দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইসরাইল আবারও আল-আকসা মসজিদ নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে। ৫০ বছরের নিচে পুরুষদের ওই মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে ইসরাইল!
জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ নিয়ে শত শহস্র বছর ধরে রাজনীতি চলে আসছে। সর্বশেষ এ সপ্তাহে ৫০ বছরের কম বয়সী ফিলিস্তিনি পুরুষদের ওই মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে ইসরাইল!
মসজিদুল আকসা যাকে আরবি ভাষায় বলা হয়: المسجد الاقصى (আল-আকসা মসজিদ বা যেটি বাইতুল মুকাদ্দাস নামেও পরিচিত)।
এটি জেরুজালেমের পুরনো শহরে অবস্থিত। এই মসজিদটির সঙ্গে একই প্রাঙ্গণে কুব্বাত আস সাখরা, কুব্বাত আস সিলসিলা ও কুব্বাত আন নবী নামক স্থাপনাগুলোও অবস্থিত। এই মসজিদটি ইতিহাসের এক স্বাক্ষী।
এই মসজিদটি বার বার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের চাপের মুখে আবার তা খুলে দেওয়া হয়েছে। এবার দেশটির পুলিশ বলেছে, ৫০ বছরের কম বয়সী পুরুষ মুসলিমরা আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না!
সম্প্রতি নিরাপত্তা জোরদারের অজুহাত দেখিয়ে আল-আকসা মসজিদ এলাকায় মেটাল ডিকটেটর বসিয়েছে ইসরাইলী পুলিশ। এর জের ধরেই বিক্ষোভ হতে পারে এমন আশঙ্কা করে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
কিছুদিন পূর্বেও সন্দেহভাজন ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের গুলিতে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার পর আল-আকসা মসজিদে জুমার নামাজ বন্ধ করে দেয় ইসরাইল।
তারপর সপ্তাহজুড়ে ফিলিস্তিনিসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের প্রতিবাদের মুখে মসজিদটি আবার খুলে দেওয়া হয়।
এই আল-আকসা মসজিদ ইসলাামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ। বর্তমানে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল এই ঐতিহাসিক মসজিদটি দখল করে রেখেছে। ১৯৬৯ সালে তারা একবার আল আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছিলো।
এই পবিত্র মসজিদ হতেই রাসূল (সা.) উর্ধাকাশে তথা মেরাজ গমন করেছিলেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই সম্পর্কে বলেছেন, “সকল মহীমা তাঁর যিনি তাঁর বান্দাকে এক রাতে মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন; যার চতুর্পার্শ্বকে আমি বরকতময় করেছি। (এই ভ্রমণ করানোর উদ্দেশ্য হলো) যাতে আমি আমার নিদর্শন তাকে প্রদর্শন করি।” (সুরা বনী ইসরাইল: আয়াত ১)
এই মসজিদের ইতিহাস অনেক। হযরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবা গৃহ নির্মাণের ৪০ বছর পর হযরত ইয়াকুব (আ.) এই আল আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ১০০৪ সালে হযরত সুলাইমান (আ.) এই মসজিদটির পূণর্নির্মাণ করেন। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে সমগ্র বায়তুল মোকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের দখলে আসার পর মুসলমান শাসকরা কয়েকবার এই মসজিদটি সংস্কার করেন।
তবে ১০৯৬ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখল করে নেওয়ার পর আল আকসা মসজিদের ব্যাপক পরিবর্তন করে এটিকে গীর্জায় পরিণত করে। তারা মসজিদের গম্বুজের উপরে ক্রুশ স্থাপন করে তার নাম রাখে ‘সুলাইমানি উপাসনালয়’।
তারপর ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবী জেরুজালেম অধিকার করার পর পূর্বের নকশা অনুযায়ী আল আকসা মসজিদ পুণর্নির্মাণ করেন। ঐতিহাসিক এই মসজিদটির আয়তন সাড়ে তিন হাজার বর্গমিটার। এই মসজিদে ৫ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। অথচ যুগে যুগে এই মসজিদটি নিয়ে ইসরাইল নানা ধরনের রাজনীতি করে আসছে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।