দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীতে যে কতোরকম উৎসব রয়েছে তা গুণে শেষ করা যাবে না। আজ রয়েছে এক বীভৎস ‘উৎসব’-এর গল্প! প্রকাশ্যে মেয়েদের গণধর্ষণ করাই নাকি ‘উৎসব’! এই আধুনিক যুগেও কী এমন বর্বরতা সম্ভব?
পৃথিবীতে যে সমস্ত আদিম বর্বরোচিত প্রথা এখনও প্রচলিত রয়েছে, তারমধ্যে এটি অন্যতম। মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত এই প্রথা অনুষ্ঠিত হয় একটি ‘উৎসব’ কিংবা ‘খেলা’ হিসেবে! এই খেলার মূল লক্ষ্য হলো প্রকাশ্যে মহিলাদের গণধর্ষণ!
‘তাহাররুশ’ নামের এই খেলা প্রচলিত রয়েছে মূলত মিশনে। আবার মধ্য প্রাচ্যের কোনও কোনও দেশেও প্রচলিত রয়েছে এমন বীভৎস প্রথার। নির্ভরযোগ্য সূত্রের মতে, বর্তমানে ওই অঞ্চলে অন্তত হাজারের উপর এমন মহিলা রয়েছেন যাঁরা ‘তাহাররুশ’ চলাকালীন নিগৃহীত হয়ে থাকেন। ‘নিগ্রহ’ বলতে প্রকাশ্যে মহিলাদের শারীরিকভাবে আঘাত করা, বিবস্ত্র করা, এমনকি সুযোগ পেলে তাদের চরম সর্বনাশ করা। সর্বদাই এই নিগ্রহটি ঘটে ভিড়ের মধ্যে। নিগ্রহকারীদের সংখ্যা হয় অজস্র। যে কারণে না যায় সেই সমস্ত লাঞ্ছনাকারীদের চিহ্নিত করা, না যায় তাদের কোনওভাবে শাস্তি সুনিশ্চিত করা।
বিগত প্রায় এক যুগ সময় ধরে মিশরে চলছে এই নারকীয় উৎসব। রমাদান উদযাপনের সময়েই আয়োজন করা হয়ে থাকে এই তাহাররুশ জামা-ই-এর।
জানা যায়, এই খেলার সময় উপস্থিত খেলোয়াড়রা (যারা সকলেই পুরুষ) নিজেদের মধ্যে একটির ভিতর আর একটি অর্থাৎ সমকেন্দ্রিক তিনটি মানববৃত্ত তৈরি করে থাকে। বৃত্ত তিনটির কেন্দ্রে এনে ফেলা হয় এক কিংবা একাধিক পথচারী মহিলাকে। প্রথম বৃত্তটিতে দাঁড়ানো পুরুষদের লক্ষ্য হলো একেবারে কেন্দ্রে থাকা মহিলাদের কাছে পৌঁছানো। শুধু তাই নয়, তাদের শারীরিকভাবে ভোগ করা।
দ্বিতীয় বৃত্তে দাঁড়ানো পুরুষরা চেষ্টা করে প্রথম বৃত্তে থাকা খেলোয়া়ড়দের সরিয়ে তাদের স্থান করে নিতে। যে কারণে প্রবল ঠেলাঠেলির সৃষ্টি হয়। অপরদিকে তৃতীয় বৃত্তে থাকা খেলোয়াড়দের কাজ হলো ভিতরে ঘটে চলা সমস্ত ঘটনাকে পথচারীদের চোখ হতে আড়াল করে রাখা। এরমধ্যে আবার কিছু খেলোয়াড় আক্রান্ত মহিলাদের রক্ষা করার ভান করে। আসলে তাদেরও লক্ষ্য থাকে আক্রান্ত মেয়েটিকে ভোগ করা। ওই উত্তপ্ত জনগণকে ওই হাতে গোনা কয়েকজন ‘রক্ষাকারী’র পক্ষে যে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়, সেটি বলাই বাহুল্য।
এই বর্বরোচিত খেলার খবরটি বহুবছর যাবত মিশর ও মধ্য প্রাচ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। বিষয়টি বৃহত্তর দুনিয়ার কাছে প্রথম প্রকাশ্যে আসে তখন, যখন আমেরিকান সংবাদসংস্থা সিবিএস-এর রিপোর্টার লারা লোগান তাহাররুশে নিগৃহীত হন। মিশরের রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারকের পতনের পরে লারা গিয়েছিলেন সেখানে রিপোর্টিং করতে। মিশরের তাহরির স্কোয়্যারে তাহাররুশে উন্মত্ত জনগণ ঘিরে ধরে সাংবাদিক লারাকে। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে চলে তাঁর উপর অত্যাচার। কয়েক মাস পর একটি সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই জানান তার এই লাঞ্ছনার বিষয়টি।
২০১৬-র জানুয়ারির দিকে তাহাররুশের মতো ঘটনা লক্ষ করা যায় জার্মানি-সহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশেও। জানা যায়, সে সময় উন্মত্ত জনগণের হাতে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত হন ইউরোপের প্রায় হাজারখানেক নারী। সেইসব দেশের প্রশাসন বলেছে, মধ্যপ্রাচ্য হতে আগত উদ্বাস্তুরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। অর্থাৎ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হলো, উদ্বাস্তুদের হাত ধরে তাহাররুশ সংস্কৃতির আগমন ঘটে ইউরোপেও। মূলত সে সময় এই বীভৎস খেলার উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়েই এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উঠে আসে।
এই একবিংশ শতকে এসেও তাহাররুশের মতো বর্বরোচিত একটি উৎসব যে নির্বিচারে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে, তা মানবতার জন্য সত্যিই লজ্জার বিষয়। বর্তমান মানবসমাজ একদিকে নারীর সম্মান রক্ষার জিগির তুলছে, অন্যদিকে সেই নারীর সম্মানহানিকে উৎসবের আকার দেওয়া হচ্ছে! এমন অমানবিকতা, বর্বরতা কখনও মেনে নেওয়া যায় না। বন্ধ করা হোক এমন বর্বরোচিত বীভৎস খেলা। সভ্য সমাজে এমন অসভ্য কর্মকাণ্ড মানায় না।