দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু আজকের এই ৭ মার্চ ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘এবার সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বর্তমান সোহরাওয়ার্দী এবং তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ওই দিনের ভাষণের ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে সমগ্র বাঙালি জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। তাই জাতির ইতিহাসে আজকের এই দিনটি একটি স্মরণীয় দিন।
রেসকোর্স ময়দানে সেদিন লাখ লাখ মানুষের মুহুর্মুহু করতালি আর গগনবিদারী স্লোগানের মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুর এই বজ নিনাদ ঘোষণার পর মুক্তিপাগল বাঙালিকে আর পেছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর এই ঐতিহাসিক ভাষণে সমগ্র জাতিকে অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি গেরিলা যুদ্ধের দিকনির্দেশনা দেন। এ নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চের পর সারাদেশে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। এটি শুধু একটি ঐতিহাসিক ভাষণই নয়, এটি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রামাণ্য দলিল ও ঘোষণাপত্রও বটে।
এ ভাষণ যেমনি ছিল সারগর্ভ, তেজস্বী ও যুক্তিপূর্ণ, তেমনি তির্যক, তীক্ষ্ণ এবং বলিষ্ঠও। এক অপূর্ব এবং নাতিদীর্ঘ উপস্থাপনায় বঙ্গবন্ধু স্বল্প কথায় পাকিস্তানের ২৩ বছরের রাজনৈতিক শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস ও বাঙালির সুস্পষ্ট অবস্থানের চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়ে দ্বন্দ্বের স্বরূপ, অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও নির্দেশ দেন।
তাৎপর্যপূর্ণ ওই ঘোষণার পরই পাকিস্তান সরকারের পুরো প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে পড়ে। পূর্ববাংলা কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গোটা জাতি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুতি শুরু করে। আজকের দিনের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উত্তাল জনসমুদ্রে তার জলদগম্ভীর এ নির্দেশনা মুক্তিপাগল লাখ লাখ বাঙালির হৃদয়ে প্রবলভাবে নাড়া দেয়।
সেদিন বাঙালি জাতিকে তিনি শুধু মুক্তির মহাকাব্যই শোনাননি, দিয়েছিলেন প্রতিরোধ-মন্ত্রণার কলাকৌশলভরা নির্দেশাবলী। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি.., প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল.., তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো..। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেও আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না.., রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।’ এ ঘোষণার পর লাখো জনতার মধ্য হতে গগনবিদারী স্লোগান ওঠে- ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো- বাংলাদেশ স্বাধীন করো; তোমার দেশ আমার দেশ- বাংলাদেশ বাংলাদেশ; আপস না সংগ্রাম- সংগ্রাম সংগ্রাম; জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু।’ ইত্যাদি শ্লোগানে মুখরিত হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সেদিন সমগ্র বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে ৯ মাসের বীরত্বপূর্ণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ওই বছরেরই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাঙালিরা।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের ইতিহাসে একটি নজির হয়ে রয়েছে। আর তাই ৭ মার্চ বাঙালি জাতির জন্য একটি মাইলফলক।