দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রাগ কোনো রোগ নয়। মানুষ বলতেই রাগ, অভিমান, সুখ, দুঃখ থাকবে। তবে রাগ মানুষের অনেক শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। রাগকে রোগ বলা চলেনা, অপরদিকে এটি কোনো মানসিক সমস্যা ও নয়। প্রত্যেকটি সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তাশীল মানুষের আবেগের বহিপ্রকাশ। যেকোনো বিরক্তিকর, ইচ্ছাবিরুদ্ধ কোনো কাজের ফলে রাগের উদ্ভব হতে পারে। রাগের ফলে সামান্য উত্তেজনা থেকে প্রবল উত্তেজনা, ক্রোধোন্মত্ততা পর্যন্ত এ আবেগের বিস্তৃতি হতে পারে। যদি রাগ নামে এ আবেগটিকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, যদি এ আবেগটি অতি উচ্ছ্বসিত আকারে প্রকাশ পায় তখন দেখা দেয় নানা সমস্যা।
মানুষ রাগ করে, যে তিন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায় –
- মানসিক, শারীরিক এবং ব্যবহারিক। যদি রাগের ফলে কারো মাথা গরম হয়ে যায় তা হলো মানসিক প্রতিক্রিয়া ।
- রাগ উঠলে বুক ধড়ফড় করে, হাত কাঁপতে থাকে তবে তা হলো শারীরিক প্রতিক্রিয়া; শরীরের বিভিন্ন গ্ল্যান্ড থেকে হরমোন নিঃসৃত হয় যা হার্টরেট বাড়িয়ে দেয়।
- অনেক সময় মানুশ রেগে গেলে যার ওপর রেগে যান তাকে আঘাত করে, আবার কেউ চুপ করে অপেক্ষা করে রাগ কমার।
মানুষের অন্যান্য আবেগের মতো রাগের ফলে বেশ কিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন দেখা যায়, হৃৎপিণ্ডের গতি ও রক্তচাপ বেড়ে যায়, এড্রিনালিন এবং নরএড্রিনালিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। যার ফলে মানুষ হার্ট এটাক, স্ট্রোক সহ নানান হার্ট রিলেটেড সমস্যায় পড়তে পারেন।
আমরা যদি আমাদের রাগকে প্রশমিত করতে না পারি তবে এর থেকে সৃষ্ট উত্তেজনার ফলে অনেক বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্কের সমাপ্তি, আর্থিক ক্ষতি ও সাস্থ বিষয়ক নানান জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত রাগের ফলে মানুষ নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নানান আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবি জরুরী।
রাগ নিয়ন্ত্রণে যা যা করতে পারেনঃ
১। রাগ শনাক্ত করুন: প্রথমেই নিজের রাগের মাত্রা সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে। রাগান্বিত অবস্থায় নিজেকে কেমন দেখাচ্ছে, তা জানতে সহকর্মী বা আশপাশের কাউকে জিজ্ঞেস করুন। অথবা আয়নায় নিজকে দেখুন।
২। এবার রাগের কারন নির্ণয় করুন: কেন আপনার রাগ হচ্ছে, ভেবে দেখুন। যদি কারও প্রতি ঈর্ষাই আপনার রাগের প্রধান কারণ হয়, তাহলে চিন্তা করুন, সেই ব্যক্তিটিও হয়ত আপনার প্রতি একই রকম ঈর্ষা বোধ করছে।
৩। সমাধান কি ভাবুন: সন্দেহের অনুভূতি নিয়ে চিন্তা করুন যে আপনার ওপরও কেউ একজন প্রচণ্ড রেগে আছে। তাই রাগ বাদ দিয়ে সবার সাথে একসঙ্গে কাজ করার উপায় বের করুন।
৪। নিজের উত্তেজনা বিচার করুন: অন্যের কাছ থেকে যে রকম আচরণ প্রত্যাশা করেন, আপনি নিজেই কি তকে তার প্রাপ্য আচরণ তার সাথে করছেন? সুন্দর আচরণের মাধ্যমে সম্মিলিত কর্মপরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করুন।
৫। সহানুভূতি: রাগ যখন প্রশমিত হয়ে যায় তখন দেখা যায় যার সাথে রাগ করলেন তার প্রতি একধরনের সহানুভূতি হয়। এই সহানুভূতি ধরে রাখার চেষ্টা করুন।
৬। স্পষ্ট আদান-প্রদান করুন: সহকর্মীসহ সবার প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। ভাব বিনিময়ে স্পষ্টতা অবলম্বন করুন। নিজের ইমোশনগুলো নিয়ন্ত্রণ করুন। নিজের ভুলের কারনে অন্যের উপর রাগ ঝারবেন না। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার মধ্যে কিছু না কিছু সময় নিজেকে দিন। নিজেকে নিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট ভাবুন।
রাগ করাটা কোনো অন্যায় নয়। মানুষ নিশ্চয় রাগ করবে কিন্তু তার প্রকাশ হতে হবে বিনয়ী ভদ্র ও নম্র ভাবে, এতে নিজেরই লাভ। জীবনের সবকিছু যেমন ব্যালেন্সড করে চলতে হয়, তেমনি ইমোশনগুলো প্রকাশের ক্ষেত্রেও ব্যালেন্স করে নিতে হবে।
বি:দ্র: প্রিয় পাঠক, আপনাদের এই প্রসঙ্গে কোন মতামত বা প্রতিক্রিয়া থাকলে’ কমেন্টে লিখে জানাতে পারেন। আপনাদের প্রাসঙ্গিক মতামতের ভিত্তিতে আপনাদের চাহিদা মত লেখা আমরা প্রকাশে আগ্রহী।