দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কেও কি চাই বুড়া হতে? না। সবাই চাই তরুণ থাকতে। কিন্তু তরুণ থাকতে হলে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা দরকার। কিভাবে তরুণ থাকবেন তার কয়েকটি টিপস্ আজকে দেওয়া হলো।
বয়স যতোই হোক না কেনো কেওই চান না বুড়া হতে। তরুণ থাকার জন্য প্রাণান্তর প্রচেষ্টা করে যান সকলেই। দুনিয়ার নিয়মই মনে হয় এমন। কিন্তু বয়সকে ধরে রাখতে হলে বেশ কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা একান্ত দরকার। এসব নিয়ম-কানুন মেনে চললে অবশ্যই বর্ধক্য আপনার ধারে কাছে ঘেষতে পারবে না। আবার এসব নিয়ম কানুনের ফলে আপনার শরীরও থাকবে সুস্থ্য। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক তরুণ থাকার কয়েকটি টিপস্।
প্রথমত: আপনাকে অভ্যাস করতে হবে খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার। কারণ সকালে ঘুম থেকে উঠলে শরীর ও মন দুই ভালো থাকে। তবে অনেকের হয়তো সকালে ওঠার অভ্যাস নাই। অর্থাৎ অনেক রাত জেগে টিভি দেখা বা ইন্টারনেটে বসে থাকার কারণে সকারে ঘুম থেকে উঠতে সমস্যা হয়। যদি বেশি রাত না জেগে সকাল সকাল ঘুমের অভ্যাস করেন তাহলে সকালে ওঠা আপনার জন্য কোনো ব্যাপারই হবে না। সে অভ্যাস ধীরে ধীরে করতে হবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই অন্তত ২ গ্লাস পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। এরপর চলে যান সোজা বাথরুমে। বাথরুম হতে ফিরে এসে আরও এক গ্লাস পানি খান। এরপর শুধু লিকার দিয়ে দুধ ছাড়া খুব হালকা এক কাপ রং চা খান। আপনার ওজন যদি বেশি থাকে তাহলে চিনি খাবেন না। চা অতিরিক্ত গরম না খেয়ে একটু ঠাণ্ডা করে তারপর খান। রং চা দিনে কমপক্ষে ৪ কাপ খেতে পারেন।
আপনি সারাদিনে ১০/১২ গ্লাস বাড়তি পানি খাবেন। এই পানি খাওয়ার নাম বলা হয়ে থাকে হাইড্রোথেরাপি বা জলচিকিৎসা। মূলত এটি হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছরের প্রাচীন এবং ভারতীয় একটি চিকিৎসা। আধুনিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ঘুম হতে উঠে ধীরে ধীরে ২ গ্লাস পানি খাওয়ার অভ্যাস করলে প্রায় ৩৬ ধরণের রোগ হতে মুক্ত থাকা যায়। আবার দুধহীন এবং দুধ-চিনি-হীন হালকা গরম রং চা হচ্ছে আড়াই হাজার বছর পূর্বের একটি চায়নিজ হারবাল মেডিসিন । শোনা যায় যে, সেসময এই চা দিয়ে হার্ট, ব্লাড প্রেসার (উচ্চ রক্তচাপ) এবং পেটের নানা রকম রোগের চিকিৎসা করা হতো। আবার আধুনিক বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণেও দেখা যায়, চায়ে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে নিশ্চিতভাবে অবদান রাখে। আরও বহুগুণ রয়েছে এই চা’তে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, যে চা প্রক্রিয়াজাত হয়নি, সে চায়ের গুণাগুণই অপেক্ষাকৃত অনেক ভালো।
মানব দেহের জন্য ভিটামিন সি একটি বৈপ্লবিক খাদ্যপ্রাণ এবং অসংখ্য গুণাগুণ রয়েছে এতে। জানা গেছে, দিনে এক হাজার মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খেলে মানুষ চির তরুণ থাকতে পারবে। তবে ট্যাবলেট খেলে এতোটা উপকার পাওয়া যায় না। তাই ট্যাবলেট না খেয়ে প্রতিদিনই কমবেশী ভিটামিন সি সমৃদ্ধ তাজা ফলমূল খেতে হবে। ভিটামিন সি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। আমলকি, সব রকমের লেবু, টমেটো, পেয়ারা, কমলা নানা রকর টক স্বাদের ফলে বিভিন্ন মাত্রায় ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এসব ফল বেশি করে খেতে হবে।
চির তরুণ থাকতে হলে প্রথমেই ধূমপানসহ সকল ধরণের নেশা জাতীয় অভ্যাস অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। কারণ নেশা মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। রেডমিট অর্থাৎ গরু, মহিষ, খাসি, ভেড়া ইত্যাদির মাংস খাওয়া একেবারে কমিয়ে দিতে হবে। একেবারে না খেলে আরও ভালো। ফার্মের মুরগিও খাওয়া যাবে না। তবে চর্বিহীন বাচ্চা মুরগির মাংস খাওয়া যেতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে আধা-সেদ্ধ শাক-সবজি, তরিতরকারি ও খুব অল্প পরিমাণে ভাত-রুটি খেতে হবে। তেলে ভাজা কোনো কিছু খাবেন না। অতিরিক্ত তেল, চর্বি বা ঘি, মাখন কখনও খাবেন না। মসলার বিভিন্ন ভেষজ গুণ আছে, তবুও রান্নায় খুব বেশি মসলা ব্যবহার করা যাবে না। সালাদ হিসাবে প্রতিদিন বেশি করে খাবেন কাঁচা লেটুস পাতা, পুদিনা পাতা, শষা, টমেটো ইত্যাদি।
যদি কোনো বিধিনিষেধ না থাকে তাহলে সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু খেতে পারেন। কারণ মধুতে বহু ফুলের নির্যাষ থাকে এটি বড়ই উপকারী। পূর্ণবয়স্কদের জন্য গরু, ছাগল, মহিষের দুধ খাওয়া চলবে না। কারণ এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ছোট-বড় সব ধরনের মাছ খাওয়া যাবে। সমুদ্রের মাছ খাওয়া অভ্যাস করতে পারলে আরও ভালো হয়। কারণ, এটা একটা বড় মহৌষধ। চিকিৎসকরা কাটাযুক্ত মাছ খেতে বলেন। যেমন ছোট মাছ। কারণ কাটায় প্রচুর ভিটমিন রয়েছে। তবে বেশি পরিমাণে মাছের কাটা খাওয়া মোটও ঠিক নয়, তাতে পাকস্থলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সূর্যমূখী ফুলের বীজ হলো হার্টের ভেষজ ওষুধ। রান্নায় সূর্যমূখী তেল ব্যবহার করলে হার্টের সুরক্ষা যেমন হয়, পক্ষান্তরে হার্টের অসুখ থাকলে তা সারাতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। আর একটি জিনিস প্রতিদিন অল্প একটু খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। যেমন টক দই। টক দই উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশেষ সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন একটু টক দই খান।
উপরোক্ত খাদ্যগুলো নিয়মমাফিক খেলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত চর্বি হবে না। আপনি অনেক সুস্থ্য থাকতে পারবেন। আর শরীরে চর্বি না হলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে চির তরুণ থাকার স্বপ্ন সত্যিও হতে পারে। তাহলে আসুন, আমরা সবাই চেষ্টা করি চির তরুণ থাকার।