দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যে ব্যক্তির শ্রাদ্ধ করা হয় সেই ব্যক্তি নিজেই পায়ে হেঁটে বাড়িতে হাজির। এমন একটি ঘটনা ঘটেছে ভারতের একটি গ্রামে।
কোলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার এক রিপোর্টে বলা হয়, মা ‘মারা গেছেন’ জানিয়ে পাড়ার লোকের কাছ থেকে চাঁদা তুলে মায়ের শ্রাদ্ধও সেরে ফেলেছিলেন তাদেরই মেয়ে-জামাই। ‘মৃত’ সেই মা-ই বাড়ি ফিরে এলেন তাও আবার পাশের পাড়ার এক মহিলার হাত ধরে!
জানা যায়, পাশের পাড়ার এক মহিলা তার আত্মীয়কে দেখতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানকার ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডের শৌচাগারের পাশে এক বৃদ্ধাকে পড়ে থাকতে দেখে তিনি চমকে ওঠেন তিনি। কারণ দিন কয়েক আগে ওই বৃদ্ধারই শ্রাদ্ধের কথাই শুনেছিলেন তিনি। সন্দেহ হয় তাহলে তাকে হাসপাতালে দেখছেন কীভাবে? বছর সত্তরের ওই বৃদ্ধা ততক্ষণে তাকে দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধও করতে থাকেন। ওই মহিলা বাড়ি ফিরে এসে এলাকাবাসীকে বিষয়টি জানান।
এ ঘটনার পর পাড়ার বাসিন্দারা মেয়ে-জামাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানান, পরিকল্পনা করেই মাকে তারা হাসপাতালে ভর্তির সময় ভুল ঠিকানা দিয়ে এসেছিলেন, যাতে হাসপাতাল তাদের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে না পারে। বৃদ্ধাকে ভর্তি করার পরে তার আর খোঁজও নেননি ওই দম্পতি। ঘটনাটি ঘটেছে বাগুইআটির প্রতিবেশী পাড়ায়।
জানা যায়, হতদরিদ্র ওই পরিবারের জামাই জগন্নাথ পাল দমদম পার্ক বাজারে মাছ বিক্রি করেন। জগন্নাথ এবং তার স্ত্রীর ৪ ছেলেমেয়ে। পরিবারে তিনিই একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি। শাশুড়ি আপেলরানি পালের সেরিব্রাল অ্যাটাকের পরে জগন্নাথ তাকে আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। তার কয়েক দিন পরে ওই দম্পতি পাড়ায় রটিয়ে দেন যে, বৃদ্ধা মারা গেছেন। স্বভাবতই বিষয়টি নিয়ে কেওই কোনও সন্দেহ প্রকাশ করেননি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আর জি করের পুলিশ ফাঁড়ি হতে বারবার ওই বৃদ্ধার ঠিকানার খোঁজ করা হয়। কিন্তু জগন্নাথবাবুরা ভুল ঠিকানা দেয়ায় বাড়ির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না কোনো মতেই। এরপর হতে ওই বৃদ্ধা হাসপাতালের শৌচাগারের পাশের বারান্দাতেই দিন কাটাচ্ছিলেন।
স্বপ্নাদেবীর সহযোগিতায় আপেলরানির সন্ধান পাওয়ার পরে শেষ পর্যন্ত শাশুড়িকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন জগন্নাথ। ওই বৃদ্ধা বাড়ি ফিরে আসার পরে অবশ্য হতদরিদ্র ওই পরিবারের পাশেই দাঁড়িয়েছে এলাকার মানুষ।
থানীয় প্রতিবেশী ক্লাবের সভাপতি অপূর্ব সেনগুপ্ত বলেছেন যে, পরিবারটি খুবই গরিব। ওরা যদি আমাদের এসে বলতো যে, মায়ের চিকিৎসার খরচ চালানোর জন্য কিছু সাহায্যের দরকার, আমরা তা তুলে সাহায্য করতাম। কিন্তু ওরা আমাদের তেমন কিছু বলেইনি। বরং বলেছে, মা মারা গেছে, শ্রাদ্ধশান্তির জন্য সাহায্য দরকার। আমরা চাঁদা তুলে তাদের সাহায্য করি। ওরা যে মাকে হাসপাতালে ফেলে চলে এসেছে, তা আমরা কখনও ভাবতে পারিনি।
সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, তবে ঘটনা যায়ই ঘটুক হাসপাতাল হতে বাড়ি ফিরে আপেলরানি এখন খুশি। অসুস্থ ওই বৃদ্ধাকে অবশ্য তার শ্রাদ্ধশান্তির বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। তিনি বলেছেন, বাড়ি ফিরতে পেরে আমি খুবই খুশি। মেয়ে-জামাই অনেক দিন খোঁজ নেয়নি, কিন্তু ওরাই তো আমাকে হাসপাতাল হতে ছাড়িয়ে আনলো। আর পুরনো কথা মনে রাখবো না।
অর্থের জন্য মানুষ নিজের মাকে কিভাবে ফেলে আসতে পারে এটি তারই একটি নমুনা মাত্র।