দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীতে যে কতো রকম রোগ রয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এবার এমন এক রোগের সন্ধান পাওয়া গেছে যে রোগে আক্রান্ত হলে রোগিরা নিজেকে মৃত মনে করে!
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, এটি একটি বিরল শ্রেণীর মনোবিকলন, যেখানে রোগগ্রস্ত মানুষ নিজেকে মৃত কিংবা অস্তিত্বহীন বলে মনে করেন।
১৮৮০ সালে ফরাসি নিউরোলজিস্ট জুল কোতারের কাছে এক নারী আসেন এমন এক আজব অসুখ নিয়ে। তিনি জানান যে, তার মনে হচ্ছে তার মস্তিষ্ক ও স্নায়ু কিছুই নেই। সেইসঙ্গে তিনি বুক, পেট, হাত, পা- কোনো কিছুর অস্তিত্বই টের পাচ্ছেন না। তিনি নিজেকে একটা পচা-গলা শবদেহ বলে মনে করছেন। তার মনে হচ্ছে যে, তিনি আত্মাহীন একটা মানুষ। তার আহার বা পানীয়েরও কোনো প্রয়োজন নেই!
ওই ফরাসি চিকিৎসক কোতার লিখে গেছেন, এই রোগিনী শেষ পর্যন্ত অনাহারেই মৃত্যুবরণ করেন। পরে তিনি এই অসুখটিকে নিয়ে দীর্ঘ ভাবনাচিন্তাও করেন। তার নামানুসারেই এই অসুখের কেতাবি নামকরণ করা হয়। আসলে এই দেহহীন অবস্থার বোধ জন্ম নেয় এক বিশেষ ধরনের উদ্বেগ হতে। এটি আসলে বাস্তবের বোধ লোপ পাওয়ারই একটি রূপভেদ মাত্র।
২০১৩ সালে লন্ডন হতে সান ফ্রান্সিসকো যাওয়ার পথে বিমানে এক নারী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি পরে জানান, তার মনে হয়েছিল, তিনি বিমানের মধ্যেই মারা গেছেন। গ্রাহাম হ্যারিসন নামে আর এক রোগী আত্মহত্যার চেষ্টা করে পরে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি জানান যে, তার মনে হতো তার মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটেছে। ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, নিজেকে কিছুতেই জীবিত মানুষ বলে ভাবতে পারছিলেন না তিনি।
গ্রাহামের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার মস্তিষ্কের ক্রিয়া এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো যে, যেমনটা কারোকে অ্যানাস্থেশিয়া করলে যেমন হয়। নিয়মিত সাইকোথেরাপি ও ওষুধের প্রয়োগে গ্রাহাম সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে এই রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই শেষপর্যন্ত আত্মহত্যা করে।
মনোবিদদের মতে, অস্তিত্ব এবং অস্তিত্বহীনতার দোলাচলকে সহ্য করতে না পেরেই কোতার ডিলিউশনে আক্রান্ত ব্যক্তিরা আত্মহত্যা করে। আজ পর্যন্ত এই মনোবিকলনের প্রকৃত চিকিৎসার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে।