দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কথা অনেকরই মনে আছে। উগ্র হিন্দুরা ভারতের বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছিল। ২১ বছর ধরে রোজা রেখে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদ করছেন ভারতের এক হিন্দু!
সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, ৭১ বছর বয়সী কলকাতার এক হিন্দু বাসিন্দা গত ২১ বছর ধরে রমজান মাসে রোজা রেখে চলেছেন। কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে এটা তার ব্যক্তিগত এক প্রতিবাদ। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষ হিসেবে তিনি এটিকে লজ্জা প্রকাশ হিসেবে দেখছেন। কলকাতার ওই ব্যক্তির নাম সঞ্জয় মিত্র।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে বলা হয়, সঞ্জয় মিত্র এমন এক পরিবারের সন্তান- যার বাড়িতে ১২৫ বছর ধরে দূর্গাপূজা হয়ে আসছে। তিনি বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের একগুয়েমি হিসেবেই দেখেন।
সঞ্জয় মিত্র সংবাদ মাধ্যমকে রোজা রাখা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমি বেশিরভাগ সময়ই বাড়িতে ইফতার করি। তবে মাঝে মধ্যে বাড়ির বাইরে দোকানে গিয়েও ইফতার করি।’
সঞ্জয় মিত্র আরও বলেন, ‘আমি কখনও বাড়িতে ফল বা রুটি খেয়ে, আবার কখনও হালিম খেয়ে গত ২১ বছর ধরে ইফতার করে আসছি।’
সঞ্জয় মিত্র বলেন, ‘অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে প্রতিবাদ হিসেবেই আমি রমজান মাসে রোজা রাখতে শুরু করি।’
সঞ্জয় মিত্র আরও বলেন, ‘বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ঘটে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। আমি তখন দিল্লিতে থাকতাম। উত্তর ভারতেও ওই ঘটনার পরে অনেক বেশি দাঙ্গা হয়েছিল। সে সময়ে হিন্দু হিসেবে নিজকে খুব অসহায় লাগছিল। একজন সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষ হয়ে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না এমন ঘটনা। আমি তখনই ঠিক করি, আমি এককভাবেই এর প্রতিবাদ করবো।’
সঞ্জয় মিত্রের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু নঈমুদ্দিন বলেছেন, ‘প্রথম যখন শুনি, সঞ্জয় মিত্র রোজা রাখে, তখন শুনে খুব ভালো লেগেছিল। সে একজন মুসলমানের মতই রোজা রাখে। এমনতো কোনো কথা নেই যে, রোজা শুধু মুসলমানরাই রাখতে পারবে। রোজা ইচ্ছে করলে সবাই রাখতে পারে।’
সঞ্জয় মিত্র নিয়মিত ধর্মাচরণ করেন না। তবে মুসলমানদের ধর্মাচরণের অঙ্গ রোজা রাখা নিয়ে তার স্ত্রীও প্রশ্ন তুলেছিলেন। আর তাই গ্রাম বাংলায় চৈত্র মাসের গাজনের সময় আরও এক মাস উপোস করেন সঞ্জয় মিত্র।
নিয়মিত ধর্মাচরণ করেন না বলেই তিনি যেমন মন্দিরে যান না, ঠিক তেমনই রমজান মাসে পাঁচ বার নামাজও পড়েন না। একসময়ের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য আর মানবাধিকার কর্মী ছিলেন সঞ্জয় মিত্র।