দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীতে এমন কিছু শাসক এসেছিলেন যাদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। আপন-পর বলে কিছুই ছিলনা তাদের কাছে। ইতিহাসের এমন কয়েকজন নিষ্ঠুরতম শাসকদের গল্প রয়েছে আজ।
ক্ষমতায় থাকলে মানুষের প্রকৃত চেহারা ফুটে ওঠে। ক্ষমতার দাপটে তখন তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বেশ কিছু ক্ষমতাধর লোক ছিলেন যাদেরকে স্বৈরাচার এবং অত্যাচারী বললেও কম বলা হবে না। ইতিহাসে এমন অসংখ্য নায়ক কিংবা অত্যাচারীদের মধ্যে কয়েকজনের চারিত্রিক বিষয় বিজনেস ইনসাইডার তথ্যসূত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশিত তথ্য এখানে তুলে ধরা হলো।
কুই শি হুয়াং
কুই শি হুয়াং চীনের কুইন সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট হিসেবে দেশ শাসন করেছেন খ্রিষ্টপূর্ব ২৪৭-২১০ অব্দ পর্যন্ত। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার কারণে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। মাত্র একটি সমাধিতে মানুষের সমান প্রায় ৬ হাজার টেরাকোটা পাওয়া যায়। এগুলোতে মানুষ মেরে রাখা হতো বলে ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায়।
গাইয়াস জুলিয়াস সিজার অগাস্টাস জারমানিকাস
গাইয়াস জুলিয়াস সিজার অগাস্টাস জারমানিকাসের শাসনামল ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৩৭-৪১ অব্দ তার। প্রথম দিকে তিনি জনপ্রিয় থাকলেও ক্ষমতার মোহে ক্রমেই ভিলেন হয়ে ওঠেন তিনি। তিনি তার রাজনৈতিক বিরোধীদের হত্যা করতেন, আবার তাদের পরিবারকে সেই হত্যাকাণ্ড দেখতে বাধ্যও করতেন! শুধু তাই নয়, তিনি নিজেকে ঈশ্বর বলেও ঘোষণা করেন। এই শাসক নিজের বোনদের সঙ্গে সঙ্গম করতেন ও আবার অন্য পুরুষদের সঙ্গে যৌনতায় বাধ্য করতেন। তিনি নিজের একটি ঘোড়াকে ধর্মীয় যাজক বানিয়েছিলেন।
চেঙ্গিস খান
ইতিহাসের এক বিশাল নায়ক ও ভিলেনের নাম হলো চেঙ্গিস খান। মধ্য এশিয়া ও চীনের বিশাল অংশ দখল করেছিলেন চেঙ্গিস খান। এই দখলদারিত্বের জন্য তিনি অসংখ্য মানুষ হত্যা করেন।
অ্যাতিলা দ্য হান
অ্যাতিলা দ্য হান এর শাসনামল ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩৪-৪৫৩ অব্দ পর্যন্ত। তিনি বর্তমানের জার্মানি, রাশিয়া, ইউক্রেন ও বলকান দখল করেছিলেন তিনি শাসক থাকা অবস্থায়।
হু জেতিয়ান
হু জেতিয়ান নামের এই শাসক খ্রিষ্টপূর্ব ৬৯০-৭০৫ অব্দ পর্যন্ত চীন শাসন করেছেন। হু জেতিয়ান ক্ষমতা দখলে নির্দয়ভাবে পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করেছেন।
তৈমুর
তৈমুর ১৩৭০-১৪০৫ সাল পর্যন্ত পশ্চিম এশিয়া অঞ্চল শাসন করেন। আধুনিক ইরাক, ইরান, তুরস্ক ও সিরিয়ায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিজের আধিপত্য। ইতিহাস বলে, আফগানিস্তানে তৈমুর একটি টাওয়ার বানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। যে টাওয়ারটির আকার বানাতে এক দল মানুষ একে অপরের ওপর দাঁড়াবে। এরপর তাদেরকে কংক্রিটে ঢেকে ফেলানো হবে! এমন এক স্বৈরশাসক ছিলেন তৈমুর।
টমাস ডি টর্কিউমাডা
স্পেনিশদের গ্র্যান্ড ইনকুইজিটর ছিলেন টমাস ডি টর্কিউমাডা। ১৪৮৩-১৪৯৮ সাল পর্যন্ত স্পেনের বিভিন্ন অংশে তিনি ধর্মপ্রচার করেছেন। আর এই কাজে চরমতম নির্যাতন চালাতেন তিনি। তার শাসনামলে ২ হাজার ইহুদি প্রাণ বাঁচাতে অন্যত্র পালিয়ে যান।
কুইন মেরি প্রথম
কুইন মেরি প্রথম ছিলেন ইংল্যান্ডের কুখ্যাত কিং হেনরি অষ্টম ও ক্যাথেরিন অব আরাগনের মেয়ে। তিনি ক্ষমতায় আসেন ১৫৫৩ সালে। এরপর স্পেনের রাজা ফিলিপ দ্বিতীয়কে বিয়ে করেন তিনি। ক্যাথলিসিজম চালু করেন তিনি। এ কারণে কয়েক বছর ধরে হাজার হাজার প্রটেস্টেন্টদের মেরেছেন তিনি।
ভ্লাদ তৃতীয়
ভ্লাদ তৃতীয়। এই মানুষটি প্রথমে ভালো থাকলেও পরবর্তীতে রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারের পরিচয় ধারণ করেন। তিনি বিদ্রোহিদের নিষ্ঠুর শাস্তি দিয়ে দমন করতেন। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে তার সবচেয়ে প্রিয় পন্থা ছির শূলে চড়ানো! আস্তে আস্তে এমন এক চরিত্র ধারণ করেন ভ্লাদ তৃতীয়।
জার আইভান চতুর্থ
জার আইভান চতুর্থ মস্কোর গ্র্যান্ড প্রিন্স ছিলেন। তার শাসনামল ছিল ১৫৩৩-১৫৪৭ সাল পর্যন্ত। তিনি প্রথম কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে জনগণের পরিচয় ঘটালেও প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি ক্রমান্বয়ে ত্রাস সৃষ্টিকারী শাসকে পরিণত হন। নিষ্ঠুরতার কারণে তার নামের সঙ্গে ‘ভয়ংকর’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয় বলে ইতিহাসে এমন প্রমাণ রয়েছে।