দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভুয়া যন্ত্র বিক্রি করে ৮ কোটি ডলার আয় করে এসব দেশকে বোকা বানিয়েছে এক বৃটিশ নাগরিক।
মোট কথা পিলে চমকানো এক খবর গত দুদিন ধরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। আর তা হলো- বাংলাদেশ, ইরাক, পাকিস্তান, চীন, ভারত, বেলজিয়াম, লেবানন, ভিয়েতনাম, হংকংসহ বহু দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বোকা বানিয়ে ভুয়া বোমা শনাক্তকরণ যন্ত্র বিক্রি করে ৮ কোটি ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ৬২২ কোটি টাকা আয় করেছেন এক বৃটিশ নাগরিক।
যুক্তরাজ্যের লিবারপুলে বসবাসকারী জিম ম্যাককর্মিক বোমা শনাক্তকরণ হাজার হাজার ভুয়া যন্ত্রপাতি তৈরি করেন। এরপর সেসব বিক্রি করেছেন বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ইরাক, মেক্সিকান সেনাবাহিনী, বেলজিয়াম পুলিশসহ আরও বহু দেশের কাছে! কিন্তু অবশেষে তিনি ধরা পড়েছেন।
দক্ষিণ আমেরিকার মেক্সিকো, ইউরোপের বেলজিয়াম, এশিয়ায় বাংলাদেশ, চীন, ভারত, পাকিস্তানের কাছে বহুমূল্যে এসব ভুয়া সামগ্রী বিক্রি করেন ওই ব্যক্তি।, তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছেন ইরাকে। ওই ব্যক্তি ইরাক সেনাবাহিনী ৩.৮ কোটি ডলারের ভুয়া যন্ত্রপাতি কিনেছে এই ব্যক্তির কাছ থেকে! যে ভুয়া যন্ত্রটি বিক্রি করে সবচেয়ে বেশি অর্থ আয় করেছেন, সেটি তার মালিকানাধীনও নয়। জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গলফ খেলার বল খোঁজার জন্য এক ধরনের ডিভাইস বের হয়েছিল। ডিভাইসটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘গোফের’। ‘গোফের’ নামের এই যন্ত্রটিকেই ম্যালকম স্টিগ রো নামের আরেক ব্যক্তি এবং তার সহযোগীরা ‘কোয়াড্রো ট্রেকার’-নামে রূপান্তরিত করেন। এই যন্ত্রটি বিশ্বের বিভিন্ন বাহিনীর কাছে এতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) যন্ত্রটি নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে। যে কারণে যন্ত্রটি ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এফবিআই বুঝতে পারে আসলে যন্ত্রটি ভুয়া। বিষয়টি জানার পর দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক করে দেয় এফবিআই। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ম্যালকম স্টিগ রো ইংল্যান্ড ছেড়ে পালিয়ে যান। কিন্তু পালিয়ে যাওয়ার আগে, নিজের ভুয়া যন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, কানসাস, ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কিছু বিদ্যালয় এবং কয়েকটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বিক্রি করতে সমর্থ হন। নিজ দেশ যুক্তরাজ্যেও তিনি এই যন্ত্র বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এফবিআইয়ের মতোই বুঝতে পারে যে, এই যন্ত্রের কোন মূল্যই নেই।
প্রথমে ২০০৪ সালে ম্যাককর্মিক সিদ্ধান্ত নেন, ওই ভুয়া যন্ত্রটি কারও সহায়তা না নিয়ে নিজেই বাজারজাত করবেন। আর তাই তিনি যন্ত্রটিতে আরও ভারিক্কি চেহারা আনার প্রচেষ্টা করেন। ‘গোফের’ যন্ত্রটি ছিল সামান্য প্লাস্টিকের তৈরি। দেখতে মোটেই অসাধারণ কিছু বলে মনে হতো না। ২০০৬ সালে একটি ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হন তিনি। এরপর নিজের কোম্পানি এটিএসসির নামে এডিই নামের বোমা শনাক্তকরণ যন্ত্র তৈরিতে মনোনিবেশ করেন ম্যাককর্মিক। প্রতি ইউনিট ১৪ হাজার ডলার করে মোট ৫ ইউনিট এডিই ৬৫০ নামের ভুয়া এই যন্ত্র বিক্রি করেন লেবানিজ সেনাবাহিনীর নিকট। খুব দ্রুত লেবানিজ সেনাবাহিনী আরও ৮০টি যন্ত্রের ফরমায়েশ দেয়! লেবানিজ সেনাবাহিনী যন্ত্রটিতে কোন ত্রুটিই খুঁজে পায়নি। মোভেনপিক হোটেল কর্তৃপক্ষকেও বশে আনেন ধুরন্ধর ম্যাককর্মিক। ২০০৭ সাল হতে নিজেদের বাহরাইন শাখায় ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ ম্যাককর্মিকের দেওয়া বোমা শনাক্তকরণ যন্ত্র ব্যবহার শুরু করে। আফ্রিকার দেশ নাইজারে প্রতি ইউনিট ২৫ হাজার ডলার করে মোট ১০ ইউনিট ভুয়া যন্ত্র বিক্রি করেন ম্যাককর্মিক। এভাবেই ভুয়া এই যন্ত্রটি বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে।
এই বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে, বৃটিশ কর্তৃপক্ষ তদন্তের উদ্যোগ নেয়। অবশেষে ম্যাককর্মিকের বিচারে সাজা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী প্রতারণা মামলার সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছরই জুটেছে ম্যাককর্মিকের ভাগ্যে।