দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আলো-বাতাস না থাকলে মানুষের জন্য সেখানে বসবাস করা বড়ই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। আলো পৌঁছায় না এমন কয়েকটি শহরের গল্প রয়েছে আজ আপনাদের জন্য!
আলোছাড়া এমন একটি স্থান হলো সুমেরু বৃত্ত। সেখানে বসবাস করা মানুষদের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় বিবিসিতে। আলোহীন জীবনের অভিজ্ঞতা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। সেখানে মানুষ কিভাবে বসবাস করছে সে বিষয়গুলো উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনটিতে।
আমাদের জীবন চলার পথে বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। যেমন আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠি। দুপুরের দুপুরের খাবার খাই, সন্ধ্যায় নাস্তা আর রাত এলে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যাওয়া। তবে এসব কিছু হয়ে থাকে সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত্রের মধ্যদিয়ে। কিন্তু যদি সুর্যই না ওঠে তাহলে?
মনে করুন ঘুম থেকে উঠে সকালের নাশতা করছেন। কিন্তু জানালা হতে রোদ না এসে আসছে চাঁদের আলো! তখন হয়তো আমাদের পেটে নাশতা যাবে না। আমাদের যে অভ্যাসই থাক না কেনো পৃথিবীর অনেক প্রান্তের মানুষই এভাবে তাদের জীবনকে সাজিয়ে নিয়েছেন।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, সুমেরু বৃত্তে বসবাসকারী মানুষদের এই অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। গরমের দিনে তাদের সূর্যাস্তই হয় না। আবার দেখা গেলো যে, শীতের দিনে সূর্যোদয় হয় না। এক দিন দু’দিন নয়, টানা ৩ মাস একই অবস্থা। কোয়েরা ডটকম নামে একটি সাইটে এদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেখানে তারা তাদের অভিজ্ঞতা বলেছেন।
ভারতের সাই দিপক ভিমারাজু তার এক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে জানিয়েছেন, তিনি ইন্টার্নশিপের জন্য ২ মাস নরওয়ের ট্রন্ডিহেইমে অবস্থান করেন।
দিপক বলেছেন, ‘সেখানকার বাসিন্দারা সবাই এই সময়ে চরমভাবে বিরক্তে থাকে। কারণ এটা তাদের শরীরের সঙ্গে মানায় না। তবে আমার তেমন একটা সমস্যা হয়নি। যদিও আমি মাত্র ২ মাস সেখানে থেকেছি। আমি সকালের নাশতা খেয়েই ঘুমিয়ে পড়তাম। অথচ বাইরে তখন কড়া রোদ। আমার অবশ্য আলোতে ঘুমাতে সমস্যা হয় না।’
ওই সময় দিপকের দিনের কার্যসূচি ছিল- সকালে নাস্তা করে ঘুমিয়ে পড়া। আবার দুপুরের দিকে উঠে ২টা হতে ১০টা পর্যন্ত কাজ করা। ১০টা আবার রাত নয়, কারণ তখনও দেখা যায় মাথার উপর সূর্য! ডিনার করে যখন দিপক সিনেমা দেখতে বসতেন তখনও সূর্যের তেজ একটুও কমেনি!
‘মরুভূমি বাস’! হিসেবে এই অভিজ্ঞতাকে দিপক অভিহিত করেছেন। অবশ্য এর একটা সুবিধার কথাও বলেছেন দিপক, সারাক্ষণ দিনের আলো পাওয়ায় অনেক বেশি চাঙ্গা থাকতে পারতেন তিনি। সারাক্ষণ আলোর মধ্যে থাকাটাকে ‘স্বর্গীয় অনুভূতি’ মনে হয়েছে দিপকের কাছে।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, নরওয়ের ফিনমার্কের এক বাসিন্দা উইলফ্রেড হিল্ডোন। তিনি তার অভিজ্ঞতায় বলেছেন, আলো না নেভা দিনগুলোতে মানুষ আরও বেশি সামাজিক হয়ে ওঠে। দেখা যায় যে ডিনারের পর সবাই ঘুরতে বের হয়েছে। বাচ্চারা ডিনার খেয়েই উৎফুল্লভাবে মাঠে খেলতে নেমে গেছে। এতে কারও কোনো বারণ নেই। ২৪ ঘণ্টার হিসাব মতো তখন রাত ৩টা হবে!
সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সুমেরু বৃত্তে থাকা নরওয়ের একটি ছোট্ট গ্রামের নাম হলো ব্লেইক। সেখানকার বাসিন্দা ফ্রোডে স্যান্ড বলেছেন, শুধু আলো কিংবা আঁধার নয়। খারাপ আবহাওয়া, প্রচুর বরফ, ঠাণ্ডা আবহাওয়া সবকিছু মিলিয়ে এই ধরনের পরিবেশে খাপ খাইয়ে চলাটা বেশ মুশকিল হয়ে পড়ে। ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা এমন আবহাওয়ায় বাস করে ভিটামিন ডি-এর অভাবে ভোগেন। আর যারা একেবারেই মানিয়ে চলতে পারেন না তারা অপেক্ষাকৃত দক্ষিণের দিকে নতুন কোনো আবাসস্থল খুঁজে চলে যান সেখানে। এভাবেই এক যাযাবর জীবন শুরু করেন অনেকেই। কি আর করা প্রকৃতির ওপর তো কারও হাত থাকে না!