দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ছুটির দিনগুলো কাটানোর জন্য নানারকম প্ল্যান থাকে আমাদের। সিনেমা দেখে, বই পড়ে বা কখনও নিতান্তই আলিস্যির মধ্যেই কেটে যায়।
অনেকেই আবার কখনও প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শর্ট ট্রিপে। একঘেয়ে জীবনে বৈচিত্র্য আনতে হাতেতো মাত্র ওই দু’টোই দিন।
অনেকের আবার সে সুযোগও নেই। হপ্তাভর কাজের পর দম ফেলার জন্য পাতে থাকে হয়তো একটি দিন। তাই এই দিনটিকে অনেক বুঝেশুনে খরচা করতে ইচ্ছে করে সবারই। তবে চীনের বাসিন্দা ৪৮ বছরের চেন সি কীভাবে তাঁর উইকেন্ডগুলো কাটিয়ে থাকেন, সেটা জানার পর অবাক লাগবে সেটিই স্বাভাবিক। তবে সেইসঙ্গে তাকে সালাম না জানিয়েও পারবেন না আপনি।
দিনের পর দিন কঠোর নিয়মের বেড়াজালে বন্দি থাকার কারণে মানসিক অবসাদে ভোগেন, এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন অনেকেই। সে কারণে সেখানকার বহুতল অফিসগুলির বাইরে অনেক সময় নেটের জাল বিছানো থাকে, যাতে ছাদ হতে কেও নীচে ঝাঁপ দিলে বেঁচে যায় তাঁর প্রাণ।শুধু অফিস বিল্ডিংগুলিই নয়, ইয়াংসি নদীর উপর অবস্থিত নানকিং ইয়াংসি ব্রিজটিও সাক্ষী রয়েছে বহু আত্মহত্যার।
এই ব্রিজ আজ নয়, ১৯৬৮ সালে এটি তৈরি হয়েছিল। ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০০০-এর উপর মানুষ আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে এই ব্রিজ হতে ঝাঁপ দিয়েছেন নদীর পানিতে। তবে চীনের বাসিন্দা চেন সি অনবরত চেষ্টা করে চলেছেন এই সংখ্যাটা যাতে ভবিষ্যতে আর না বাড়ে। তিনি প্রতি সপ্তাহে ছুটি পেলেই একবার করে চলে যান এই ব্রিজে। তারপর তার কাজ শুরু হয় সেখানে!
যারা আত্মহত্যা করতে এখানে আসে, তাদের জীবন বাঁচান তিনি। মৃত্যুর দরজা হতে আবার তাকে ফিরিয়ে দেন জীবনের পথে। বিগত ১৩ বছর ধরে এই কাজ করে তিনি অতিবাহিত করছেন তাঁর উইকেন্ডগুলি। এযাবত ৩০০-র বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি। প্রত্যেকবার যখনই তিনি দেখেন কেও লাফ দিতে যাচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গেই পিছন হতে গিয়ে জাপটে ধরেন তাঁকে!
এমনকী প্রাণ বাঁচানোর পরে অনেক সময় তাদের থাকার বন্দোবস্তও করে দিতে হয় চেনকে। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, যারা এই পর্যন্ত এই ব্রিজে গিয়েছেন আত্মহত্যা করতে, তাদের অধিকাংশই নিম্নবিত্ত সম্প্রদায়ের। অভাবগ্রস্ত জীবন নিয়ে তারা হতাশায় ভোগেন। চেন চেষ্টা করেন সেই সব মানুষের জীবনের অভাবজনিত হতাশা দূর করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চেন বলেছেন, তিনি নিজেও একসময় অবসাদে ভুগতেন তার পেশা নিয়ে। জীবন নিয়েও হতাশায় থাকতেন অধিকাংশ সময়। সে সময় এক সহৃদয় ব্যক্তি তাঁকে সাহায্য করেন। তাঁর কাছ থেকে উৎসাহ পেয়েই চেন ঘুরে দাঁড়ান। পরবর্তীকালে একটি ব্যবসা শুরু করেন আবার পরে বিয়েও করেন। বর্তমানে তাঁর একটি মেয়ে রয়েছে।
চেনের কথায়, ‘একা থাকতে থাকতে এমন কিছু সময় আসে, যখন জীবনটা দুর্বিষহ মনে হয় আমাদের। ওই সময়গুলোয় শুধুমাত্র অন্যদের হতে একটু উৎসাহ দরকার।’প্রত্যেক শনি ও রবিবার বাড়ি হতে ২০ কিলেমিটার দূরের এই ব্রিজে উপস্থিত হন চেন। সকাল ৮টা হতে বিকেল ৫টা পর্যšন্ত থাকেন সেখানে।
তাঁর থেকে প্রেরণা পেয়ে নিকটবর্তী এক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনত্মত্ত বিভাগের ছাত্ররা ইদানীং এখানে আসেন চেনকে সঙ্গ দিতে। চেন যাদের সাহায্য করেন, তাদের কাউন্সেলিং-এর দায়িত্ব নেন ওইসব ছাত্ররা। তাঁর এই উদ্যোগ যে নয়া নজির গড়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে। সত্যিই এক মহৎ উদ্যোগ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।