দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এবার জঙ্গি হামলার ঝুঁকিতে উঠে এসেছে চীন। স্থানীয় উইঘুর গোষ্ঠির আক্রমণের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে চীনকে সেভাবে দেখা হয়নি এতোদিন।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে নানা অঘটন দেশটির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মনে করা হচ্ছে বর্তমান সময়ে চীনও জঙ্গি হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের একটি কয়লা খনিতে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী গত নভেম্বরে অভিযান চালিয়ে অন্তত ২৮ সন্দেহভাজনকে হত্যা করে। এই ঘটনায় দেশটির উইঘুর সম্প্রদায় জড়িত বলে সন্দেহ করছে চীন।
চীন সরকার মনে করে যে, জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে উইঘুরের কোনোই পার্থক্য নেই। তবে মানবাধিকার কর্মীদের ধারণা, দমনমূলক ধর্মীয় নীতি এবং অর্থনৈতিক প্রান্তিকীকরণ জিনজিয়াং পরিস্থিতিকে আরও বিশৃঙ্খল পরিস্থিরি দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। কেনোনা সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান আবাসস্থল সম্পদে সমৃদ্ধ চীনের পশ্চিমাঞ্চল জিনজিয়াং। এই প্রদেশটিতে জাতিগত বিভক্তি রয়েছে।
বেইজিং দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, উইঘুর ইস্যুতে বিশ্ব দ্বৈত নীতি দেখাচ্ছে। কেনোনা অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী হামলা হলে যেভাবে সহানুভূতি দেখানো হয়ে থাকে, চীনের ক্ষেত্রে তা কখনও ঘটে না।
গত বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং সংবাদ মাধ্যম সিএনএনকে জানান, অন্য দেশের সহিংসতার ঘটনা সন্ত্রাস হিসেবে দেখা হলেও, চীনের ক্ষেত্রে জাতিগত ও ধর্মীয় ইস্যুকে টেনে আনা হয়। অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনকে সমর্থন করা হলেও, চীনের ক্ষেত্রে তা কখনও করা হয় না। এই বিষয়টিকে চীন বহিঃর্বিশ্ব তথাকথিত জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বলে মনে করছে।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১৩ নভেম্বর প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর জিনজিয়াং প্রদেশে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চাই চীন।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ইয়ি রয়টার্সকে বলেছেন, চীন সন্ত্রাসবাদের শিকার। পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টের (ইটিআইএম) বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লড়াই আরও তীব্র করা দরকার।
বেইজিং দাবি করে আসছে, চীনে সহিংসতার পেছনে ইটিআইএম গোষ্ঠীর হাত রয়েছে। টুইন টাওয়ারে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এই সংগঠনটিকে কালো তালিকাভূক্ত করে। তারপরও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ইটিআইএমকে আল কায়েদা কিংবা আইএসের আদলে দেখতে একেবারে নারাজ।
মনে করা হয়ে থাকে, সুসংগঠিত জঙ্গিগোষ্ঠীর চেয়ে জিনজিয়াংয়ের আশপাশে অনেক ছোট গোত্র এবং ব্যক্তিগত সহিংসতার ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে। কারণ এই অঞ্চলের সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। এর কারণ হলো, চীনা সরকার এই প্রদেশে সাংবাদিক এবং বেসরকারি সংগঠনের কর্মীদের প্রবেশের ওপর কড়া নজরদারি করে থাকে।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চীনের পরিচালক সোফি রিচার্ডসন এ বিষয়ে বলেছেন, চীনের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে প্রাণহানির ঘটনায় বেইজিংয়ের কৌশল এবং উদ্দেশ্য নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। যদি চীন কোনো কিছু গোপন করতে না চায়, তাহলে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, কূটনৈতিক ও অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের ওই অঞ্চলে অবাধ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন। তাহলে ওই অঞ্চলের প্রকৃত চিত্র জনসমক্ষে উঠে আসবে।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় ট্যাবলয়েড পত্রিকা দ্য গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে আইএসের হয়ে সিরিয়া ও ইরাকে ৩০০ চীনা নাগরিক যুদ্ধ করেছে। এরা যদি চীনে ফিরে আসে তাহলে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। সব মিলিয়ে জঙ্গি হামলার ঝুঁকিতে উঠে এসেছে চীন।