দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মালয়েশীয়ায় চাকুরিতে যেয়ে যেমন নানাভাবে নাজেহাল হতে হয় এবার বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরাও পার্টটাইম জব করতে গিয়ে পড়েছেন তেমনই বিপাকে। নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এসব শিক্ষার্থীরা।
জনৈক বাংলাদেশী ছাত্র পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে একটি স্থানীয় এডুকেশন কনসালটেন্টের মাধ্যমে তিনি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আসেন। ওই এডুকেশন কনসালটেন্টরা কথা দিয়েছিল যে, মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করে ভালো আয়ও করা যাবে। তার মা-বাবা জমি বিক্রি করে এবং ঋণ করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। হয়তো সবই ঠিক আছে, পার্ট টাইম জবও করছেন তিনি। কিন্তু এতে যে আয় হয়, তা দিয়ে পড়া-লেখার খরচ বহন করে নিজের থাকা খাওয়া বাদ দিয়ে খুব অল্প টাকা বাঁচে।
ওই ছাত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, এদিকে কাজ করেও আরাম নেই, কাজের পর পড়াশোনা করার সময় পাওয়া যায় না। ক্লান্তিতে মাথা ঘুরায়। কাজের চাপে প্রথম সেমিস্টারের ফলাফলও ভালো হয়নি তার। আবার কাজ ছাড়াও কোনো গতি নেই। দেশে মা-বাবার কাছে কষ্টের কথা মুখ ফুটে বলতেও পারছেন না কিছু।
মা-বাবা তাদের অনেক কষ্টের টাকা ব্যয় করে জীবন বদলের আশায় তাকে এখানে পাঠিয়েছেন। বাড়িতে বাবা-মা জানেন ছেলে তাদের বেশ ভালো এবং শান্তিতেই আছে। তারা জানেন ছেলে চাকরিও করছে আবার পড়া-লেখাও করছেন। শুধু ওই ছাত্রই নয়, তার মতো অনেকে এভাবেই জীবন-যাপন করছেন মালয়েশীয়ায়।
মালয়েশীয়ায় গিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা বেশি সমস্যায় পড়েন। কারণ মালয়েশীয়ায় লেখাপড়া করার সময় কোনো রকম ফুলটাইম চাকরি নেই। পার্ট টাইম চাকরি শুধুমাত্র এখানকার রেস্টুরেন্ট কিংবা শপিং মলের দোকানে। আবার পার্ট টাইম চাকরির কথা বললেও, প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার নিচে কেও কাজ দিতে চায় না। আর তাই পার্টটাইমের নামে ফুলটাইম চাকরি করতে হয়। তবে বেতন প্রতি ঘণ্টা হিসেবে। ঘণ্টায় বেতন পড়ে ৫-৭ রিঙ্গিত (১ রিঙ্গিত = ২৪ টাকা)। সেই হিসাবে মাসে আয় হয়ে থাকে ১২০০ থেকে ১৫০০ রিঙ্গিত। থাকা, খাওয়া ও যাতায়াত খরচ হয় প্রায় মাসিক ৫০০ থেকে ৭০০ রিঙ্গিত।
এরপর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ। প্রতিমাসে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ রিঙ্গিত। হাতে অনেক কম অর্থ থাকে তাদের। অনেকে শিক্ষার্থীই কাজের চাপে আর লেখাপড়া করতে পারে না। ক্লাসে যাওয়াও আর তাদের হয়ে ওঠে না।
জানা যায়, শুধুমাত্র ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং দক্ষদের চাকরিতে সুযোগ বেশি। তাদের বেতনও অনেক বেশি যে কারণে চাকরি করেও তখন লেখা-পড়া করা এবং দেশে টাকাও পাঠানো সম্ভব হয়। তাছাড়াও আরেকটি রয়েছে ব্যবসায়। যাদের সামর্থ আছে বা আত্মীয় স্বজন আছেন তারা সেখানে ব্যবসা বাণিজ্য করে এগিয়ে গেছেনে অনেক। কিন্তু এসব সাধারণ বা মধ্যবিত্তদের অবস্থা বড়ই করুণ। এমন করুন অবস্থার কথা তারা তাদের ফ্যামিলিদেরও জানতে দিতে চান না। আর তাই তারা পরিচয় গোপন রাখেন বক্তব্য দিতে।
তবে এসব বিড়াম্বনার শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, বাংলাদেশের আর কোনো শিক্ষার্থী যেনো এভাবে পার্টটাইম চাকরির আশায় জমি-জমা বিক্রি করে পয়সা খরচ করে মালয়েশীয়ায় পাড়ি না জমান। কারণ তাতে লাভের লাভ কিছুই হবে না, যে স্বপ্ন নিয়ে মালয়েশীয়ায় আসবেন- তাতে শুধুই স্বপ্নভঙ্গ হবে।