দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের দেশের গ্রাম বাংলায় কিছু রুপকথা প্রচলিত রয়েছে যে পেত্নীরা রাতের বেলা পুকুর ধারে বসে মাছ খায় অথবা ঘুমের মধ্যে বোবায় ধরে। একমাত্র আমাদের দেশ নয় বরং বিভিন্ন দেশেই এমন অপার্থিব চরিত্রের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রয়েছে অনেকের। এমনই অনেক দেশের রূপকথায় উঠে আসে এমন সব চরিত্র, যারা আসলেই কল্পনা নাকি বাস্তব তা নিয়ে এখনো রয়ে গেছে সন্দেহ।
১) লক নেস মনস্টার (স্কটল্যান্ড)
স্কটল্যান্ডে এই প্রাণীটির কথা প্রথম শোনা যায় ষষ্ঠ শতাব্দীর দিকে। একজন আইরিশ মিশনারী গুরুতর আহত এক ব্যক্তিকে খুঁজে পান। আহত সেই ব্যক্তিটি কিছুদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মারা যান। মারা যাবার পুর্বে তিনি মিশনারীকে বলেন যে, লেকের ভেতর থাকা একটি বিশালাকার লক বা সর্প তাকে আহত করেছে। সেই থেকে এই অজানা দানবের নাম হয় লক নেস মনস্টার। তারপর কেটে যায় প্রায় ১৪০০ বছর এই লক নেস মনস্টার নিয়ে আর কথা উঠেনি। কিন্তু ১৯৩০ সালে আবারো এর ব্যাপারে মানুষ কৌতূহলী হয়ে ওঠে যখন এক দম্পতি দাবি করে তারা একে দেখেছে। স্থানীয়রা একে “নেসি” বলে ডাকে। এর একটা ছবি তোলা হয় ১৯৩৪ সালে, কিন্তু তা পরে ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। ১৯৬৯ সালে সাবমেরিন দিয়ে খোঁজা হয় লক নেস লেকের তলদেশ কিন্তু কিছুই পাওয়া যায়নি।
২) চুপাকাবরা (পুয়ের্তো রিকো)
চুপাকাবরার আক্ষরিক অর্থ হলো ছাগলের রক্তচোষা। ১৯৯৫ সালে প্রথম মেক্সিকোর পুয়ের্তো রিকোতে এর ব্যাপারে জানা যায়। এখানে আটটি ছাগলকে পাওয়া যায় মৃত এবং একেবারে রক্তশূন্য অবস্থায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, মেইন, মিনেসোটা, মিসিসিপি এমনকি বোর্নিও এবং ভিয়েতনামে এর ব্যাপারে জানা যায়। ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা বলেন যে, নাসা বিভিন্ন মিশনে মানুষের বদলে হাইব্রিড প্রানী তৈরি করে মহাকাশে পাঠিয়ে পরীক্ষা করেন এগুলো টিকে থাকতে পারে কিনা। পরে এগুলো মহাকাশে না পাঠালে বিভিন্ন দেশের গভীর জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রথমে এর ব্যাপারে বলা হতো এ এমন একটি জন্তু যা মানুষের মতো হেঁটে বেড়ায়। কিন্তু এখন একে ধরা হয় চারপেয়ে জন্তু হিসেবে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন এগুলো আসলে মরুর কয়োটি নামের এক ধরণের প্রাণী যারা এক ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়ে সারা শরীরের লোম হারিয়েছে।
৩) পোপো বাওয়া (তানজানিয়া)
সোয়াহিলি ভাষায় পোপো বাওয়া মানে হলো বাদুরের পাখা। বলা হয়, পোপো বাওয়া রাতের বেলায় বাদুড় থেকে রূপান্তরিত হয় মানুষে এবং ঘুমন্ত মানুষের ওপরে হামলা করে। আমাদের দেশে একে বোবায় ধরা বলে। ধারণা করা হতো পোপো বাওয়া শুধুমাত্র ঘরের ভেতরে নিরাপদে থাকা মানুষকে হামলা করে। এ বিশ্বাসে ভর করে অনেক মানুষ পোপো বাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে ঘরের বাইরে ঘুমানো শুরু করে। গবেষকদের মতে, পোপো বাওয়া বলে আসলে কিছু নেই। ঘুমের মধ্যে ঘাড়ের অস্বাভাবিক অবস্থানের কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন চলাচল বিঘ্নিত হয় তখন ঘুমন্ত ব্যক্তি এমন ধরনের অদ্ভুত কিছু দেখে থাকেন।
৫) ফেইরি (ইউরোপ)
পরী বা ফেইরিদের ব্যাপারে ইউরোপীয়দের বিশ্বাস অনেক প্রবল। তারা বিশ্বাস করে ফেইরিদের বিরক্ত করলে তারা অভিশাপ দেবে এবং অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আরব্য রজনী থেকে শুরু হয় এই ফেইরি বা পরীর গল্প কথা। ৮ম শতাব্দীর বাগদাদে রচিত হয় এই আরব্য রজনী, পরে নানা হাত ঘুরে তা গিয়ে পৌছে ইউরোপে। তখন থেকে শুরু হয় ফেইরি টেলের রুপকথা। ১৯১৭ সালে দুই আত্মীয়া এলসি রাইট এবং ফ্রান্সেস গ্রিফিথ দাবি করে তারা ফেইরিদের ছবি তুলে ফেলেছে। পরে তারা নিজেরাই স্বীকার করে যে পাঁচটি ছবির মাঝ চারটি নকল, কিন্তু পাঁচ নম্বর ছবিটি আসলেই পরীর ছবি।
৬) মোকোলে বেম্বে (কঙ্গো)
সরোপড ডায়নোসরের মতো দেখতে এই প্রাণীর ব্যাপারে অনেক গুজব শোনা যায়। এখন পর্যন্ত এই প্রাণীর ব্যাপারে জানার জন্য ৫০ এরও বেশি অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু কোনটাতেই কিছু পাওয়া যায়নি। তবে একে যে অঞ্চলে দেখা যায়, সেই কঙ্গোর লিকুয়ালা এলাকার প্রায় ৮০ শতাংশই এখনো মানুষের জানার বাইরে রয়ে গেছে। তাই বাস্তবে এই জন্তুর অস্তিত্ব থাকতেও পারে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইউরোপীয় বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিকরা বিকল্প পথে ভারত মহাসাগরের আসতে গিয়ে কঙ্গোর লিকুলিয়া নদীটি বেঁছে নেন। পরবর্তীতে অনেকে এই পথে আসতে গিয়ে ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে এই বিকল্প বাণিজ্যিক পথটি বাতিল করা হয়। ভয়ানক পরিস্থিতির শিকার এই সকল জাহাজের মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে মোকোলে বেম্বের কথা।