দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ১২ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো ইতিহাস হলো হিন্দু ধর্মের ইতিহাস। এবার এক বিষ্ণু মন্দিরের সন্ধান মিলেছে বালির সমুদ্রের তলায়!
কালে কালে ধর্মের অনেক বিস্তার লাভ করেছে। যেমন এক সময় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া হতে কম্বোডিয়াতে বিস্তার ঘটেছিল হিন্দু ধর্মের। এবার এমনই এক রহস্যময় তৎকালীন বিষ্ণু মন্দিরের সন্ধান মিলেছে বালির সমুদ্রের তলায়।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, ইন্দোনেশিয়ার বালির উপকূল ঘেঁষা একটি গ্রাম যার নাম পেমুটেরান। এখানেই সমুদ্রের তলায় খোঁজ মিলেছে এক প্রাচীন বিষ্ণু মন্দিরের। পদ্মের উপর বসে থাকা বিষ্ণু মূর্তিও পাওয়া গেছে সেখানে। সেখানে পানির নীচে ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তিও রয়েছে। সেইসঙ্গে সেখানে রয়েছে এক বুদ্ধ মন্দির। পুরো এলাকাটি ঘিরে রেখেছে এক পাথরের দেওয়াল!
এখানকার দৃশ্য দেখে মনে হতেই পারে এখানে একটা সময় বিশাল বাগানও ছিল। পানির তলায় থাকা এইসব বিষ্ণু ও বুদ্ধ মন্দির দর্শন করতে ডুবুরির পোশাক পরেই নামতে হয়। পর্যটকদের জন্য বর্তমানে এলাকাটিতে স্কুবা ডাইভিং চালু করা হয়েছে। ফি বছরই প্রচুর সংখ্যক পর্যটক ভীড় জমাচ্ছেন সমুদ্রের তলায় এইসব বিষ্ণু মন্দির দেখতে।
এক সময় ইন্দোনেশিয়া ছিল হিন্দু ধর্মে প্রভাবিত। যে কারণে সেখানে প্রাচীন হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি কিংবা মন্দির পাওয়া খুব একটা অত্যাশ্চর্য বিষয় ছিলো না।
তবে ঘটনা যায়ই হোক না কেনো, পানির গভীরে বিষ্ণু মন্দির ও তার গায়ে গা লাগিয়ে বুদ্ধ মন্দির থাকাটা সত্যিই বিষ্ময়কর একটি ব্যাপার। এই প্রশ্ন উঠেছিল বিশ্বজুড়ে।
২০০৫ সালে বালি উপকূলের যে পেমুটেরান গ্রামের সমুদ্রের তলায় বিষ্ণু মন্দির ও বুদ্ধ মন্দিরের খোঁজ পাওয়া যায় সেখানে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না বলেই অনেকে দাবি করে থাকেন।
এটি জানাজানির পর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ইতিহাসবিদরা ছুঁটেছিলেন পেমুটেরানে। ভারত হতেও হিন্দু ধর্ম নিয়ে গবেষণাকারীর দল পৌঁছেছিলেন পেমুটেরানে। ইন্দোনেশিয়া সরকারও সরকারিভাবে তদন্তের নির্দেশ দেন। সেদেশের পুরাতত্ত্ব বিভাগও এটির তদন্তে নামে।
পরবর্তীতে দেখা যায় যে, পুরো ঘটনাই সাজানো। সমুদ্রের তলায় ৫ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো বিষ্ণু মন্দির ও বুদ্ধ মন্দির পাওয়া গেছে বলে যে দাবি করা হচ্ছিল, সেটি সঠিক নয়।
জানা যায়, ‘পরিবেশ রক্ষা’ সংক্রান্ত এক প্রকল্পের অঙ্গ হিসাবে পেমুটেরান গ্রামে সমুদ্রের তলায় একটি ‘রিফ গার্ডেন’ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যেহেতু ইন্দোনেশিয়ায় হিন্দু ধর্মের প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে, তাই এই বিষয়টিকে কাজে লাগাতেই বিভিন্ন স্থান হতে প্রাচীন বিষ্ণু মূর্তি ও বুদ্ধ মূর্তি সংগ্রহ করে এখানে আনা হয়। আবার কিছু দেবদেবীর মূর্তি প্রাচীন মূর্তির মতো করে বানিয়েও নেওয়া হয়!
শুধু তাই নয়, সমুদ্রের তলায় মন্দির ও পাথুরে বাগান যে বসবে, তার সবটাই পানির উপরে তৈরি করা হয়। এরপর অত্যন্ত দক্ষ স্কুবা ডাইভারদের দিয়ে এগুলি পানির তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মূর্তি, মন্দির ও পাথুরে বাগানকে স্থাপন করা হয়। দু’ধাপে এই ‘রিফ গার্ডেন’ পানির তলায় তৈরি করা হয় বলে স্বীকার করে নেন ক্রিস ব্রাউন নামে এক অস্ট্রেলিয়ান!
সমুদ্রের ২৯ ফিট গভীরে এর জন্য আড়াই হাজার স্কোয়ার মিটার জায়গাকে চিহ্নিতও করা হয়েছিল এই ব্রাউনেরই মস্তিষ্কপ্রসূত ‘রিফ গার্ডেন’ তৈরির জন্য। পর্যটক টানতে তাই ৫ হাজার বছরের বেশি পুরনো মন্দিরের গল্প প্রচার করা হয়েছিল! কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ফাঁস হয়ে গেছে আসল রহস্য!