দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাম্প্রতিক বাংলাদেশে পোশাকশিল্প কারখানায় ধস, আগুন এবং শ্রমিক অসন্তোষ সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। অথচ এই পোশাক শিল্পই তৈরি করছে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। এর মাঝে আশুলিয়াতে অবস্থিত পোশাক কারখানায় মজুরী বাড়ানোর দাবীতে মাঠে নেমেছে পোশাক শ্রমিকরা। ফলশ্রুতিতে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ আশুলিয়াতে অবস্থিত সকল পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। বিজিএমইএ তাদের এমন ধারায় কারখানা বন্ধ ঘোষণা দেয় যাতে যে কয়দিন কারখানা বন্ধ থাকবে ওই দিন শ্রমিকরা বেতন পাবেন না। সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নের এ প্রধান খাত এখন হুমকির সম্মুখীন।
আশুলিয়াতে পোশাক কারখানা খোলার বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিজিএমইএ প্রশাসন সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। তারা জানান কারখানার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকার ও শ্রমিক নেতাদের তা না হলে কারখানা খোলা হবেনা। তবে আশুলিয়াতে দেখা গেছে কিছু সাধারন কারখানা মালিক তাদের কারখানা খোলা রেখেছেন এবং সেখানে শ্রমিকরাও কাজে যোগ দিয়েছেন। এর কারন হিসেবে সংস্লিঠ কারখানা মালিকরা জানান এখন কাজের ভরা মৌসুম। এসময় কারখানা বন্ধ রাখলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক যা পরবর্তীতে পুষিয়ে আনা সম্ভব নয়। এনভয় গ্রুপের মালিক বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ পোশাক কারখানা বিজিএমইএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। কারখানা মালিকদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিজিএমইএ নেতারা এ সিদ্ধান্ত নেন।’ কারখানাগুলো কবে নাগাদ পুনরায় খুলে দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা মিটিংয়ে বসেছি, সিদ্ধান্ত হলে জানিয়ে দেওয়া হবে।
জানা যায় আশুলিয়াস্থ জিরাবো এলাকা থেকে বাইপাইল মোড় পর্যন্ত বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কের দুই পাশে অবস্থিত প্রায় সব পোশাক কারখানাই বন্ধ ছিল। একদিন বন্ধের ফলে এ এলাকায় অবস্থিত ৩০০ কারখানার ৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এদিকে সাভারের রানা প্লাজার ঘটনার পর থেকে গত ২০ দিনের মাঝে ১৭ দিনই এই এলাকার পশাক কারখানা গুলো বন্ধ ছিলো। এর ফলে বিরাট অংকের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এসব কারখানা।
এতদিন কারখানা বন্ধ থাকলে কেবল মালিকরাই ক্ষতির সম্মুখীন হলেও এখন এই নতুন নিয়মের ফলে শ্রমিকরা ও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। যে কয়দিন কারখানা বন্ধ থাকবে ওই কয়দিন শ্রমিকরা বেতন পাবেন না। মাস শেষে তাদের থেকে বন্ধের দিন গুলোর মজুরি কেটে নেওয়া হবে। আশুলিয়া এলাকায় আনুমানিক ৩০০ কারখানায় কত শ্রমিক কাজ করেন তার প্রকৃত হিসেব নেই। তবে ধারনা করা হচ্ছে এ সংখ্যা ৩ লাখেরও বেশি। এ অঞ্চলের একজন পোশাক শ্রমিক মাসে গড়ে ওভার টাইম সহ ৮ হাজার টাকার মত বেতন পান। অতএব ওই এলাকায় শুরু হওয়া অনির্দিষ্ট কালের কারখানা বন্ধে প্রতিদিন শ্রমিকদের গড়ে ২৬৬ টাকা হারে বেতন কাটা যাবে। সব মিলিয়ে আশুলিয়া এলাকাতেই এক দিনে মোট সাত কোটি ৯৮ লাখ টাকা মজুরি কাটা যাবে।
এদিকে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ার পরপরি সরকার শ্রমিকদের জন্য পৃথক মজুরি বোর্ড গঠন করে। এ মজুরি বোর্ড যে মজুরি কাঠামো ঘোষণা করবে, তা মে মাস থেকেই কার্যকর করার ঘোষণাও আসে সরকারের পক্ষ থেকে। যা নিয়ে মালিকরা তাৎক্ষণিক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আর শ্রমিক নেতারা সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
শ্রমিক নেতারা সরকারের মজুরি বোর্ডের গঠন এবং গৃহীত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও আশুলিয়া এলাকার শ্রমিক অসন্তোষ থামেনি। শ্রমিকরা নিজেদের বেতন ঠিক রাখতে সকালে কাজে যোগ দিয়ে হাজিরা দেয় এবং পরে কাজ চালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। শ্রমিকদের এমন আচরণে মালিকরা চরম বিরক্ত কারন হাজিরা দিলেই শ্রমিকদের মজুরি দিতে হয়।
এদিকে বিজিএমইএ নেতারা বলছেন এই শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে কোন মহলের উস্কানি আছে, তা নাহলে মজুরি বোর্ড গঠনের পরই আন্দোলন থেমে যেত।
তবে শ্রমিক নেতা বাবুল আক্তার বলেন “ শ্রমিক অসন্তোষ আগেই থেমে যেত, কিন্তু মজুরি বোর্ডের ঘোষণায় বেশ কিছু অস্পষ্টতা থাকার কারনে শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।“ তিনি আরো জানান, সরকার ঘোষিত মজুরি বোর্ডের ক্ষাত্রে বেশ কিছু অস্পষ্টতা আছে যেমন বোর্ড কবে হবে, কাদের নিয়ে গঠিত হবে তা বলা হয়নি।“
বিজিএমইএর সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি, দুষ্কৃতকারীদের দিকে আঙ্গুল তুলে বলেন প্রকৃত শ্রমিকরা এর জন্য দায়ী নয়। মোট শ্রমিকের এক শতাংশ দুষ্কৃতকারী, তারা এসব অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছে। এসব শ্রমিকের মদতদাতা শ্রমিক নেতারা খুবই শক্তিশালী। তাদের কিছুতেই আইনের আওতায় আনা যায় না।
উল্লেখ্য গত ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর থেকে আশুলিয়া এলাকার পোশাক শ্রমিকরা প্রায় প্রতিদিনই ক্ষতিপূরণ সহ সকল গারমেন্ট শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবীতে আন্দোলন ও কারখানা ভাংচুর করে আসছেন।
সংবাদ সূত্রঃ কালেরকন্ঠ