মাহবুবর রহমান সুমন ॥ সময়ের পরিবর্তনে লাইফস্টাইলে এসেছে নানা পরিবর্তন। যেমন টেলিফোন থেকে আজ আমরা এসেছি মোবাইল ফোনে। কিন্তু প্রচন্ড রৌদ কিংবা বৃষ্টি মোকাবেলা করতে ঊনবিংশ শতাব্দীতেও কিন্তু আসেনি কোন পরিবর্তন। আপনাকে ব্যবহার করতে হচ্ছে সেই প্রাচীন
একটি যন্ত্র ‘ছাতা’।
অথচ মজার বিষয় হলেও সত্য যে, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগেও মানুষের বন্ধু হয়ে থাকা এই ছাতা নামের সামগ্রীটির জন্ম কিন্তু হয়েছিল আজ থেকেও প্রায় হাজার চারেক বছর আগে। তবে প্রাচীন সেই সময়ে ছাতার উপস্থিতি সম্পর্কে জানা গেলেও ঠিক কে কীভাবে তা আবিষ্কার করেছিলেন তা জানা যায় না। বরং ছাতা সম্পর্কে বেশ কিছু ইতিহাসের খোঁজ পাওয়া যায়, ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে।
বিশ্বের প্রথম ছাতার দোকান ‘জেমস স্মিত অ্যান্ড সন্স’ চালু হয় ১৮৩০ সালে। যদিও সে সময়ে মূলত সূর্যের প্রখরতা থেকে বাঁচতেই ছাতার প্রচলনছিল বেশি। আর বৃষ্টি থেকে বাঁচতে প্রথম ছাতা ব্যবহারের দাবিদার হিসেবে ধরা হয় চীনাদের। ছাতা আবিষ্কারের কাহিনী অনেকটা সেকেলে হলেও অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত ছাতার আকৃতি ছিল অনেক বড় এবং ওজনও ছিল বেশি।
১৮৫২ সালে স্যামুয়েল ফক্সস্টিলের চিকন রড দিয়ে রানী ভিক্টোরিয়ার জন্য ছাতা তৈরি করেন। যদিও এই ঘটনারও বহু দিন আগে ১৭১৫ সালে মারিয়াস নামে এক পারস্যের নাগরিক পকেট ছাতা আবিষ্কারের কৃতিত্ব দাবি করেন। এরপর ঊনিশ শতকে ছাতাকে বিভিন্ন ডিজাইনের এবং সহজে বহনযোগ্য করা হয়। ১৮৫২ সালে গেজ নামে একজন ফরাসি নাগরিক স্বয়ংক্রিয় সুইসের সাহায্যে ছাতা খোলার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
১৯২০ সালে জার্মানির বার্লিন শহরের হ্যানস হাপট নামে এক ব্যক্তি ছাতা তৈরিতে অভিনব পরিবর্তন আনেন। তিনি ছোট সাইজের সহজে পকেটে বহনযোগ্য ছাতা তৈরি করে। ১৯৩৬ সালে লর্ড ও লেডি নামের এই ছাতা গোটা জার্মানি ও তার আশপাশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
এ ছাড়া ১৯৬০ সালে বাজারে আসা পলিস্টার কাপড়ের ছাতাও ব্যবহারকারীদের মন জয় করতে সক্ষম হয়। ছাতা নিয়ে মজার আরেকটি দিক হলো ছাতা আবিষ্কারের পর একটা বড় সময় জুড়েই এর রং ছিল প্রধানত কালো, যা আজ ও ব্যাপক ভাবে প্রচলিত। তবে গেল ত্রিশ বছরে ছাতার রং আর বাহারে যেমন পরিবর্তন এসেছে তেমনি পরিবর্তন এসেছে এর আকার, আকৃতি আর উপকরণেও। ছাতার রং এবং উপকরণে পরিবর্তন এলেও আজও চার হাজার বছরের সেই প্রাচীন ছাতাই লাইফস্টাইলে ব্যবহ্যার করে যাচ্ছেন আধুনিক পৃথিবীর সভ্য মানুষরা।