দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শিক্ষায় সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবেন সেটিই ছিল স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কিন্তু জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে যবনিকাপাত ঘটেছে তার।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম ঘটে গেছে যে ঘটনা, সেই গুলশানের স্মরণকালের ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলাকারী হিসেবে শনাক্তকৃত নিব্রাস ইসলামও এমন একজন। আইএস এর দেওয়া তালিকা ও নিহতদের তালিকার সঙ্গে মিলে যায় এই যুবকের পরিচয়। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। অথচ শিক্ষা জীবন থেকেই হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। গত এক বছর আত্মগোপন করে ছিলেন। কেও কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না। কিন্তু গুলশানের ঘটনার পর বেরিয়ে আসে আসল রহস্য।
তার সহপাঠিরা প্রথমে তাকে শনাক্ত করেছে। ফেসবুক একান্ট থেকে পাওয়া যায় তার তথ্য ও ছবি। আইএস’র দেওয়া ছবি এবং নিহত সন্ত্রাসী তালিকার মধ্যে চিহ্নিত হয় নিব্রাস ইসলাম।
আইএস বা জঙ্গি সংগঠনগুলো একটু ধর্মভীরুদের টার্গেট করেন। যাদের মধ্যে ধর্মভীরুতা লক্ষ করেন তাদেরকে বেছে বেছে টার্গেট করেন। এক সময় তাদের ব্রেণ ওয়াশ করে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
ইসলাম ধর্মের দোহায় দিয়ে এদের এই লাইনে আনা হয়। কোনআন ও হাদিসের কিছু মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের ব্রেণ ওয়াশ করা হয়। যে কারণে মানুষকে খুন করার মতো জঘন্যতম কাজ করতে বা নিজের জীবন উৎসর্গ করতে তারা প্রস্তুত হয়ে পড়ে। তারা মনে করে এতেই তাদের স্বর্গ লাভ হবে। কিন্তু তারা কখনও জানে না বা বুঝতে পারে না আসলে ইসলামের প্রকৃত বক্তব্য কি।
তাদেরকে জেহাদের কথা বলা হয়। আসলে জেহাদের প্রকৃত সংজ্ঞা কি তাদের সে ধারণা পাল্টে দেওয়া হয় প্রকৃত অর্থে। শিশু বয়স হতে বড় হওয়া অবধি যে ছিল পারিবারিক গণ্ডির মধ্যে তাকে শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিজেদের মতো করে বুঝ দেওয়া হয়।
ইসলামে জেহাদের বিষয়টি থাকলেও সেটি কি ক্ষেত্রে করা হয় তার অপব্যাখ্যা দেওয়া হয় প্রকৃতপক্ষে। ইসলাম অন্য কোনো ধর্মের মানুষকে নিষংসভাবে খুন করার কথা কখনও বলেনি। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর বক্তব্য উদ্বৃত করে বিভিন্ন হাসিসে বলা হয়েছে, ‘কেও যদি তোমাকে গালি দেয়, তাহলে তাকে ভালোভাবে বোঝাও। যদি সে না বোঝে তাহলে তার কাছ থেকে সরে আসো।’
স্কুলে নিষ্পাপ সেই ছেলেটি!
ইসলাম শান্তির ধর্ম। আর সে ধর্মে কোনো মানুষকে এভাবে নির্দয়ভাবে খুন করার কোনো সুযোগই নেই।
নিব্রাস ইসলামের মতো এমন বহু যুবক আজ জঙ্গি সংগঠনের পতাকা তলে গিয়ে পৌঁছেছে। যারা এই সমাজে হতে পারতো সুস্থ্য জীবনের অধিকারী তারা আজ বিপথগামি হয়ে নিজের জীবন হারাচ্ছে অকালেই। এমনটি সত্যিই অগ্রহণযোগ্য। আমরা ইসলামের ধারক-বাহক। কেও ইসলামকে কটুক্তি করলে অবশ্যই তার প্রতিবাদ করবো তবে সেটি হবে শান্তিপূর্ণভাবে। অযথা রক্তপাত বা বিশৃংখলা সৃষ্টি করে কখনও শান্তি পাওয়া যায় না। আর এখন সময় এসেছে সেই কথাটি সকলকে অবগত করার। আমরা আর কোনো নিব্রাস ইসলাম হতে দিতে পারি না।
সমাজের সকল বাবা-মাদের কাছে আবেদন, আপনার সন্ত্রান কখন কোথায় যায়, কি করে তার খোঁজ রাখুন। সন্ত্রান বড় হয়েছে বলে তার খোঁজ নেওয়ার এখতিয়ার নেই বা খোঁজ নেওয়া উচিত নয়, এমন ভাবা মোটেও ঠিক নয়। বিষয়টি নিয়ে সমাজের সর্বস্তরের সকলকে সচেতন হতে হবে। তা নাহলে আমাদের চোখের সামনে একের পর এক ঘটতে থাকবে এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা। যা আমাদের কারই প্রত্যাশা নয়।