দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একটি শিশুর মোটা হাতের খবর আমরা আগেও দেখেছি। কিন্তু এবার এক নারীর হাতের কথা বলবো। তার ২ হাতের ওজন ৪২ পাউন্ড।
চিকিৎসকরা মনে করছেন, ৪২ পাউন্ড ওজনের এই ২ হাতের ব্যক্তিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাতের অধিকারী। ওই নারী হাত আকারে এতোটাই বিশাল যে একেকটি হাতের ওজন সাড়ে ৯ কেজি অর্থাৎ ২১ পাউন্ড। তার দুটি হাতের মোট ওজন ৪২ পাউন্ড। আর এই হাত দুটো নাড়াতে ভীষণ কষ্টও করতে হয় তাকে।
৫৯ বছর বয়সী দুয়াংজেই সামাকসামাম নামের ওই নারী বসবাস করেন থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশে। দুয়াংজেই সামাকসামাম হাতের এমন অবস্থাতেও পারিবারিক মুদি দোকানটির দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। এমন বিশাল হাত দুটো দিয়েই তিনি দোকান চালাচ্ছেন। আবার নিজের ও ঘরের কাজও করছেন। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘ম্যাক্রোডিস্ট্রফিয়া লিপোমাসটোসা’ নামে একটি অসুখে ভুগে ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক জীবন অতিবাহন করছেন দুয়াংজেই। এক বিরল সমস্যা এটি। ক্রমেই তার হাতে ব্যাপক হারে চর্বি সঞ্চিত হতে থাকে। হাত দুটো স্থায়ীভাবে ফুলে গেছে। কোন চিকিৎসা বা সার্জারিতে কোন কাজ হচ্ছে না। তার হাত দুটো কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক। এই খবরটি দিয়েছে মিরর অনলাইন।
দুয়াংজেই সামাকসামাম জানিয়েছেন, হাত নাড়ানো, আবার সবচেয়ে সহজ কাজগুলো যেমন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়া, চুল আঁচড়ানো এবং কাপড়-চোপড় পরার জন্য তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। এক কথায় বলতে গেলে, দৈনন্দিন প্রায় সব কাজেই তাকে মুখোমুখি হতে হয় নির্মম এক সত্যের। নিজের হাতের এমন গঠন প্রথমদিকে একেবারেই মেনে নিতে পারেননি দুয়াংজেই। হাতের এ অবস্থা দুয়াংজেইকে খুব বিব্রত করতো। লজ্জিত বোধ করতেন দুয়াংজেই। এ কারণে জীবনের প্রথম ২০টি বছর নিঃসঙ্গভাবে জীবন কাটিয়েছেন। স্কুলে পর্যন্ত যাননি দুয়াংজেই। কিন্তু, এখন বয়স্ক পিতামাতার জন্য তিনি বাধ্য হয়েই ঘর হতে বের হয়েছেন। জীবিকা অর্জনের তাগিদে নিজেকে আর লুকিয়ে রাখতে পারেননি তিনি। তার পরিবারের মুদি দোকানের পুরো দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন।
বিশ্বের বহু চিকিৎসক তার জন্য এগিয়ে এসেছেন। ২৫ বছর বয়সে ৩ বার তিনি সার্জারিও করেছেন। কিন্তু, তাতে কোনো ফল হয়নি। সার্জারি করা সত্ত্বেও তার হাতের ফোলা কমেনি। অপারেশনের পর কিছুদিন একটু কম মনে হলেও আবার আগের অবস্থায় চলে আসে। বরং অপারেশেনর পর তা আরও বেড়ে গেছে এমনও দেখা গেছে বলে জানালেন দুয়াংজেই।
দুয়াংজেই আরও জানান, স্বাধীনভাবে চলাফেরার জন্য আমার হাত দুটো কেটে ফেলাই একমাত্র সমাধান ছিল বলে পরামর্শ দিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক। প্লাস্টিক সার্জন ড. ইইজু উচিনুমা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, দুয়াংজেই বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র ব্যক্তি, যার কাঁধ হতে শুরু করে আঙ্গুল পর্যন্ত ২ হাতেই ভয়াবহ এক শারীরিক সমস্যাটি বিদ্যমান। ড. ইইজু উচিনুমা আরও বলেন, রোগটির কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও অজানা। তাছাড়া এই রোগের এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসাও নেই।
চিকিৎসা না থাকায় দীর্ঘদিন যাবত এক কঠিন অবস্থায় জীবন-যাপন করছেন থাইল্যান্ডে ওই নারী দুয়াংজেই সামাকসামাম। জীবনের এই শেষপ্রান্তে এসে তিনি শুধুই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। কারণ তার আর করার কিছুই নেই। তাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভারি বিকৃত এই হাতটি নিয়েই কাটাতে হবে।
দেখুন ভিডিও
http://www.youtube.com/watch?v=R3Xv0DeVuMc