দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একমাত্র পানিই যে শহরের যাতায়াতের রাস্তা- এমন এক শহরের গল্প রয়েছে আজ ঢাকা টাইমস্ এর পাঠকদের জন্য।
এমন এক শহরের গল্প যেখানে কোনো যান্ত্রিক যানবাহন নেই। আর তাই সেখানে নেই কোনো যানজট, নেই কোনো কোলাহল বা ভিড়ভাট্টা! আছে শুধুই নৌকা। তবে রাস্তা না থাকলে কি হবে, পানির মধ্যে দিয়ে চলাচল করার কারণে প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো বড়ই চমৎকার। অবাক করা এমন একটি শহরের গল্প আপনাদের রয়েছে।

এমন সুন্দর একটি শহর আর কোথাও নয়, এটি ইউরোপের দেশ হল্যান্ডের ছোট্ট একটি শহর যার নাম গেইথর্ন। এই শহরটির বাসিন্দাতের যাতায়াতের একমাত্র পথ হচ্ছে জলপথ অর্থাৎ নৌকা। যেমন আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে রাস্তা করা হয় ঠিক তেমনি, শহরের প্রতিটি বাড়ির সামনে দিয়ে ঠিক সেভাবে পরিকল্পিতভাবে খাল কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যাতে করে সবাই বাড়ি থেকে বের হয়ে নৌকায় করে যাতায়াত করেন। আবার মালামাল পরিবহনের কাজটাও করতে হয় নৌকাতেই। সে কারণে আর্থিক সক্ষমতা থাকলেও শহরবাসীদের কারো পক্ষেই গাড়ি কেনার উপায় নেই। কারণ কোনো রাস্তাই নেই গেইথর্নে!
গাড়ি না থাকার কারণে সেখানে নেই কোনো কালো ধোঁয়ার ঝামেলা। অথবা কোনো হর্নের বিকট শব্দও নেই এই শহরে। যদি নৌকায় চড়তে ভালো না লাগে, সেক্ষেত্রে একটি সরু গলিপথ রয়েছে এই শহরটিতে। সে পথে সাইকেল চালিয়ে কিংবা পায়ে হেঁটে এই বাড়ি হতে ও বাড়ি যাতায়াত করা সম্ভব। শহরটির পোস্টম্যানও একটি ছোট্ট নৌকায় করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিঠি বিলি করেন।
এই শহরটি কিছুদিন আগেও গ্রাম ছিল, তবে পর্যটন খাতে এই ছোট্ট গ্রামটির অংশগ্রহণের কারণে এই গ্রামটিকে পরে ছোট্ট শহরের মর্যাদা দেয় কর্তৃপক্ষ। এই শহরটির জনসংখ্যা ২৬০০।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, পানিপথের শহর বলেই প্রতিবছর গেইথর্নে শহরটিতে অনেক পর্যটক আসেন। ডাচ চলচ্চিত্র নির্মাতা বার্ট হ্যান্সট্রা ১৯৫৮ সালে তার বিখ্যাত হাসির ছবি ‘ফানফেয়ার’ শুটিংয়ের জন্য গেইথর্ন শহরকে বেছে নিয়েছিলেন। তারপরই মূলত প্রচারে চলে এসেছিল তখনকার ছোট্ট এই গ্রামটি। এরপর এই শহরে আরও অসংখ্য ছবির শুটিং হয়েছে। পর্যটকরা শহরটিকে ‘ভেনিস অব নর্থ’ বা ‘ভেনিস অব নেদারল্যান্ডস’ নামে ডাকতেন।
খালের পানি পরিষ্কার রাখার জন্য গ্রামের ছেলেবুড়ো সবাই যথেষ্ট সচেতন। এই পানিতে কোনো কিছু করা হয় না। গোসল করাও নিষেধ। যন্ত্রচালিত নৌকা হতে তেল নিঃসরণ হয় বলে ওই নৌকা এখানে নিষিদ্ধ। এভাবেই এই ছোট্ট শহরটিকে একটি পরিপাটি শহর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এতো সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য যে কাওকে মোহিত না করে পারে না।