মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর অবর্ননীয় নির্যাতন চলছে দিনের পর দিন! দেশটির সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (নাসাকা), সামরিক বাহিনী ও রাখাইনরা এক যোগে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির আরাকান ও অন্যান্য রাজ্যে অবস্থিত মুসলিমদের উপর। মায়ানমার সরকার সে দেশের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ সুবিধা দিতেও নারাজ।
ইতিহাস থেকে জানা যায় মায়ানমারে রাখাইন সম্প্রদায়ের এককালে স্বাধীন ভূখণ্ড ও রাজ্য ছিল। এই ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সর্বপ্রথম যে কয়টি এলাকায় মুসলিম বসতি গড়ে ওঠে, আরাকান তার মধ্যে অন্যতম। রোহিঙ্গারা সেই আরাকানী মুসলমানের বংশধর। এক সময় আরাকানে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৬৬০ সাল থেকে আরাকান রাজা থান্দথুধম্মার আমল থেকে এখন পর্যন্ত মায়ানমার মুসলমানদের উপর চলে আসছে অবর্ণনীয় নিষ্ঠুর অমানবিক অত্যাচার নিপীড়ন। এর মাঝে ১৯৩৭ সালে বার্মা স্বায়ত্তশাসন লাভের পর বৌদ্ধদের পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ব্যাপক রূপ নেয় এবং তারা প্রায় ৩০ লাখ মুসলিম হত্যা করে।
১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করার পর ও এ নির্যাতন অব্যাহত থাকে। উল্টো ১৯৮২ সালে মায়ানমারের সরকার সরকারি ভাবে মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়। তাদেরকে সে দেশে নাগরিকের বদলে বলা হয় “বসবাসকারী” সেখানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সরকারীভাবে ভোটাধিকার, সাংবিধানিক ও সামাজিকসহ কোন মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়না।
নির্যাতনের শিকার একজন মুসলিম রোহিঙ্গা
এরই মাঝে ২০১২ সাল থেকে মায়ানমারের সরকার ও সেখানকার রাখাইন সম্প্রদায় এক সাথে একরকম ঘোষণা দিয়েই আবার মুসলিম নিধন যজ্ঞ শুরু করে। সাম্প্রতিক এ দাঙ্গাকে বৌদ্ধ-মুসলিম জাতিগত দাঙ্গার নাম দিয়ে এর আড়ালে থাকা সাম্প্রদায়িক হামলাকে গোপনের চেষ্টা করে সে দেশের সরকার। মায়ানমারে বৌদ্ধদের প্রাধান্য, ফলে দেশটির প্রচারমাধ্যম বৌদ্ধদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে মুসলমান বা রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার ও নিপীড়নের সঠিক তথ্য প্রচার করা হয়না সেখানে।
মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর কতটা উদাসীন তা দেখা যায় সামপ্রতিক এক ঘটনায়। ঘূর্ণিঝড় মহাসেন বাংলাদেশ উপকূল ত্যাগ করে মায়ানমারের আরাকান রাজ্যে আঘাত করে, ফলে সেখানে এক নৌকা ডুবিতে বেশ কিছু রোহিঙ্গা মুসলিম নিখোঁজ হয়, তাদের ৩১ জনের লাশ ভেসে আসে বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূলে। বাংলাদেশের পুলিশ সূত্রে জানাযায় লাশ গুলো মায়ানমারের নাগরিক, তাদের পকেটে মায়ানমারের কাগজ পত্র ও মুদ্রা পাওয়া গেছে। লাশগুলো নেওয়ার জন্য মায়ানমারের নাসাকা বাহিনীকে বাংলাদেশের বিজিবি বার বার আহ্বান করলেও তাঁরা এর কোন উত্তর দেয়নি। ফলে লাশ বাংলাদেশেই দাফন করা হয়।
বিচার দাবী করছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা
ইতিহাস বলে মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমরা উড়ে এসে জুড়ে বসা কোন জাতি নয়। তারা সেখানে অবস্থান করছেন আদি নিবাস সূত্রেই। তাহলে কেন তাদের উপর এ জুলুম নির্যাতন। কি অপরাধে তাদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে? বিতাড়িত করা হচ্ছে নিজ দেশ ও ভূখণ্ড থেকে।
জাতিসংঘ সহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা গুলোও রোহিঙ্গা ইস্যুতে অজানা কারনে নীরব। নীরব সে দেশে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী নেত্রী ‘অং সাং সু চি’, এভাবে মায়ানমারে মুসলমানদের উপর আর কত নির্যাতন চলবে?
বিদ্রঃ উক্ত বিষয়ে আপনার যেকোনও মতামত কমেন্ট আকারে নিচে লিখে জানাতে পারেন। আমরা আপনার মতামত জানতে আগ্রহী। আপনার মতামত আমাদের পরবর্তী সংবাদ প্রকাশে উৎসাহিত করবে।