দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রমজান এলেই নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ আক্রমণ করতে থাকে। পায়ে ব্যাথা, পেট ব্যাথা, গ্যাস্টিকের সমস্যা এমন নানা সমস্যা এসে হাজির হয়। আসলে একটু সমস্যা হলেও সেগুলো রমজান থেকে দূরে থাকার জন্য অনেক সময় বড় হয়ে দেখা দেয়।
কথাগুলো শুনতে আসলে অনেকেরই ভালো নাও লাগতে পারে। কারণ রমজান এলে অসুস্থ্য মানুষের সংখ্যা এমনিতেই বেড়ে যায়। যাদের গ্যাস্টিক রয়েছে তারা সারাবছর ঠিকই চলছেন। কিন্তু রমজান এলে মনে হবে তিনি আর নেই! রমজানের রোজা বিশেষ করে যাদের রোজা রাখার অভ্যাস নেই তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়। আর যদি সত্যিকারভাবে এমনটি হয়ে থাকে তাহলে তার চিকিৎসা রয়েছে। তারজন্য রোজা থেকে বিরত থাকার কোনই দরকার পড়ে না। তাহলে আসুন এসব সমস্যার মধ্যে কিভাবে আপনি রোজা রাখতে পারবেন তা জেনে নেওয়া যাক।
যাদের পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আছে অথবা যারা বুক জ্বালাপোড়ায় ভুগছেন, তারা কি রোজা রাখতে পারবেন না? দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার করণে কি পেপটিক আলসারজনিত জটিলতা বেড়ে যেতে পারে? এ প্রশ্ন অনেকের। বিশেষ করে যারা কখনও রোজা ভাংতে চান না তাদের।
সাধারণত অভুক্ত অবস্থায় পাকস্থলীতে অ্যাসিড ও পেপটিক রস কম নিঃসৃত হয়ে থাকে। তবে খাবারের গন্ধ বা খাদ্যচিন্তা এগুলোর নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। রমজান মাসে রোজা রাখার কারণে খাদ্য গ্রহণের সময়সূচির আকস্মিক কিছু পরিবর্তন, ঘুমের ব্যাঘাত, পানি না খাওয়া এবং অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত ভাজা-পোড়া খাবারের কারণে আপনার বুক জ্বালাপোড়া বাড়িয়ে দিতে পারে এবং এটাই স্বাভাবিক। তবে বাড়তি সচেতনতা থাকলে এই সমস্যা থেকেই নিষ্কৃতি পেয়ে রোজা স্বাভাবিকভাবেই রাখা সম্ভব।
# যারা ধূমপান করেন বা অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাদের এসব পরিত্যাগ করার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়।
# আঁশযুক্ত শর্করা খাবার যেমন লাল গমের আটা, ঢেঁকিছাঁটা চাল, শাকসবজি খান, তবে সঙ্গে প্রচুর পানি খান এতে অনেক উপকার পাবেন। যদিও লাল আটা পেলেও ঢেঁকিছাঁটা চাল পাওয়া কঠিন।
# চিড়া, দই, ছোলা, আলু এ জাতীয় খাবার বেশ উপকারী। এগুলো খাওয়ার চেষ্টা করুন।
# ডুবো তেলে ভাজা যেকোনো খাবার আপনার বিপদ ডেকে আনতে পারে।
# চর্বিবিহীন মাংস খুব উপকারী। তাই চর্বিযুক্ত মাংস বর্জন করুন।
# ইফতার ও সেহরিতে পেঁয়াজু বেগুনির মতো তেলের জিনিস না খেয়ে ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে কলা ও খেজুর অত্যন্ত উপকারী ফল এগুলো খাওয়ার চেষ্টা করুন। তবে ফলের রস যতো কম খাওয়া যায় ততই ভালো। কারণ এতে বুক জ্বালাপোড়া বাড়িয়ে দিতে পারে।
# পানিশূন্যতা এড়াতে ইফতার থেকে রাতে শোয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অন্তত ১০ থেকে ১৫ গ্লাস ও সেহরিতে ২/৩ গ্লাস পানি পান করুন। এরসঙ্গে বিভিন্ন শরবতও খেতে পারেন। চা-কফি প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। সে কারণে চা কফি কম পান করুন।
# যে কোনো খাবার একসঙ্গে বেশি না খাবার চেষ্টা করুন। সেহরির পরিমাণ হতে হবে আপনার দুপুরের খাবারের পরিমাণ। আর রাতের খাবারের পরিমাণ একই রকম থাকলে কোনো অসুবিধা নেই। ইফতার বা সেহরি খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন না। ঘরের মধ্যেই কিছুটা হাটাহাটি করে তারপর শুবেন। তাছাড়া ইফতার বা সেহরি খাওয়ার পর ব্যায়াম করা যাবে না।
# আগে থেকেই যারা পেপটিক আলসারে ভুগছেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা অব্যাহত রাখুন। সেহরিতে অবশ্যই অ্যান্টি-আলসার ওষুধ খেতে হবে।
ইউনাইটেড হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. নাজমুল কবীর কোরেশী ওপরের নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে বুক জ্বালাপোড়া ও আলসার নিয়ন্ত্রণে রেখে নির্বিঘ্নে রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ নিজে নিয়ন্ত্রণ করলে মহান রাব্বুল আলামিন খুশি হয়ে তাঁকে এই রহমতের মাসে বঞ্চিত করবেন না। সৎ ইচ্ছা থাকলে ইনশাহআল্লাহ সুস্থ্য জীবন যাপন করতে পারবেন।