দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীতে মহানুভবতার যেনো শেষ নেই। মানুষ ইচ্ছে করলে সব কিছুই করতে পারে। মানুষ নজিরও স্থাপন করতে পারেন। যেমন এক চিকিৎসক সহকর্মীকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দান করলেন!
মার্কিন নারী চিকিৎসক কলিন কোলম্যান সহকর্মীর জীবন বাঁচাতে নিজের কিডনি দান করেছেন। তিনি অসুস্থ চিকিৎসক ব্রায়ান ডানকে বাঁচাতে নিজের কিডনিটি দান করলেন। এরা দু’জনে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের নিউপোর্ট বিচের হোয়াগ হাসপাতালে কর্মরত।
ব্রায়ান ডানের পাকস্থলীতে কৈশোরে টিউমার হয়েছিল। সেটি সারাতে তিনি কেমোথেরাপি নিতেন। কিন্তু চিকিৎসার প্রভাবে তার দুটি কিডনিই বিকল হয়ে যায়। জীবন রক্ষার জন্য যেকোনো মূল্যে একটি কিডনি সংযোজন তারজন্য জরুরি হয়ে পড়ে। একজন দাতা জোগাড় হলে তার কিডনিটি সংযোজন করা যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন। এমন অবস্থায় ডান প্রায় নিরাশ হয়ে পড়েন।
তিনি ২৫ বছর বয়সে নিজের মায়ের নিকট হতে একটি কিডনি নিয়েছিলেন। অন্যের কিডনি সংযোজনের পর চিরকাল তা টেকে না। ২০১৫ সালের শেষের দিকে ডানের স্বাস্থ্য ভাঙতে শুরু করে। তিনি ক্রমেই অসুস্থ হতে থাকেন। নিজের ছোট্ট মেয়েটার সঙ্গে খেলতেও তার কষ্ট হতো। গত এপ্রিল হতে ডায়ালাইসিস শুরু করেন তিনি। রক্ত পরিশোধনের জন্য তাকে দিনে চারবার এই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে। এটা সময়সাপেক্ষ এবং ক্লান্তিকরও।
আবার কোলম্যানের সাহায্যটাও প্রায় হাতছাড়া হতে যাচ্ছিল। কারণ হলো প্রাথমিক পরীক্ষায় ভুলক্রমে দেখা যায়, তার কিডনিটা ডানের সঙ্গে ম্যাচ করছে না। তবে পরীক্ষা সম্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান গত জুনে ভুলটি ধরতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে কোলম্যানকে আবার খবর দেয়। তিনি নিজের কিডনি দানের ব্যাপারটি নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। শেষমেশ ডানের ৬ বছর বয়সী মেয়েটির কথা ভেবে রাজি হয়ে যান তিনি। তিনি চাননি মেয়েটা বাবাকে হারিয়ে এতিমভাবে বেড়ে উঠুক। কোলম্যানের নানিও এক সময় কিডনি বিকল হয়ে মারা যান। তখন কোলম্যানের মায়ের বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর।
কিডনি দান এবং সংযোজনের অস্ত্রোপচার গত মাসে সম্পন্ন হয়েছে। তারপর ডানকে দেখতে গিয়েছিলেন কোলম্যান। ৪৫ বছর বয়সী ডান মহান সহকর্মীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
কোলম্যানের বয়স ৫১ বছর। কর্মস্থলে ফিরে দেখলেন, অসংখ্য ফুল, একটি কেক ও লোকজনের শুভেচ্ছাবার্তায় ভরপুর! নিঃস্বার্থ ত্যাগের জন্য সবাই তাকে নায়কের সম্মান দিচ্ছেন। আবেগপ্রবণ কোলম্যান বললেন, তিনি বুঝতেই পারেননি ব্যাপারটার প্রভাব এতোটা বেশি হতে পারে।