দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হিন্দু ধর্মে যারার আছেন তারাই পূজা করেন। সেটি একটি স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু যদি কখনও শোনেন কোনো মুসলিম বাড়িতে হিন্দুদের পূজা পালন করা হয়, তাহলে সেটি শুনতে কেমন লাগবে? ঠিক তাই ঘটেছে।
সংবাদ মাধ্যমে এমন একটি খবর এখন সকলের মুখে মুখে। সকলেই যেনো অনেকটা হত বিব্হল। কারণ মুসলমানের বাড়িতে হিন্দুদের দেবতার পূজা! সেটি কিভাবে সম্ভব? কারণ মুসলিম ধর্মে মূর্তি পূজা শেরক, যাকে বলা হয় কবিরা গোনাহ বা শক্ত গোনাহ। কিন্তু কেনো মুসলমান হয়ে এমন কাজ ক
পুরনো কাঠের নড়বড়ে দরজা। একদিকে সমাধি। অপরদিকে নিত্যসেবা চলছে জগন্নাথ, নাড়ুগোপালের। সন্ধ্যা হলেই সেখানে নামাজ পাঠ হয়, আবার তেমনি তুলসিতলায় যত্নে প্রদীপ জ্বালেন বাড়ির ছেলে শাহ আলম খাদিম। ভারতের কেতুগ্রামের কান্দরার মোল্লাপাড়ার খাদিম বাড়ির ঠিক এমনই সহাবস্থানের নজির। বাড়ির কর্তা বলেন, ‘হিন্দু, মুসলমান নয়, এটি হলো মানুষের উপাস্যস্থল।’
বিভেদের রাজনীতির মধ্যেও এই বাড়িতে এসে শান্তি পান এলাকার মানুষ। বাড়ির ছোট ছেলে, বছর চল্লিশের শাহ আলম খাদিম প্রতিদিন পুজো করেন জগন্নাথ, চৈতন্যের। তাঁর ভক্তির টানে এই বাড়িতে পুজো দিতে আসেন বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদের বহুলোক। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, টিটু (শাহ আলমের ডাক নাম) স্কুলের গণ্ডী না পেরোলেও পুজোপাঠে ছোট থেকেই মতি তাঁর। বাবা জাহের খাদিমের কাছেই মন্ত্রপাঠ শেখা তার। জাহের খাদিমকে সমাধিস্থও করা হয় জগন্নাথ মন্দিরের পাশেই।
ভক্তদের দেওয়া চাল-কলা নিবেদন করতে করতে শাহ আলমও ডুবে যান সেই স্মৃতিতে। বলেন, এগারো পুরুষ আগে তাঁদের পরিবারের কোনও এক জন উত্তরপ্রদেশে অযোধ্যার পথে কুড়িয়ে পান ধাতুর জগন্নাথ মূর্তি। সেটি নিয়ে বাড়ি আসেন তিনি। তবে অন্যরা ‘ধর্মে’র নামে সেই মূর্তি ডোবার মধ্যে ফেলে দেন। শাহ আলমের দাবি করেন যে, এরপরেই পরিবারে নেমে আসে অমঙ্গল। বাড়ির এক জন স্বপ্নাদেশ পান, ডোবা হতে মূর্তি তুলে আনলে শান্তি ফিরবে। পানিতে মূর্তি খুঁজতে নামলে মেলে সেই ধাতুর মূর্তি নয়, জগন্নাথের দারুবিগ্রহ। সেই হতেই জগন্নাথকে এখানে ‘বুড়োরাজ’ বলে ডাকা হয়।
ওই এলাকার প্রমীলা আচার্য ও মিজানুল কবীর বলেন, ‘যে কোনও অনুষ্ঠানে খাদিমবাড়িতে পুজো দেওয়াটা এই তল্লাটের একটা রেওয়াজ।’ ফি বছর মহালয়ার সপ্তাহখানেক পূর্বে বড় উৎসবও হয় এখানে। শাহ আলমের স্ত্রী টুম্পা খাদিম বলেছেন, ‘রোজা রাখি। আবার স্বামীর অনুপস্থিতিতে ঠাকুরকে জল-বাতাসও আমিই দিই।’