দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষের মধ্যে যে বিষয়টি মার্কিন নির্বাচনের পর ঘোরপাক খাচ্ছিল, সেই বিষয়টি আবারও অন্য এক ধারার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় স্বাক্ষর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষর করার মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে আবার সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
অনেক কথা ও নানা জল্পনার পর শেষ পর্যন্ত রুশবিরোধী যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞায় স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র সময় বুধবার সকালে ট্রাম্প এই সংক্রান্ত বিলে স্বাক্ষর করেছেন। যে কারণে বিলটি এখন আইনে পরিণত হয়েছে। কংগ্রেস সদস্যরা প্রায় সর্বসম্মতভাবে বিলটির পক্ষে ভোট দেওয়ায় ট্রাম্পের অবশ্য অন্য কোনও বিকল্প পথ ছিল না। কারণ হলো বিলটি কংগ্রেসে প্রেসিডেন্টের ভেটো আটকে দেওয়ার মতো যথেষ্ট সংখ্যক কংগ্রেসম্যানের সমর্থন পেয়েছিলো।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতর হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা কেলিয়ানি কনওয়ে এক টিভি সাক্ষাৎকারে বিলটিতে ট্রাম্পের স্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন অবশ্য বিলটি নিয়ে ট্রাম্প ও তার অসন্তুষ্টির কথাও জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই আইনটির বিষয়ে আমরা পুরোপুরিভাবে সন্তুষ্ট হতে পারছি না।
এই নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য হলো, ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ। এটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখলের ঘটনাও। এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে এসব ঘটনায় রাশিয়াকে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চেয়েছে মার্কিন কংগ্রেস। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাকে সহায়তা করার জন্য রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগটি সব সময় অস্বীকার করে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত ২৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ বিলটি অনুমোদন পায়। ২৭ জুলাই সিনেটে কোনও ধরনের পরিবর্তন ছাড়াই পাস হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছিল যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প বিলটিতে ভেটো দিতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও এক রকম চাপের মুখেই ট্রাম্প বিলটিতে স্বাক্ষর করেছেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ হাকেবি জানান, বিলটির প্রথম সংস্করণ সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প অবগত ছিলেন। এর গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তিনি বৈঠকও করেন।
জানা গেছে, এই বিলটি সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রশাসনে গৃহীত রাশিয়াবিরোধী পদক্ষেপগুলোরই ধারাবাহিকতা মাত্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কারণে ওবামা প্রশাসন বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ২০১৬ সালের ২৬ এবং ২৯ জুলাই ওবামার নির্বাহী আদেশে কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রতিরক্ষা খাত সম্পর্কে বাধা তৈরি করবে। এছাড়া এই নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশেষত জ্বালানি খাতের রুশ কোম্পানিগুলো পশ্চিমা কোনও দেশ হতে ঋণ পাবে না।
এই বিলটি মার্কিন সরকারকে ব্যাংকে জমাকৃত সম্পদ জব্দ, ভিসা না দেওয়াসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ার অনুমোদন দেবে। এছাড়াও রুশ সরকারের স্বার্থে মার্কিন সাইবার নিরাপত্তাকে খাটো করার অভিযোগমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ করে দেবে এই বিলটি।
জানা যায়, নতুন এই বিলটিতে পূর্বের আইনের কিছু অংশ পরিবর্তনও করা হয়েছে। যে কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট চাইলেই রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে পারবেন না। সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেই হবে।
অপরদিকে নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়া ইতিমধ্যে মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের সংখ্যা কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী রাশিয়াকে নিয়ে বিশেষ করে মার্কিন নির্বাচনের পর নানা ধরনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। এই বিলটি পাসের পর সেইসব গুঞ্জন এখন অন্যখাতে প্রবাহিত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতি এখন কোনদিকে যায় সেটিই দেখার বিষয় বা সময়ই তা বলে দেবে।