দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ টেলিফোনের অন্যতম আবিষ্কারক, বোবাদের পিতা তথা দ্য ফাদার অফ দ্য ডিফ নামে ডাকা হতো সেই আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের ১৮৮৫ সালের তারই রেকোর্ডিং ডিস্ক থেকে তার কন্ঠ অবিকল রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা। টেলিফোন উদ্ভাবনের আগে থেকেই বেল শ্রবণ ও কথন সংশ্লিষ্ট গবেষণা কাজে নিয়োজিত ছিলেন। বেল এর গবেষণাগার ও তার ব্যবহৃত ডিস্ক ও সিলিন্ডার থেকে পর্যায়ক্রমিক নানা প্রচেষ্টার পর গবেষকরা এই সফলতা দেখালেন। নতুন এই প্রযুক্তিটি উদ্ভাবনের ফলে ১২৮ বছরের পুরনো গ্রাহাম বেলকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
১৮৮০ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত বেল গবেষণাগারের যন্ত্রপাতি সহ একটি সংগ্রহশালা দিয়ে যান। তার এই অবদানে ৪০০ এর উপর ডিস্ক এবং সিলিন্ডার ছিল, যেগুলোতে তিনি শব্দ রেকর্ড করার চেষ্টা করেছিলেন। এছাড়াও বেলের গবেষণা নথিসমূহ, বিভিন্ন পেটেন্ট ছিল। বেল তার শব্দ নিয়ে গবেষণা ১৮৮০ থেকে ১৮৮৬ সাল এর মধ্যে করেন। তাকে সহযোগিতা করেন চাচাত ভাই এবং একজন টেকনিশিয়ান। তারা বেল এর ভোল্টা গবেষণাগারে কাজ করতেন। বেল এর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজ্ঞানী থমাস আলভা এডিসন এমবোসড ফয়েলে শব্দ রেকর্ড করে সফলতা পান। এই সময়ে শব্দ এবং আলো নিয়ে বেল এর কিছু গবেষণা প্রকাশ পাবার অপেক্ষায় ছিল।
ল্যাবের ভেতর, বেল ও তার সহযোগিরা শব্দ রেকর্ড করতে ধাতু, মোম, কাচ, কাগজ, প্লাস্টার, ফয়েল এবং পিচবোর্ড, সহ নানা উপকরণ ব্যবহার করেন। তারপর শুনার চেষ্টা করতেন যা ডিস্ক বা সিলেন্ডারে তারা এমবেডেড করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তাদের শব্দ রেকর্ড করার পদ্ধতি এবং বাজানোর পদ্ধতি হারিয়ে গেছে বা জানা যায় নি।
ন্যাশনাল মিউজিয়াম, আমেরিকান হিস্টোরির কিউরেটর কারলেন স্টিফেনস বলেন, ৪ থেকে ১৪ ইঞ্চি ডায়ামিটার এর ডিস্কগুলো হাতে তৈরি নিরব কিছু থাকতে পারে। এগুলোর ভেতর কি থাকতে পারে তা নিয়ে তিনি বিস্মিত হতেন। কিউরেটর স্টিফেনস, গবেষক কার্ল হাবার সম্পর্কে জানতে পারেন। যিনি ১৮৬০ সালের প্যারিসের একটি রেকর্ড উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার টিম কে সাথে নিয়ে তিনি একটি উচ্চ ক্ষমতার অপটিক্যাল স্ক্যানার তৈরি করেন যা কম্পিউটার এর সাহায্যে পুরনো রেকর্ড কনভার্ট করা যেত অডিও ফাইলে।
স্টিফেনস, হাবার এর সাথে যোগাযোগ করেন। ২০১১ সালের শুরুর দিকে হাবার তার সহকর্মী পদার্থবিদ আর্ল কর্নেল এবং পিটার আলেয়া যিনি একজন ডিজিটাল রূপান্তর বিশেষজ্ঞ, ভোল্টা গবেষণাগারের ডিস্কগুলো বিশ্লেষণ করা শুরু করেন। একই বছর ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের শব্দ মিডিয়া ইতিহাসবিদ প্যাট্রিক ফিস্টার ডিস্ক এবং সিলিন্ডার এর সম্পূর্ণ চিহ্নসমূহের একটি তালিকা কম্পাইল করেন। তাদের বুদ্ধি দীপ্ত কৌশলে আবিষ্কারটি আলোর পথ দেখায়। তারা বাছাই করতে সক্ষম হোন এপ্রিল ১৫, ১৮৮৫ সালের একটি মোম এবং পিচবোর্ড দিয়ে তৈরি ডিস্কে বেল এর কথা সংরক্ষণ করা আছে।
জুন ২০, ২০১২ লাইব্রেরি অব কনগ্রেস এর একটি টিম এই গবেষণায় যুক্ত হয়। তাদের অক্লান্ত চেষ্টায় রেকর্ডটি রূপান্তর করা সম্ভব হয়। রূপান্তর করা অডিও ফাইলটি এমন ছিল, “আমার কন্ঠ শোন, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল।” এই কন্ঠ বেল এরই ছিল। তার স্বরভঙ্গি দ্রুত এবং সবল ছিল। যা উদ্ধার করা স্বর এর সাথে মিলে যায়।
বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল:
আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ৩রা মার্চ, ১৮৪৭ এ জন্ম। তিনি ১৯২২ সালের ২ আগস্ট মৃত্যু বরণ করেন। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক। তার মা ও স্ত্রী উভয়েই ছিলেন বোবা। এ কারণেই বোবাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তিনি অনেক গবেষণা করেছেন। জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি ইংল্যান্ড, কানাডা সর্বশেষ আমেরিকাতে বসবাস করেছেন।
পরবর্তী জীবনে বেল আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন যার মধ্যে রয়েছে উড়ো নৌকা এবং বিমানচালনবিদ্যা। ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বেল। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন যে টেলিফোন, সেটিকেই তিনি এক উটকো ঝামেলা জ্ঞান করতেন। এজন্যেই নিজের গবেষণা ও অধ্যয়ন কক্ষে কোন টেলিফোন রাখতেন না। বেল মারা যাওয়ার পর আমেরিকার সকল টেলিফোনে এক মিনিটের জন্য অবিরাম রিং বাজানো হয় তার প্রতি সম্মান জানিয়ে। মার্কিন প্রশাসনের ভাষ্য মতে যে মহান ব্যক্তি মানুষে-মানুষে যোগাযোগের এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তাকে উপযুক্ত সম্মান দেখানোর জন্যই এমনটি করা হয়েছে।
বেলের কন্ঠ শুনুন:
alexander-graham-bell
তথ্যসূত্র:স্মিথসোনিয়ান.কম, দি টেক জার্নাল