দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফ্রান্সে ঘটে গেলো স্মরণকালের এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। বিশ্ববাসী দেখলো সে ঘটনা। ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলার নেপথ্যে আসলে কী ছিল?
শিল্প-সাহিত্যের পীঠস্থান ছাড়াও মুক্তবুদ্ধি চর্চার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে ফ্রান্স বিখ্যাত সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। আর তাই প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত হতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ ফ্রান্সে ভ্রমণ করেন নিজ নিজ সৃজনশীলতা নিয়ে। তবে কি এমন ঘটলো? সৃজনশীলতার পৃষ্ঠপোষক এই দেশটির উপর কেনো একের পর এক আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটছে?
মাত্র বেশ কয়েক মাস আগে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে শার্লি হেবদো নামের একটি ম্যাগাজিন অফিসে হামলা চালায় ইসলামিক স্টেট সংগঠনের একদল বন্দুকধারী। শার্লি হেবদোর ওই হামলায় ম্যাগাজিনটির সম্পাদকসহ মোট ১৭ জনের মৃত্যু ঘটে। ওই ঘটনায় অনেকেই আহত হন।
জানুয়ারি মাসের শার্লি হেবদোর ওই ঘটনার মাস দুয়েক পরেই ইসলামিক স্টেটের অপর এক নারী যোদ্ধার বিচ্ছিন্ন আক্রমণে বেশ কয়েকজন সাধারণ ফরাসি নাগরিকের মৃত্যু ঘটে।
উল্লেখ্য, জানুয়ারির হামলার ঘটনা এবং ওই নারী যোদ্ধার আক্রমণ সংক্রান্ত কোনো বিষয়েরই সুরাহা করতে পারেনি ফ্রান্স সরকার।
এদিকে তথাকথিত ইসলামি সন্ত্রাসী দলগুলোর হাতে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ফ্রান্সের সর্বাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। গত এপ্রিল মাসে ফ্রান্সের সিনেট হতে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ইউরোপ হতে সিরিয়া এবং ইরাকে যুদ্ধ করতে যাওয়া ৩ হাজার ‘জিহাদি’দের মধ্যে শুধুমাত্র ফ্রান্সেরই ছিল ১৪৩০ জন। এই বিশাল সংখ্যক ফরাসি তরুণেরা বিভিন্ন সময়ে ফ্রান্সে ফিরে এসেছে বিগত ৩ বছরের বিভিন্ন সময়। বিশেষজ্ঞের মতে, আর সে কারণেই মূলত অধিকাংশ যুদ্ধফেরত ওই সকল যোদ্ধারাই শার্লি হেবদোর হামলা হতে শুরু করে সর্বশেষ (গত শুক্রবার রাতে) ভয়াবহ প্যারিসের সিরিজ হামলার জন্য দায়ি।
উপনিবেশিক ইতিহাস অনুযায়ী, আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি উপনিবেশ হচ্ছে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে। নিজেদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা সচল রাখার তাগিদে এই দুটি দেশ আফ্রিকার অনেকগুলো মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর উপর চালিয়েছে নানা রকম নির্যাতন। কঙ্গো হতে শুরু করে সিয়েরালিওন পর্যন্ত বিস্তৃত ভুখন্ডে ফ্রান্সের সেনাবাহিনী ও তাদের সমর্থনপুষ্ট ভাড়াটে যোদ্ধার দল যুগের পর যুগ ধরে নৃশংসতা চালায়ে আসছে এমন অভিযোগও রয়েছে। সেইসব নির্যাতনের ধারাবাহিবকতায় লিবিয়াতেও ফ্রান্স সরকার নাকি আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করে। সর্বশেষ লিবিয়া যুদ্ধে ফ্রান্সের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ সেটি বলে দেয়।
সুতরাং, যখন মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেট বিভিন্ন কায়দায় সংগঠিত হয়ে গোটা বিশ্বের উপর হুমকি হিসেবে দাঁড়াচ্ছে, তখন ফ্রান্সের উপর কোনো পদক্ষেপ তারা নেবে সেটি ভাবাটাই কি স্বাভাবিক নয়?
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে প্যারিসের বিভিন্ন স্থানের রেস্টুরেন্ট, বার এবং স্টেডিয়ামসহ কমপক্ষে ৬টি স্থানে একযোগে বন্দুক ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। শহরের কেন্দ্রস্থল বাটক্লঁ কনসার্ট হলেই অন্তত ১১২ জন ফরাসি নিহত হয়।