দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাম্প্রতিক সময়ে জিকা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী চরম তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ব্রাজিল ও আমেরিকাসহ বেশ কিছু দেশে ইতিমধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। কিভাবে ছড়ায় ও রক্ষার উপায় কী? এই জিকা ভাইরাস নিয়েই প্রতিবেদন।
# কোথা হতে এলো এই জিকা ভাইরাস?
উগান্ডার জিকা বন হতে ‘জিকা’ নামটি নেওয়া হয়েছে। এটির আবির্ভাব ঘটেছে ১৯৪৭ সালে। সেসময় হলুদ জ্বর নিয়ে গবেষণার সময় বিজ্ঞানীরা জিকা বনে একটি খাঁচার মধ্যে একটি বানর রাখে। পরে বানরটি জ্বরে পড়লে তার দেহে একটি সংক্রামক ব্যধির উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। ১৯৫২ সালে এই ভাইরাসটির নাম দেওয়া হয় জিকা ভাইরাস। ১৯৫৪ সালে প্রথম নাইজেরিয়ায় একজন মানুষের দেহে এই ভাইরাস পাওয়া যায়।
# জিকা ভাইরাস আসলে কী?
পশ্চিম গোলার্ধের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার ভাইরাস হলো জিকা ভাইরাস। ইয়েলো ফিভার, ওয়েস্ট নাইল, চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গু যে গোত্রের সদস্য ভাইরাস, জিকা ভাইরাসও ঠিক একই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত একটি ফ্লাভিভাইরাস। এটি অনেকটা ডেঙ্গুর মতো হলেও এর থেকে হালকা প্রভাব ফেলে দেহে।
# জিকা ভাইরাসটি কীভাবে ছড়ায়?
এই ভাইরাসটি মূলত দ্রুত ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটেছে এমন কোনো রোগীকে এডিস মশা কামড়ানোর মধ্যদিয়ে এর স্থানান্তর হয়ে থাকে। পরে ওই মশাটি অন্য ব্যক্তিদের কামড় দিলে সেই ব্যক্তির এই ভাইরাস আক্রান্ত করে থাকে।
# জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত বোঝার উপায়?
জিকা ভাইরাসে সংক্রামিত ব্যক্তিদের শরীরে ভাইরাসটির খুব সামান্য উপসর্গ দেখা যায়। যেমন- জ্বর, মাথাব্যথা, কাশি ও চোখ গোলাপি রঙ ধারণ করা ইত্যাদি। শতকরা ৮০ শতাংশ সংক্রামিত ব্যক্তিই বুঝতেই পারেন না যে তাদের শরীরে ভাইরাসটি রয়েছে। এসব কারণে ভাইরাসটি নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই সুযোগে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আপনার রোগটি হয়েছে বলে সন্দেহ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
# ভাইরাসটি কাদের বা কী কারণে ক্ষতিকর?
এই রোগটি সাধারণ মানুষের তেমন কোনো ক্ষতি করে না। মাত্র কয়েকদিন বিশ্রাম করলেই তা সেরে ওঠে। তবে গর্ভবতী নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হলে তার গর্ভস্থ শিশুর মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
# গর্ভাবতীদের কোন পর্যায়ে জিকা ভাইরাস বিপজ্জনক?
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে যদি এই জিকা ভাইরাস আক্রমণ করে তাহলে তা খুব বেশি বিপজ্জনক। এই সময় ভাইরাসটি গর্ভস্থ শিশুর দেহে আক্রমণ করে ও শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি এবং বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
# জিকা ভাইরাস শিশুর মস্তিষ্কের কীভাবে ক্ষতি করে?
জিকা ভাইরাস মূল শিশুর মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে। কারণ মাইক্রোসেফালি নামে একটি নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার এই ভাইরাসটির মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। সে কারণে সদ্যজাত শিশুদের মস্তিষ্ক স্বাভাবিক আকারের চেয়ে অনেক ছোট হয়। আবার শিশুদের মাঝে বিকাশজনিত সমস্যা দেখা দেয়। এমন কি কখনও কখনও শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।
# বিশ্বের কোন কোন দেশে গর্ভবতীদের জন্য এটি বিপজ্জনক?
বিশ্বের প্রায় দুই ডজনেরও বেশি দেশে এই ভাইরাসটি সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ক্যারিবিয়ান, মধ্য আমেরিকান এবং দক্ষিণ আমেরিকান দেশ। এল সালভাদোর, কলম্বিয়া, হন্ডুরাস, ইকুয়েডরের মতো দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলি ২০১৮ সাল পর্যন্ত মহিলাদের সন্তানধারণের পরিকল্পনা বাতিল করতে বলেছে- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’। ‘হু’ জানিয়েছে, ‘জিকা ভাইরাস বিস্ফোরণের মতো ছড়িয়ে পড়ছে।’
# বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস আক্রমণের সম্ভাবনা কতখানি?
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’। সে কারণে ভারত হতে বাংলাদেশেও আক্রমণ হতে পারে এই জিকা ভাইরাসের। সরকার তাই সতর্কতা গ্রহণ করেছে চেকপোস্টগুলোতে।
# জিকা ভাইরাস আক্রান্ত দেশে ভ্রমণকারীদের কী করা উচিত?
ভ্রমণকারী বিশেষ করে গর্ভবতী নারীরা জিকা ভাইরাস আক্রান্ত দেশে ভ্রমণ করলে তার রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষাও করাতে হবে। চিকিৎসক তখন ওই ব্যক্তির দেহের লক্ষণ মিলিয়ে জিকা ভাইরাস হয়েছে কি না, তা জানাতে পারবেন।
# জিকা ভাইরাস আক্রান্ত হলে শিশুরও পরীক্ষা করাতে হবে?
জিকা ভাইরাস আক্রান্ত হলে অবশ্যই শিশুরও পরীক্ষা করাতে হবে। তবে এক্ষেত্রে মায়ের যদি জিকা ভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থাকে বা অন্য কোনোভাবে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে শিশুর পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে।
# জিকা ভাইরাসের চিকিৎসা কী?
এখন পর্যন্ত জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। তবে এই রোগটি সাধারণ মানুষের তেমন কোনো ক্ষতি করে না। কয়েকদিন বিশ্রাম করলেই সেরে ওঠে।
# জিকা ভাইরাসের কোনো টিকা রয়েছে কি না?
জিকা ভাইরাসের কোনো টিকা নেই। এখনও জিকা ভাইরাসের কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে টিকা বানানোর চেষ্টা করছেন গবেষকরা। টিকা আবিষ্কার হতে এক দশক সময় লাগতে পারে।
# কীভাবে এই ভাইরাস হতে নিরাপদ থাকবেন?
এখন পর্যন্ত যেহেতু জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো টিকা বা এটির চিকিৎসায় কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি, তাই সংক্রমিত অঞ্চল কিংবা আক্রান্ত দেশগুলো ভ্রমণ হতে বিরত থাকতে হবে। ভাইরাসটির সংক্রমণ হতে বাঁচতে এটাই একমাত্র উপায় বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন।
# ভাইরাসটি বহু আগে শনাক্ত হলেও কেনো প্রতিরোধে ব্যবস্থা হয়নি এতোদিন?
প্রকৃত ইতিহাস হলো, অতীতে জিকা ভাইরাস আক্রান্তদের তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়নি। সে কারণে ভাইরাসটির প্রতিরোধক ওষুধ তৈরি হয়নি।
# কোন কোন দেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে?
আমেরিকাজুড়ে এখন পর্যন্ত অন্ততপক্ষে ২৫টি দেশে জিকা ভাইরাসটি স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছে। এসব দেশগুলো হচ্ছে- বার্বাডোজ, বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, কেপ ভেরদে, ডোমিনিকান রিপাবলিক, ইকুয়েডর, এল সালভাদর, ফ্রেঞ্চ গুয়ানা, গুয়াদেলুপ, গুয়েতেমালা, গুইয়ানা, হন্ডুরাস, হাইতি, মেক্সিকো, পানামা, মারতিনিক, প্যারাগুয়ে, সেন্ট মার্টিন, পুয়ের্তো রিকো, সুরিনাম, সামোয়া, দ্য ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডস এবং ভেনেজুয়েলা। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সিডিসি এ তথ্য দেয়।