দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মমি কাহিনী আমরা বহুবার পড়েছি তবে এবার পাওয়া গেলো ২শ’ বছরের ‘জীবিত মমি’। পদ্মাসনে বসা এক ভিক্ষুর মমি এটি।
মমি কানিহী আমরা বহুবার পড়েছি। বহু গবেষকরা মমি নিয়ে গবেষণা করে বহু তথ্যও উপস্থাপন করেছেন। আদি কালের বহু ইতিহাসও বেরিয়ে এসেছে এসব মমি থেকে। কিন্তু এবার শোনা গেলো একটু ব্যতিক্রমি মমির কাহিনী। ‘জীবিত মমি’! ছবিটি দেখলেই বোঝা যাবে। পদ্মাসনে বসা এক ভিক্ষু। তার বাঁ হাতের মুঠি খোলা। ডান হাতে মন্ত্রের সূত্রের ভঙ্গি। মমি করা দেহটিতে কোনো রকম পচনের কোনো লক্ষণই নেই। গবেষকরা ধারণা করছেন, মমিটি প্রায় ২শ’ বছর আগের। বৌদ্ধ পণ্ডিতেরা বলছেন, এই আসনে থাকার অর্থ ভিক্ষু এখনও ‘গভীর ধ্যানে’ মগ্ন। মমিটি পরীক্ষা করে দেখছেন ফরেনসিক বিজ্ঞানীরা। মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলান বাটোরে গত সপ্তাহে পাওয়া যায় এই মিম। পাওয়া এই ভিক্ষুর মমি নিয়ে তোলপাড় চলছে বিশ্বময়।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, উলান বাটোরের সঙ্গিনো খাইরখান এলাকার একটি বাড়ি হতে পশুর চামড়ায় মোড়া অবস্থায় এই ভিক্ষুর মমিটি উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে, একটা গুহা হতে মমিটি চুরি করে বিক্রির উদ্দেশ্যে ওই বাড়িতে রাখা হয়েছিল। এই ঘটনায় ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে অবশ্য আটক করা হয়েছে।
মমিটি প্রায় ২শ বছরের পুরোনো বলে ধারণা করা হলেও এখন পর্যন্ত ওই ভিক্ষুর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মঙ্গোলিয়ার সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী মমিটি উলান বাটোরের জাতীয় ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উলান বাটোর বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গোলিয়ান ইনস্টিটিউট অব বুড্ডিস্ট আর্টের প্রতিষ্ঠাতা গানখুইগিন পুইরেভাত সাইবেরিয়ান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এই লামা পদ্মাসনে বজ্র ভঙ্গিতে বসে আছেন। বাঁ হাতের মুঠি খোলা ও ডান হাতে মন্ত্রের সূত্রের ভঙ্গি।’ এই বৌদ্ধ পণ্ডিতের মতে, ‘এই ইঙ্গিতের অর্থ হলো তিনি এখনও মারা যাননি। বৌদ্ধ লামাদের প্রাচীন চর্চা অনুসারে এর অর্থ হলো তিনি এখনও গভীর ধ্যানে মগ্ন আছেন।’
বৌদ্ধ পণ্ডিতদের অনেকেই বলছেন, ‘ওই ভিক্ষু হয়তো ‘তুকদাম’ বা এমনই এক ধ্যানমগ্ন অবস্থায় রয়েছেন, যা কিনা ‘জীবিত বা মৃত’ অবস্থার চেয়ে ভিন্ন এক অবস্থা।’ তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামার একজন চিকিৎসক এবং ভিক্ষু ব্যারি কারজিন সাইবেরিয়ান বলেছেন, ‘কেও যদি ওই অবস্থায় তিন সপ্তাহ পার করতে পারেন, তাহলে তাঁর দেহ ক্রমশ শীর্ণ হতে হতে একসময় তাঁর চুল, নখ আর পরিধেয় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।’
উল্লেখ্য, একই ধরনের এক ঘটনা ঘটেছিল রাশিয়ার বুর্যতিয়া অঞ্চলে। ২০০২ সালে বৌদ্ধ লামা দাশি-দরঝো ইতিগিলোভের দেহ সমাধি হতে তোলার পর তাতে পচনের কোনো লক্ষণ ছিলনা। উলান উদে বিহারের ভিক্ষুরা জানিয়েছিলেন, উৎসবের সময় ইতিগিলোভের দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যেতো বলে টের পেতেন তাঁরা। ১৯২৭ সালে ইতিগিলোভ ধ্যানরত অবস্থায় দেহত্যাগ করেন। তাঁকে পদ্মাসনে সমাধিস্থ করার জন্য শিষ্যদের বলে যান তিনি। ইতিগিলোভের দেহ লবণে ঢেকে সমাহিত করা হয়।