দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রতিটি মানুষের রয়েছে একক সত্ত্বা, একক বৈশিষ্ট্য। শুধু মানুষের নয়, প্রতিটি প্রাণীর মাঝে একক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। আর এটি জানা সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানীদের আজ থেকে ৬০ বছর আগে, ১৯৫৩ সালের ২৫ এপ্রিল ডিএনএ আবিষ্কারের মাধ্যমে। অর্থ্যাৎ, এইতো আগের মাসেই উদযাপিত হয়ে গেল ডিএনএর জন্মদিন। সুতরাং, বলা যাক শুভ জন্মদিন ডিএনএ এবং ধন্যবাদ জানাই ডিএনএ এর উদ্ভাবক দুই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিক ও জেমস ওয়াটসনকে।
ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) একটি নিউক্লিক এসিড যা জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রনের জিনগত নির্দেশ ধারন করে। সকল জীবের ডিএনএ জিনোম থাকে। ডিএইনএ স্থানান্তরিত হয় মা-বাবার কাছ থেকে তাদের সন্তানদের শরীরে ।
সহজভাবে বলতে গেলে, ডিএনএ হচ্ছে সেই শারিরীক বৈশিষ্ট্য যা তার বাবা- মার কাছ থেকে সন্তানের মাঝে পাওয়া যায় । ধরা যাক, রাইন চুল লাল রঙ এর , চেহারা শ্যামলা, দেখতে তার নিজের বাবার মতই ! আরো বিস্তারিত ভাবে খোজ নিলে জানা যাবে, রাইনের দাদা তার মতই লাল চুলের অধিকারী ছিলেন । কারো চুল, রক্ত এইসব পরীক্ষা করে তার ডিএনএ গঠনের উপর ভিত্তি করে যদি তার বাবা – মার ডিএনএর সাথে মিলানো হয় তাহলে সেই পরীক্ষা থেকে কারো পরিচয় জানা সম্ভব। একারণে, অপরাধী সনাক্ত করণে, সন্তান সংক্রান্ত মামলাসমূহে ডিএনএ টেস্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।
ডিএনএ সংক্রান্ত আলোচিত ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৭ সালে। স্কটল্যান্ডের রজলিনবার্ন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী আয়ান ভিলমুট ক্লোনিঙের মাধ্যমে একটি ভেড়া উৎপন্ন করেন। একটি স্ত্রী ভেড়ার শরীর থেকে কোষ নিয়ে সেটিকে বহুবিভাজিত করে তিনি ডলি নামের ভেড়াটি উৎপন্ন করার মাধ্যমে জিনতত্ত্বের এ পর্যন্ত সেরা উদ্ভাবনটি করেন। তিনি যে পদ্ধতিতে ভেড়া উৎপন্ন করেন, সে পদ্ধতিতে যে কোনো প্রাণী এমনকি মানুষও উৎপন্ন করা যাবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। তবে এর সীমাবদ্ধতাও রয়েছে প্রচুর। বিশেষ করে এর পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার হার এতো বেশি যে, উৎপন্ন প্রাণী খুব বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে না। নৈতিকতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য অবস্থার কথা বিবেচনা করে মানুষ ক্লোন এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ রয়েছে।
ডিএনএ আবিষ্কারের ব্যাপারটি প্রথম জানতে পেরেছিলেন ক্রিকের ১২ বছর বয়সী ছেলে মাইকেল যা চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছিলেন তিনি।
ওয়াটসনের ভাষায়- আমরা জীববিদ্যা বুঝতে পদার্থ এবং রসায়ন পাঠ করি; এটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যে বিজ্ঞান নিজের জন্য নয়, এইটা মানুষের জন্য মানুষের সৃষ্টি ! প্রত্যেক মানুষের লক্ষ্যই বিজ্ঞানের প্রতি মানবিক আত্মাকে প্রভাবিত করা ।
মজা করে তিনি আরো বলেন- ব্যক্তিত্ব এবং শারিরীক সৌন্দর্যের জীন পরিবর্তন করে সব মেয়েই সুন্দরী হতে পারবে ; যদিও অনেকে বলেন এটা ভয়াবহ ব্যাপার কিন্তু আমি ভাবি এইটা নিঃসন্দেহে বিষ্ময়কর এবং বড় ব্যাপার ।
সম্প্রতি জিনগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের চিকিৎসায় নতুন আশার কথা শুনিয়েছেন মার্কিন গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, ৫০ ঘণ্টা বা দুই দিনের মধ্যেই গুরুতর অসুস্থ নবজাত শিশুর ডিএনএ বিশ্লেষণ করা যাবে।এর ফলে রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে শিশুর সুরক্ষায় চিকিৎসকেরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবেন। আগে এমন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মাস খানেক সময় লাগত।২০২৫ সাল নাগাদ মানুষ আর আসুখের জন্য এত এত ওষুধ সেবন করবে না, জিনথেরাপির ব্যবহার আরও সহজলভ্য করার চেষ্টা করছে বিজ্ঞানীরা।
উল্লেখ্য, প্রথমে ফ্রান্সিস ক্রিক ও জেমস ওয়াটসনের এই আবিষ্কার নিয়ে সন্দেহ ছিল এইকারণে এই আবিষ্কার প্রথম দিকে সঠিক স্বীকৃতি পায় নি । কিন্তু তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আরও কাজ করে যেতে থাকেন নিরন্তর। ১৯৬২ সালে আবিষ্কারটি মহাগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ফ্রান্সিস ক্রিক ও জেমস ওয়াটসনকে এই আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
সুত্রঃ প্রথম আলো