দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাভারের আলোচিত রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় টানা ২৪ দিন বন্ধ রাখার পর অধর চন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয় আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের যে মাঠ এতোদিন বহন করছিল শুধু লাশ আর লাশ। সেখানে আবার ছাত্র-ছাত্রীদের কলরবে মুখরিত হয়ে উঠেছে।
২৪ এপ্রিল স্মরণকালের ভয়াবহতম মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকে অধর চন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠটি শুধুমাত্র লাশের মাঠ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। লাশের জন্য নিখোঁজদের পরিবারবর্গরা ছুটে গেছেন এই অধর চন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। স্কুল কর্তৃপক্ষ মানবিক এই ঘটনার কথা বিবেচনা করে প্রথমে ৩ দিন বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। লাশের মিছিল দীর্ঘ হতে থাকলে অনির্দিষ্টকালের জন্য শতবর্ষী এ বিদ্যালয়টি ছুটি ঘোষণা করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
যেহেতু ভবন ধসের ঘটনার দিন থেকে শুরু করে ২০ দিনই লাশ উদ্ধার হয়েছে। ১১২৭টি লাশের বেশির ভাগই রাখা হয় এই স্কুলের মাঠে। স্বজনদের লাশের খোঁজে তাইতো ছুটে গেছেন সবাই অধর চন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। খুব কম সংখ্যক লাশ অন্য স্থান হতে হস্তান্তর হয়েছে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় মারা গেছে ১২ জন। এই ১২ জনের লাশ হাসপাতাল থেকেই হস্তান্তর করা হয় আত্মীয় স্বজনদের।
রানা প্লাজার উদ্ধার অভিযান চলার সময় থেকে যখনই কোন লাশ বের হয়েছে তৎক্ষণাত তা নিয়ে যাওয়া হয়েছে অধর চন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। লাশবাহী গাড়ি যখনই রানা প্লাজা থেকে ছুটেছে অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ের দিকে তখনই স্বজনহারা মানুষরাও ছুটে গেছেন সেখানে। এভাবে কেও পেয়েছেন নিকট আত্মীয়দের আবার কেওবা নিরাশ হয়েছেন।
টানা ২৪ দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে গতকাল খুলে দেয়া হলো সাভার অধর চন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। অপরদিকে খুলে দেয়া হয়েছে একই ভবনে পরিচালিত এরই অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রাখাল চন্দ্র একাডেমিও। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ফের মুখরিত হয়েছে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। ফিরে পেয়েছে সেই চিরচেনা রূপ। কিছুটা কৌতূহল আর কিছুটা শিহরণ শিক্ষার্থীদের ভীত করলেও বিদ্যালয়ে তাদের উপস্থিতি ছিল আশানুরূপ।
রোববার স্কুল খুলে দেয়ার খবরে সকাল থেকেই দল বেঁধে স্কুলে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ভয়কে উপেক্ষা করেই সহপাঠীদের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে ক্লাশে কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করে বিদ্যালয়ে। মেতে ওঠে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলায়। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও বিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে গ্রহণ করেছেন নানা পদক্ষেপ। কারণ লাশের পর লাশের কারণে এখানকার যে বিয়োগান্ত পরিবেশ ছিল তা স্বাভাবিকভাবে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন ছিল।
অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন-উর-রশিদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “এতোবড় একটা বিপর্যয় হয়ে গেলো, এতোগুলো লাশ রাখার আর তেমন কোনো জায়গাও ছিল না। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার কিছুটা সমস্যা হয়েছেই। তারপরও মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। সারা দেশ থেকে আসা স্বজনহারাদেরও রাত্রিযাপন করার জন্য স্কুলের প্রতিটি শ্রেণী কক্ষ খুলে দেয়া হয়।”
উল্লেখ্য, স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করে পুরো উদ্যোমে ক্লাশ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর আগে স্কুল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে গত শনিবার ১৮ মে মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।