বাধিক পঠিত প্রতিবেদনের মধ্যে ছিল এই বিষয়টি।
এই পর্যন্ত তিনজন নারী তাদের কেনা গরমের পোশাকের লেবেলে পেয়েছেন হৃদয়স্পর্শী এই সব লেখা। তিন নারীর একজন সোয়ানসি, জোনস ও আরেকজন নর্দান আয়ারল্যান্ডের কারেন উইন্সিংকা। ২৫ বছর বয়সী সোয়ানসি রেবেকা তার পোশাক ধোলাইয়ের সময় লেবেলে হাতে সেলাই করে ‘ফোর্সড টু ওয়ার্ক এক্সটিং আওয়ারস’ লেখা দেখতে পান। এই লেখাটি তাকে নাড়া দেয় প্রবলভাবে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রাইমার্ককে বিষয়টি জানান। তবে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারে নি। এই খবর প্রকাশের পর জোনস নামে ২১ বছর বয়সী আরেক তরুণী জানান তিনি তার পোশাকের লেবেলে পেয়েছেন একইরকম একটি লেখা দেখতে পেয়েছেন যা ছিল ‘ডিগ্রেডিং সুয়েটশপ কন্ডিশনস’। উল্লেখ্য যে, এই দুই নারী একে অন্যকে না চিনলেও প্রাইমার্কের শোরুম থেকে ১০ পাউন্ড দিয়ে তাদের পোশাক কেনেন। পোশাক শ্রমিকদের প্রতিকূল পরিবেশে বেশি সময় খাটিয়ে কম মজুরি দিয়ে কাজ করানোর বিরুদ্ধে এটাকে বড় প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন এই সকল পোশাকের ক্রেতারা।
জোনস বলেন, আমি সত্যিই খুব ব্যথিত হয়েছিলাম যখন লেবেল থেকে জানলাম বিরুদ্ধ পরিবেশে শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। আমি প্রাইমার্ক থেকে অনেক পোশাক কিনি, কিন্তু এখন থেকে আর না। এই লেবেল আমাকে চিন্তা করতে শিখিয়েছে আমাদের প্রিয় এসব পোশাক কত কষ্টে তৈরি হয়। জোনস তার পোশাকটির একটি ছবি তুলে টুইটারে টুইট করেন। টুইটারে তিনি লিখেন, এটা পরার পর আমার তখন মনে হচ্ছিল আমি যেন মারা যাচ্ছি। কিন্তু পরে জানলাম প্রাইমার্কের আরও পোশাকে এই লেবেল পাওয়া গেছে। অপরদিকে নর্দান আয়ারল্যান্ডের আরেক ক্রেতা কারেন উইসিংসকা বেলফাস্ট থেকে কেনা তার দু’টি ট্রাউজারের লেবেলে একই ধরনের লেবেল পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। তবে প্রাইমার্ক এর এই ট্রাউজারটি তৈরি হয়েছে চীনের কারাগারের শ্রমিকদের মাধ্যমে।
কিন্তু এতকিছুর পর প্রাইমার্কের একজন মুখপাত্র এ ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও অদ্ভুত’ বলে মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে তদন্তের জন্য তিনি ক্রেতাদের তাদের পোশাক ফিরিয়ে দিতে বলেন। তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করছি কীভাবে অরিজিনাল লেবেলের সঙ্গে বাড়তি এই লেবেল যুক্ত হলো। মূল বিষয়টি আমাদের জানা দরকার। এই ট্রাউজারগুলো সবশেষ ২০০৯ সালে অর্ডার দেওয়া হয় এবং বিক্রি শেষ হয় একই বছরের অক্টোবর মাসে।
এখানে উল্লেখ্য যে, প্রাইমার্কের পোশাকের অন্যতম উৎস বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের রানা প্লাজা ধসের পর সেখানে অবস্থিত গার্মেন্টসগুলোতে তাদের পোশাকের লেবেল পাওয়া যায় যা সারাবিশ্ববাসীকে ব্যথিত করে। কোম্পানিটি সম্প্রতি ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও মৃতদের পরিবারে সদস্যদের সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ গার্ডিয়ান