দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে জামায়াতে ইসলামীল আমির মতিউর রহমান নিজামী ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের ব্রেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আজ বুধবার দুপুর ১২.২০ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যর বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর ২ সদস্য হলেন- বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ৮টি প্রমাণিত হয়েছে। এরমধ্যে ৪টিতে ফাঁসি এবং ৪টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার কারণে গতকালই নিজামীকে গাজিপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। আজ বুধবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনালে নিজমীকে আনা হয়।
আজকের এই রায় মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার দশম রায়। আগের ৯টি মামলায় জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান ৮ জন ও বিএনপির ২ নেতাকে দণ্ডাদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এর পূর্বে গত ২৪ জুন অসুস্থতার কারণে নিজামীকে আদালতে হাজির না করতে পারায় রায় ঘোষণা করেনি ট্রাইব্যুনাল।
গত ২৪ মার্চ নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার বিচার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা কর আদালত। এরপর মামলাটি যেকোনো দিন রায় (সিএভি) ঘোষণার জন্য রাখে ট্রাইব্যুনাল। নিজামীর এই মামলাটি একমাত্র মামলা যেটি ৩ বার রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়।
মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও তাতে সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র ছাড়াও বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো ১৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় অভিযোগ গঠন করে ২০১২ সালের ২৮ মে তার বিচার শুরু করা হয়।
নিজামীর বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট হতে গত বছরের ৮ অক্টোবর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক, সাংবাদিক এবং ইতিহাসবিদসহ মোট ২৬ জন সাক্ষী ট্রাইবুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এই মামলায় সাফাই সাক্ষ্য দেন ৪ জন। এরা হলেন- নিজামীর ছেলে মো: নাজিবুর রহমান এবং অ্যাডভোকেট কে এ হামিদুর রহমান, মো: শামসুল আলম এবং আবদুস সালাম মুকুল।
২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার বিচার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করে মামলাটি যেকোনো দিন রায় (সিএভি) ঘোষণার জন্য রাখে ট্রাইব্যুনাল-১ এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেল। এরপর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের চাকরির বয়সসীমা পূর্ণ হওয়ার কারণে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান তিনি। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান পদে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমকে এ বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
নতুন চেয়ারম্যান এম. ইনায়েতুর রহিম নিজামীর মামলায় নতুন করে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আদেশ দেন। সে অনুয়ায়ী এই মামলায় পুনরায় যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।
ট্রাইবুনালের ১০ রায়
বর্তমান সরকার আগের বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। এরমধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হয়।
প্রথম রায়
প্রথম রায়ে ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ হয়।
দ্বিতীয় রায়
৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায় প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেয় হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। সৃষ্টি হয় গণজাগরণ মঞ্চের।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সেই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে জনতার দাবির মুখে সরকার ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধন আনেন। এরপর রায়ের বিরুদ্ধে দুই পক্ষেরই আপিলের সমান সুযোগ তৈরি হয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ এই মামলার চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে প্রাণদণ্ড দেয়।
তৃতীয় রায়
ট্রাইব্যুনালের তৃতীয় রায় হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। সেই রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসি হলে জামায়াতে ইসলামী ব্যাপক সহিংসতা চালায়। সরকারি হিসেবেই পুলিশসহ নিহত হয় ৭০ জনেরও বেশি।
চতুর্থ রায়
এরপর গত ৯ মে চতুর্থ রায় হয়। এতে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকেও মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
পঞ্চম রায়
মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও উস্কানির দেওয়ার অভিযোগে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযমকে গত ১৫ জুন ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। এটি ট্রাইব্যুনালের পঞ্চম রায়।
ষষ্ঠ রায়
ষষ্ঠ রায় হয় গত ১৭ জুলাই। সেই রায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকেও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত।
সপ্তম রায়
১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের সপ্তম রায় হয়। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় দেওয়া হয়।
অষ্টম রায়
অষ্টম রায়ে গত ৯ অক্টোবর বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় ট্রাইবুনাল।
নবম রায়
নবম রায়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে একাত্তরের ২ বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান এবং চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে গত ৩ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইবুনাল।
দশম রায়
আজ হবে ট্রাইবুনালের দশম রায়। জামায়াতে ইসলামীল আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড দেয় আদালত।